ETV Bharat / state

সুন্দরবনের নদী বাঁধেই কি থামবে বিজয়রথ ? নজরে জাটুয়ার রিপোর্ট কার্ড - Lok Sabha Election 2024

Mathurapur MP Choudhury Mohan Jatua: মথুরাপুরে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছিলেন বিদায়ী সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়া ৷ তবে বার্ধক্যের কারণে তাঁর অনুপস্থিতিতে ক্ষোভ জমেছে এলাকাবাসীর মনে ৷ কী বলছে সাংসদের রিপোর্ট কার্ড ? জানতে চোখ রাখুন ৷

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 3, 2024, 2:07 PM IST

সুন্দরবনের নদী বাঁধেই কি থামবে বিজয়রথ ?

মথুরাপুর, 3 এপ্রিল: একসময় মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র ছিল বামেদের শক্ত ঘাঁটি ৷ লাল দুর্গ মথুরাপুরে 2009 সালে ঘাস ফুল ফোটান চৌধুরী মোহন জাটুয়া । এরপর 2009 সাল থেকে 2019 সাল পর্যন্ত মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন তৃণমূলের বর্ষিয়ান এই নেতা ৷ তবে বয়সজনিত কারণে 2024-এর লোকসভা নির্বাচনের লড়াই থেকে নিজেকে একপ্রকার সরিয়ে নিয়েছেন বিদায়ী সাংসদ । এ বারের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে শাসকদল আস্থা রেখেছে সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতি বাপি হালদারের উপর । চৌধুরী মোহন জাটুয়ার জয়ের ধারাকে কি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তৃণমূলের তরুণ তুর্কি ? এলাকার মানুষ কি বিদায়ী সাংসদের দীর্ঘ 15 বছরের রাজত্বকালে সন্তুষ্ট ? নাকি পুঞ্জীভূত ক্ষোভই বাপি হালদারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ? লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এ সবেরই সুলুকসন্ধান পেতে এই কেন্দ্রের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছে ইটিভি ভারত ৷

যতদূর দেখা যাচ্ছে যে, গত পাঁচ বছরে এলাকায় উন্নয়ন হয়নি, এমনটা বলার লোক খুবই কম রয়েছে । কিন্তু এলাকার মানুষের মধ্যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে । মূলত সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিয়ে মথুরাপুর লোকসভা । এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে সাতটি বিধানসভা এলাকা - সাগর বিধানসভা, কাকদ্বীপ বিধানসভা, রায়দিঘি বিধানসভা, পাথর প্রতিমা বিধানসভা, মন্দির বাজার বিধানসভা ও মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা । বেশিরভাগ বিধানসভায় উপকূল তীরবর্তী এলাকায় প্রতি বছর নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গোটা এলাকা ৷ বিঘের পর বিঘে চাষের জমি প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতি হয় কৃষকদের ।

গত পাঁচ বছর পাকা রাস্তা, পানীয় জল-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ যেমন হয়েছে, তেমনই বহু উপকূল তীরবর্তী এলাকাগুলিতে কিছু কংক্রিটের নদী বাঁধও তৈরি করা হয়েছে । তবে স্থানীয়দের একাংশের ক্ষোভ, গত পাঁচ বছরে তাঁদের সাংসদ কোনদিনও এলাকায় আসেননি । এলাকায় উন্নয়নও হয়েছে নামমাত্র । আবার কিছু লোক বললেন, সাংসদ বয়সজনিত কারণে এলাকায় আসতে পারেনি ঠিকই কিন্তু উন্নয়ন হয়েছে । রাস্তাঘাট, আলো, পানীয় জল সবই পাচ্ছে সাধারণ মানুষ ।

মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী বাপি হালদার তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই পুরোদস্তুর নেমে পড়েছেন ভোটের ময়দানে । গত 15 বছর তৃণমূলের জমানায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করলেন বাপি হালদার । তিনি জানান, বয়সজনিত কারণে বিদায়ী সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়া এলাকায় আসতে পারেননি এ কথা যেমন সত্যি, তেমনই প্রতিটি বিধানসভার বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়নের জন্য নিজের সাংসদ তহবিলের প্রায় পুরো টাকা তিনি সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করেছেন এটাও সত্যি । 85 বছর বয়সি সাংসদ সর্বদাই এলাকার মানুষের উন্নয়নের কথা ভাবেন । বয়সের ভারে এলাকায় তেমন দেখা যায় না সাংসদকে, তবে উন্নয়নের কাজ থেমে থাকেনি ।

বাপি হালদারের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনে (2019)-এ মানুষ উন্নয়নের নিরিখেই চৌধুরী মোহন জাটুয়াকে দুই হাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন ৷ আর তাই তিনি সে বার বিজেপির প্রার্থী শ্যামাপ্রসাদ হালদারকে 2 লক্ষ 39 হাজার 734 ভোটে পরাজিত করতে পেরেছিলেন । বাপির দাবি, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে দেখেই ভোট দেবেন । এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি কোনও ফ্যাক্টরই নয় ৷ মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় জনবিরোধী নীতিকেই হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে নেমেছেন তৃণমূলের মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বাপি হালদার ।

যদিও মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অশোক পুরকাইতের দাবি, এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি চৌধুরী মোহন জাটুয়ার আমলে ৷ তিনি বলেন, "এই লোকসভা কেন্দ্রে বহু নদী বাঁধ রয়েছে ৷ সেই নদী বাঁধগুলির বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরেই । মানুষ তৃণমূল প্রার্থীদের দেখলেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন । ওরা নিজেদের পকেট ভরানোর জন্য সেই নদী বাঁধ অস্থায়ীভাবে মেরামত করছে প্রতি বছর । এর ফলে প্রতি বছর ভেঙে যাচ্ছে নদী বাঁধ । বানভাসি হচ্ছে বহু মানুষ । আমি ভোটে জেতার পর আমার প্রথম কাজ থাকবে নদী বাঁধ । স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ তৈরি করাই হবে আমার সর্বপ্রথম কাজ ।"

যদিও বাপি হালদারের দাবি, "আগামী পাঁচ বছর মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের জন্য কাজের সুযোগ যদি আমি পাই, তাহলে মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের আমূল পরিবর্তন ঘটবে । স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ থেকে শুরু করে পানীয় জল, রাস্তাঘাট সমস্ত কিছুই আরও উন্নত হবে ।" তবে শেষ হাসি কে হাসে, তা জানতে অপেক্ষা ভোটগণনা পর্যন্ত ৷

আরও পড়ুন:

  1. 19টি বার...ম্যাট্রিক নয়, ভোটের লড়াইয়ে ! এবারও কি ঘায়েল হবেন ?
  2. পাঁচ বছরে যাদবপুরের মানুষের প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পেরেছেন মিমি চক্রবর্তী ?
  3. 5 বছরে দেখাই যায়নি সাংসদকে ! তবে উন্নয়ন ? একনজরে জগন্নাথ সরকারের রিপোর্ট কার্ড

সুন্দরবনের নদী বাঁধেই কি থামবে বিজয়রথ ?

মথুরাপুর, 3 এপ্রিল: একসময় মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র ছিল বামেদের শক্ত ঘাঁটি ৷ লাল দুর্গ মথুরাপুরে 2009 সালে ঘাস ফুল ফোটান চৌধুরী মোহন জাটুয়া । এরপর 2009 সাল থেকে 2019 সাল পর্যন্ত মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন তৃণমূলের বর্ষিয়ান এই নেতা ৷ তবে বয়সজনিত কারণে 2024-এর লোকসভা নির্বাচনের লড়াই থেকে নিজেকে একপ্রকার সরিয়ে নিয়েছেন বিদায়ী সাংসদ । এ বারের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে শাসকদল আস্থা রেখেছে সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতি বাপি হালদারের উপর । চৌধুরী মোহন জাটুয়ার জয়ের ধারাকে কি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তৃণমূলের তরুণ তুর্কি ? এলাকার মানুষ কি বিদায়ী সাংসদের দীর্ঘ 15 বছরের রাজত্বকালে সন্তুষ্ট ? নাকি পুঞ্জীভূত ক্ষোভই বাপি হালদারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ? লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এ সবেরই সুলুকসন্ধান পেতে এই কেন্দ্রের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছে ইটিভি ভারত ৷

যতদূর দেখা যাচ্ছে যে, গত পাঁচ বছরে এলাকায় উন্নয়ন হয়নি, এমনটা বলার লোক খুবই কম রয়েছে । কিন্তু এলাকার মানুষের মধ্যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে । মূলত সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিয়ে মথুরাপুর লোকসভা । এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে সাতটি বিধানসভা এলাকা - সাগর বিধানসভা, কাকদ্বীপ বিধানসভা, রায়দিঘি বিধানসভা, পাথর প্রতিমা বিধানসভা, মন্দির বাজার বিধানসভা ও মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা । বেশিরভাগ বিধানসভায় উপকূল তীরবর্তী এলাকায় প্রতি বছর নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গোটা এলাকা ৷ বিঘের পর বিঘে চাষের জমি প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতি হয় কৃষকদের ।

গত পাঁচ বছর পাকা রাস্তা, পানীয় জল-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ যেমন হয়েছে, তেমনই বহু উপকূল তীরবর্তী এলাকাগুলিতে কিছু কংক্রিটের নদী বাঁধও তৈরি করা হয়েছে । তবে স্থানীয়দের একাংশের ক্ষোভ, গত পাঁচ বছরে তাঁদের সাংসদ কোনদিনও এলাকায় আসেননি । এলাকায় উন্নয়নও হয়েছে নামমাত্র । আবার কিছু লোক বললেন, সাংসদ বয়সজনিত কারণে এলাকায় আসতে পারেনি ঠিকই কিন্তু উন্নয়ন হয়েছে । রাস্তাঘাট, আলো, পানীয় জল সবই পাচ্ছে সাধারণ মানুষ ।

মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী বাপি হালদার তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই পুরোদস্তুর নেমে পড়েছেন ভোটের ময়দানে । গত 15 বছর তৃণমূলের জমানায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করলেন বাপি হালদার । তিনি জানান, বয়সজনিত কারণে বিদায়ী সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়া এলাকায় আসতে পারেননি এ কথা যেমন সত্যি, তেমনই প্রতিটি বিধানসভার বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়নের জন্য নিজের সাংসদ তহবিলের প্রায় পুরো টাকা তিনি সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করেছেন এটাও সত্যি । 85 বছর বয়সি সাংসদ সর্বদাই এলাকার মানুষের উন্নয়নের কথা ভাবেন । বয়সের ভারে এলাকায় তেমন দেখা যায় না সাংসদকে, তবে উন্নয়নের কাজ থেমে থাকেনি ।

বাপি হালদারের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনে (2019)-এ মানুষ উন্নয়নের নিরিখেই চৌধুরী মোহন জাটুয়াকে দুই হাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন ৷ আর তাই তিনি সে বার বিজেপির প্রার্থী শ্যামাপ্রসাদ হালদারকে 2 লক্ষ 39 হাজার 734 ভোটে পরাজিত করতে পেরেছিলেন । বাপির দাবি, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে দেখেই ভোট দেবেন । এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি কোনও ফ্যাক্টরই নয় ৷ মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় জনবিরোধী নীতিকেই হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে নেমেছেন তৃণমূলের মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বাপি হালদার ।

যদিও মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অশোক পুরকাইতের দাবি, এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি চৌধুরী মোহন জাটুয়ার আমলে ৷ তিনি বলেন, "এই লোকসভা কেন্দ্রে বহু নদী বাঁধ রয়েছে ৷ সেই নদী বাঁধগুলির বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরেই । মানুষ তৃণমূল প্রার্থীদের দেখলেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন । ওরা নিজেদের পকেট ভরানোর জন্য সেই নদী বাঁধ অস্থায়ীভাবে মেরামত করছে প্রতি বছর । এর ফলে প্রতি বছর ভেঙে যাচ্ছে নদী বাঁধ । বানভাসি হচ্ছে বহু মানুষ । আমি ভোটে জেতার পর আমার প্রথম কাজ থাকবে নদী বাঁধ । স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ তৈরি করাই হবে আমার সর্বপ্রথম কাজ ।"

যদিও বাপি হালদারের দাবি, "আগামী পাঁচ বছর মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের জন্য কাজের সুযোগ যদি আমি পাই, তাহলে মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের আমূল পরিবর্তন ঘটবে । স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ থেকে শুরু করে পানীয় জল, রাস্তাঘাট সমস্ত কিছুই আরও উন্নত হবে ।" তবে শেষ হাসি কে হাসে, তা জানতে অপেক্ষা ভোটগণনা পর্যন্ত ৷

আরও পড়ুন:

  1. 19টি বার...ম্যাট্রিক নয়, ভোটের লড়াইয়ে ! এবারও কি ঘায়েল হবেন ?
  2. পাঁচ বছরে যাদবপুরের মানুষের প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পেরেছেন মিমি চক্রবর্তী ?
  3. 5 বছরে দেখাই যায়নি সাংসদকে ! তবে উন্নয়ন ? একনজরে জগন্নাথ সরকারের রিপোর্ট কার্ড
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.