কলকাতা, 5 অগস্ট: বর্ষাকালে শহর কলকাতায় পুর প্রশাসনের কাছে প্রধান মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিপজ্জনক বাড়ির ভেঙে পড়া ৷ কোনও ক্ষেত্রে একাংশ ভেঙে পড়ে, কোনও ক্ষেত্রে পুরো বাড়িটাই ভেঙে পড়ে ৷ আর এই ঘটনায় অতীতে অনেকেই আহত হয়েছেন ৷ এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে ৷ তবুও কলকাতা শহরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিপজ্জনক বাড়িতে, একাধিক মানুষ জীবন বাজি রেখে বসবাস করছেন ৷
কলকাতা পুরনিগম এই সমস্ত বাড়ির ক্ষেত্রে, যারা ভাড়াটিয়া তাদের যাতে বঞ্চনার শিকার না হতে হয় ৷ তার জন্য চালু করেছে পজিশন সার্টিফিকেট দেওয়া ৷ এমনকি বাড়ির মালিক বা ডেভলপাররা পান অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়া রেশিও ৷ তবুও, পুরনিগমের সেই আশ্বাসে বরফ গলছে না বলে অভিযোগ ৷
24এ নিমতলা ঘাট স্ট্রিট ৷ একেবারে শতবর্ষ প্রাচীন বাড়ি ৷ হাত বদল হয়েছে মালিকের ৷ বাড়িটির অধিকাংশ জায়গাই বিপজ্জনক ৷ প্রায় 14 কাঠা জমির উপর এই বাড়ি ৷ 33টির বেশি ঘর ৷ 5-7টি দোকান বাড়ির নিচের তলায় ৷ এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে তিনতলা ও দোতলার অধিকাংশ ভেঙে পড়েছে ৷ তার নিচেই চলছে ভাতের হোটেল ৷ বাড়ির বাসিন্দা থেকে দোকানদারদের কথায়, "মালিক সরাতে দেন না ৷ নিজেও রক্ষণাবেক্ষণ করেন না ৷ ভেঙে পড়লে বাড়িতলার পরিকল্পনা ৷ আমরা নিজেরা তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে বা পেট চালাতে বাধ্য হচ্ছি ৷ তিন পুরুষ এখানে থেকেছে ৷"
65 পাথুরিয়া ঘাটা স্ট্রিট ৷ বছর খানেক আগে এই অগষ্ট মাসেই ছ’তলা বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে স্বামী-স্ত্রী উভয় মারা যান ৷ তারপর থেকে সেই বাড়ির সামনে অস্থায়ী চাটাইয়ের ঘর করে 17 পরিবার থাকছে ৷ প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরনিগমের তরফে পজিশন সার্টিফিকেট ৷ তবুও, কেউই দূরে নিরাপদ জায়গায় যেতে রাজি হননি ৷ একটাই আশঙ্কা, চলে গেলে আর ফেরা হবে না ৷ এই ছবি কলকাতার একাধিক বিপজ্জনক বাড়ির ৷ তাদের কথায়, "আমাদের অন্যত্র পাঠিয়ে প্রমোটিং হলে, প্রোমোটার যদি না জায়গা দেয় কোথায় যাব ? কে দায় নেবে ? তাই মরলে মরব, এখানেই থাকব ৷ অনেক প্রোমোটার অন্যত্র সরিয়ে নির্মাণ কাজ করতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন, তখন কী করব ?"
এই বিষয় কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, "প্রতিটা ভাড়াটে পজিশন সার্টিফিকেট পাবেন ৷ যখনই ওই বাড়ি উঠবে, তাদের জন্য জায়গা রেখেই নির্মাণ কাজ হবে ৷ এইভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকাটা আমাদের কাছে যথেষ্ট চাপের ৷" কাউন্সিলর বিজয় উপাধ্যায় জানাচ্ছেন, "ভাড়াটিয়াদের যেমন জায়গা দেওয়া হচ্ছে ৷ তেমন সেই জায়গায় দ্বিগুণ ফ্লোর এরিয়া রেশিও ছাড় পাবে নির্মাণকারী ৷ ফলে বাড়ির মালিক বা নির্মাণকারী কারও অসুবিধা হওয়ার নয় ৷"
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আইনে পরিবর্তন এনেছে ৷ বলা হয়েছে এমন বিপজ্জনক বাড়িতে কোনও ভাড়াটিয়া থাকলে, তাদের একটি পজিশন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে কলকাতা কর্পোরেশনের তরফে ৷ যাতে তারা বর্তমান সময় যতটা জায়গা নিয়ে বসবাস করেন, নতুন নির্মাণ হলে ততটা জায়গায়ই পাবেন ৷ বাড়ির নকশায় ওই ভাড়াটিয়ার জায়গা উল্লেখ থাকলে, তবেই হবে নতুন নকশার অনুমোদন ৷ যতটা ভাড়াটিয়া জায়গা থাকবে, তার দ্বিগুণ জায়গা অতিরিক্ত নির্মাণের জন্য দেওয়া হবে ৷ ফলে ভাড়াটিয়া, মালিক ও প্রোটার তিনজনের স্বার্থ বজায় থাকবে ৷
আর বলা হয়েছে, এই ধরনের বাড়িগুলির ক্ষেত্রে প্রথমে ভাড়াটে ও মালিক দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতে বলা হবে ৷ সেখানে বাড়ি নির্মাণের সব শর্ত পূরণ হলে ভালো ৷ না হলে, কর্পোরেশনের উদ্যোগে তৃতীয় পক্ষকে নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে ৷ বাড়ি তৈরির পর সবার আগে ভাড়াটিয়াদের জায়গা বুঝিয়ে দিতে হবে ৷ কলকাতা জুড়ে এই মুহূর্তে কমবেশি বিপজ্জনক বাড়ি আছে 1800-2000 ৷ আর 20-25টি আছে অতি বিপজ্জনক বাড়ি ৷ তবে, যে নিয়ম বা আশ্বাসই থাকুক না, তাতে এখনও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না ৷ তাই বর্ষা এলে চিরকাল বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে পৌর প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়েই থাকছে ৷