ঝাড়গ্রাম, 10 জুন: ফের হাতির হামলা জঙ্গলমহলে ৷ হাতির হানায় 15 দিনে প্রাণ গেল 4 জনের । রবিবার গভীর রাতে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের অন্তর্গত লোধাশুলি রেঞ্জের বিরিহাড়ি বিটের জারুলিয়ায় হাতির হানায় মৃত্যু হয় 1 ব্যক্তির । মৃত ব্যক্তির নাম শক্তিপদ মাহাতো (34) । বাড়ি জামবনী থানার অন্তর্গত রাজপাড়া গ্রামে ।
জানা গিয়েছে, রবিবার ঝাড়গ্রাম থানার অন্তর্গত নেতুরা এলাকায় কর্মসূত্রে গিয়েছিলেন শক্তিপদ । কাজ শেষ করে বাইকে করে নেদাবহড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়ি ফেরার সময় জারুলিয়ায় একদল হাতির সামনে পড়ে যান শক্তিপদ । হাতির দলের হানায় মৃত্যু হয় তাঁর । জারুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারে পাশের গ্রাম তাঁর শ্বশুরবাড়িতে খবর দেয় । ততক্ষণে বন দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শক্তিপদকে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসেন ৷ সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা ।
হাতির হানায় মৃতের শ্যালক প্রফুল্ল মাহাতো বলেন, "জামাইবাবু মুরাম, বালি ,মাটি সাপ্লাইয়ের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হতো । রাত হয়ে গেলে মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়িতে থেকে যেতেন । কাল রাতে জারুলিয়া গ্রামের গ্রামবাসীরা আমাদের ফোন করে জানায় তাদের গ্রামের কাছে জামাইবাবুকে হাতি মেরে দিয়েছে । এই এলাকায় হাতির জন্য আমাদের জীবন বাঁচানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷" ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশী বলেন, "রবিবার গভীর রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় যাওয়ার সময় হঠাৎ করে দলহাতি সামনে পড়ে যায়, যার ফলে হাতির হানায় মৃত্যু হয় শক্তিপদ মাহাতো নামের ওই ব্যক্তির ।"
উল্লেখ্য, 27 মে, সোমবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে লালগড়ে হাতির হানায় মৃত্যু হয় 68 বছরের শঙ্কর মাহাতো নামে এক ব্যক্তির । তার ঠিক দু'দিনের মাথায় বুধবার সকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে হাতির হানায় মৃত্যু হয় 78 বছরের নবীনচন্দ্র ধল নামের এক বৃদ্ধের । গত 3 জুন, সোমবার মানিকপাড়া রেঞ্জের বালিভাষা এলাকায় গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির হানায় মৃত্যু হয় 59 বছরের গৌর পাল নামের এক ব্যক্তির।
বনদফতর সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মোট 47টি হাতি রয়েছে । তারমধ্যে ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের বাঁদরভুলা বিট ও লোধাশুলি রেঞ্জের লোধাশুলি ও বিরিহাড়ি বিটের মধ্যে 41টি হাতি রয়েছে । যার ফলে নেদাবহড়া ,জারুলিয়া, বিরিহাড়ি, শালবনি, গড় শালবনী, বৃন্দাবনপুর, জিতুশোল, লোধাশুলি-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের বসবাস দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে । শালবনী গ্রামের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর মাহাতো বলেন, "বর্তমানে আমাদের প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়েই জীবন যাপন করতে হচ্ছে । বনদফতরের উদাসীনতা ও সুপরিকল্পনার অভাবে আজ আমাদের এই দিনটি ভোগ করতে হচ্ছে । বনদফতরের বিভিন্ন বিট ও রেঞ্জ, বন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় না থাকার জন্য একে অপরের পিঠ বাঁচানোর তাগিদে এই রেঞ্জ থেকে ওই রেঞ্জে হাতি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে । যার ফলে বড় হাতির দল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে এবং খাবারের সন্ধানে দিন-রাত এক একটি গ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছে । রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র সরকার বা বনদফতর এই বিষয়ে গুরুত্ব না দিলে আমাদের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হয়ে যাবে ।"
রবিবার রাতে হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনার পর সোমবার সকালে নেদাবহড়া গ্রামে পঞ্চানন মান্না নামের এক ব্যক্তি বাইক নিয়ে গ্রাম থেকে বেরোনোর সময় হাতির সামনে পড়ে যায় । ওই ব্যক্তি প্রাণে বাঁচলেও হাতিতে তাঁর বাইকের একাংশ ভেঙে ফেলে বলে খবর ।