কলকাতা, 25 ডিসেম্বর: মৃত্যু অমোঘ-চিরন্তন। জীবন-যুদ্ধে মৃত্যুর কাছে হেরে যাওয়াই মানুষের ভবিতব্য-নিয়তি। বছর শেষে মনে পড়ে যায় স্বজন হারানোর স্মৃতি। তাজা হয় ফেলে আসা সময়ের দগদগে ক্ষত।
নতুনকে বরণের আগে ফেলে আসা বছরে যাঁরা হারিয়ে গেলেন সময়ের ঘূ্র্ণিপাকে তাঁদের কথা আরও একবার স্মরণ করল ইটিভি ভারত। রাজনীতি থেকে সমাজজীবনে এঁদের অবদান দীর্ঘদিন থেকে যাবে বাঙালির মননে।
ইদ্রিস আলি- প্রয়াত হলেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা ইদ্রিস আলি। দিনটা ছিল 16 ফেব্রুয়ারি। 2014 সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। পরে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা আসন থেকে জেতেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাজনীতির পাশাপাশি বেকারি সংগঠনের সঙ্গেও তাঁর নিবিড়ি যোগাযোগ ছিল ।
রামকৃষ্ণলোকে স্বামী স্মরণানন্দ- মার্চ মাসের 26 তারিখ জীবনাবসান হল স্বামী স্মরণানন্দজি মহারাজের ৷ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন ৷ 94 বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠের ষোড়শ অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ ৷ 2017 সালে বেলুড় মঠের অধ্যক্ষ হন তিনি ৷ বেলুড় মঠের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দজির প্রয়াণের পর স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
স্নায়ু এবং অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন ৷ ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখা গিয়েছিল। ফের তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় ৷ শেষ পর্যন্ত তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। কলকাতায় এসে রামকৃষ্ণ মঠের প্রেসিডেন্ট মহারাজকে দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ এরপর হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷
বিশ্বনাথ চৌধুরী- প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী । জুলাই মাসের 27 তারিখ, 82 বছর বয়সে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রয়াত হন আরএসপি-র এই নেতা । রাজনৈতিক জীবনে আটবার বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া বিশ্বনাথ দীর্ঘদিন সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য- দিনটা ছিল 8 অগস্ট। প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী । পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন দেশের বাম আন্দোলনের এই আইকন । ফুসফুসের সংক্রমণ একটু একটু করে তাঁকে ঠেলে দিচ্ছিল মৃত্যুর দিকে। শেষমেশ পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে তিনি প্রয়াত হন। সৎ, নিজের কর্তব্য পালনে সদাতৎপর, সাহিত্যের নেশায় বুঁদ বুদ্ধদেবের প্রয়াণ সকলের কাছেই ধাক্কা।
বাংলার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানকে পাখির চোখ করে লড়া নেতার দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছিল আগেই। ছোট্ট ফ্ল্যাটের আলো- আঁধারিতেই কাটত জীবনের শেষদিকটা। তবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লাল পতাকাই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। লোকসভা নির্বাচনে এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাঁর বক্তব্যকে প্রচারে ব্যবহারও করেছিল সিপিএম।
সবার প্রিয় বুদ্ধবাবুর জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে শেষ রাজ্য-রাজনীতির এক স্বর্ণালী অধ্যায়। যেখানে লোভের কাছে কখনও হার মানেনি সততার রাজনীতি…।
হাজি নুরুল ইসলাম- 25 সেপ্টেম্বর প্রয়াত হলেন আরও এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রকে বিরাট ব্যবধানে হারিয়ে সাংসদ হওয়া নুরুল একসময় ছিলেন হাড়োয়া কেন্দ্রের বিধায়ক । লোকসভা নির্বাচনের জিতে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হন ছেলে শেখ রবিউল ইসলাম।
পঙ্কজ দত্ত- নভেম্বর মাসের 30 তারিখ প্রয়াত হলেন পুলিশের প্রাক্তন কর্তা তথা রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন প্রধান পঙ্কজ দত্ত। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের আলোচনায় নিয়মিত অংশ নিতেন। রাজ্য প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশ বা অন্য তদন্ত সংস্থার কাজ নিয়ে বিশ্লেষণও করতেন। রাজ্য প্রশসানের একাধিক কাজের তীব্র সমালোচনাও করেছেন নানা সময়ে।
আরজির করের ঘটনা নিয়ে আয়োজিত একটি কনভেনশনে একটি মন্তব্য করেন । অভিযোগ দায়ের হলে উত্তর কলকাতার বড়তলা থানা তাঁকে ডেকে পাঠায়। ঘনিষ্ঠদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে হেনস্থা করে পুলিশ । কোনও কারণ ছাড়াই বসিয়ে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা ।
আরও পরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বারাণসী গিয়েছিলেন পঙ্কজ। সেখানেই আবারও অসুস্থ হয়ে মাস খানেক হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর তাঁর মৃত্যু হয়। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে বিজেপি নেত্রীা অগ্নিমিত্রা পলের দাবি, পুলিশের অমানবিক আচরণই পঙ্কজকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।