মালদা ও হুগলি, 30 মে: কয়েকদিন পরেই জামাইষষ্ঠী ৷ অন্য পদের পাশাপাশি জামাইয়ের পাতে রকমারি ফলের বাহারে জায়গা করে নেয় ফলের রাজা আম ৷ তবে চলতি বছর আম কিনতে গিয়ে টান পড়তে পারে পকেটে ৷ কারণ, এবারে আমের ফলন কম ৷ তাই দামও চড়া ৷ কিন্তু কেন এমন হল, তার বিস্তারিত খোঁজ নিল ইটিভি ভারত।
ফলন কম বলেই এই পরিস্থিতি বলে জানাচ্ছেন কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের অনেকেই। আবহাওয়ার খামখেয়ালি আচরণের জেরে পরস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে। এমনও মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি অনেক কৃষকই মনে করছেন, দাম বেশি হলেও অন্য খরচ বেশি থাকায় লাভের মুখ সেভাবে দেখতে পারবেন না কৃষকরা।
ইংরেজবাজারের আমচাষি যুধিষ্ঠির মণ্ডল বলেন, "এবার দফায় দফায় গাছে মুকুল এসেছে ৷ যেসব গাছে আগাম মুকুল এসেছে, সেগুলিতে কিছু আম ধরেছে ৷ কিন্তু দেরিতে আসা মুকুলে এবার আম হয়নি ৷ কারণ, মুকুল ফোটার পরপরই বৃষ্টি হয়েছে ৷ তাতে মুকুল কালো হয়ে গিয়েছে ৷ তাই ফলনও কম ৷ এবার কেউ আম খেতে পাবেন, কেউ পাবেন না ৷ প্রথম থেকেই আমের বাজার চড়া ৷" হুগলির পোলবার আম চাষি প্রদীপ গায়েন বলেন, "আমের বাজার ভালো থাকলেও জোগান কম ৷ পশ্চিম দিক থেকে আসা হাওয়ার কারণে আমের ফলন কম হয়েছে ৷ তীব্র গরমের কারণে অধিকাংশ গাছ জ্বলে গিয়েছে ৷ বেশিরভাগ আমের সাইজ বড় হয়নি।
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দফারফা আম চাষ, বড়সড় আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা
আম চাষি বাপি সাহা জানান, এই বছর আমের ফলন কম হয়েছে। তার উপর অতিরিক্ত ওষুধের দাম ও শ্রমিক সমস্যার কারণে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন আম চাষিরা। আমের দাম বাজারে বেশি থাকলেও ফলন কম হওয়ায় লাভ সেভাবে থাকছে না। মালদা ম্যাঙ্গো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, "দেশের অন্যতম প্রধান আম উৎপাদক রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ৷ এবার আবহাওয়ার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে মুকুলে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল ৷ তবু আমরা আশা করেছিলাম, অন্তত তিন লাখ মেট্রিক টন আম উৎপন্ন হবে ৷ কিন্তু প্রবল দাবদাহে অন্তত 50 শতাংশ গুটি ঝরে গিয়েছে ৷ সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হুগলিতে ৷ সেখানে মাত্র 20 শতাংশ আম ভালো আছে ৷"
সুগন্ধার এক ব্যবসায়ী তাপস পাল বলেন, "আমের দাম বেশি থাকায় স্থানীয় ক্রেতাদের বাজারে দেখা যাচ্ছে না । বেশিরভাগ আম বিহার, উত্তর প্রদেশ,মহারাষ্ট্র ,কানপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে ট্রেনের মাধ্যমে ৷ উৎপাদন কম হওয়ায় পরিবহণের খরচাও বেড়েছে । আমের বাজার অবশ্যই ঊর্ধ্বমুখী। তবে ফলন কম হওয়ায় জন্য চাষি ও ব্যবসায়ী, কেউই খুব একটা লাভের মুখ দেখবেন না।"
মালদা জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক বলেন, "এবার এমনিতেই মালদায় আমের 'অফ ইয়ার' ছিল ৷ এই জেলায় 31 হাজার 832 হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় ৷ গত বছর প্রায় পৌনে চার লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছিল ৷ এবার সেই উৎপাদন ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে ৷ ফলে বাজারে আমের দাম বাড়তে বাধ্য ৷"
আতঙ্কের নাম ঘূর্ণিঝড় রেমাল ! পাকার আগেই আম পেড়ে গোছাতে ব্যস্ত চাষিরা