মালদা, 2 অক্টোবর: আইনি বিচ্ছেদ হয়েছে মাস দুয়েক আগেই ৷ কিন্তু ছেলেমেয়ে থেকে যায় তাদের বাবার কাছে ৷ ছেলেমেয়েকে নিজের কাছে রাখতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিবাহবিচ্ছিন্না যুবতী ৷ সেই খবর পেয়ে প্রাক্তন স্ত্রীকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে ওই যুবকের বিরুদ্ধে ৷ সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক থানার উত্তর দারিয়াপুর গ্রামের মোমিনপাড়ায় ৷
গুলিবিদ্ধ যুবতীর নাম আলিনা খাতুন ৷ বয়স 27 বছর ৷ তিনি বর্তমানে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ এই ঘটনায় মেয়ের প্রাক্তন স্বামী সাহেব আনসারির বিরুদ্ধে কালিয়াচক থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন যুবতীর মা ৷ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷ তবে সেই রাতের ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত যুবক ৷ তাঁর খোঁজে পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়েছে ৷ বুধবার পর্যন্ত তাঁর হদিশ মেলেনি ৷
মালদা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় আলিনা বলেন, “তখন রাত 12টা ৷ মিনিট পাঁচেক আগে চোখ বন্ধ করেছি ৷ হঠাৎ আমাকে কেউ ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করে ৷ চোখ খুলে দেখি সাহেব ৷ আমি উঠে বসতেই ও আমার বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায় ৷ গায়ের চাদর ভেদ করে গুলি বুকে ঢুকে যায় ৷ ও বলতে থাকে, তোকে মেরে ফেললাম ৷ আমি চিৎকার করে উঠতেই ও পালিয়ে যায় ৷ গুলি চালানোর আগে ও আমার সঙ্গে কোনও কথা বলেনি ৷ কোনও ঝামেলাও করেনি ৷”
আলিনার বাবার বাড়ি উত্তর দারিয়াপুর গ্রামেই ৷ বছর দশেক আগে গ্রামেরই যুবক সাহেব আনসারির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ৷ সাহেব শ্রমিকের কাজ করেন ৷ তাঁদের একটি ছেলে আর একটি মেয়েও রয়েছে ৷ গ্রামবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বছর দেড়েক আগে এলাকারই একটি গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে আলিনা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ৷ স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি টের পেয়ে যান সাহেব ৷ এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয় ৷ প্রায় প্রতিদিনই ঝামেলা লেগে থাকত ৷ শেষ পর্যন্ত আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন আলিনা ৷ মাস দুয়েক আগে তাঁদের আইনি বিচ্ছেদ হয়ে যায় ৷ তারপর থেকে বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি ৷ যদিও তাঁর বাবা অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছেন ৷ মা সায়মা বেওয়া মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন ৷
সমস্যা দাঁড়ায় অন্য জায়গায়৷ আলিনা ডিভোর্স পেয়ে গেলেও তাঁর ছেলেমেয়ে সাহেবের কাছেই থেকে যায় ৷ ছেলেমেয়েকে নিজের কাছে রাখতে বেশ কয়েকবার তিনি সাহেবের কাছে আর্জি জানান ৷ কিন্তু ছেলেমেয়েকে তাঁকে দিতে রাজি হননি সাহেব ৷ তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি আর বিয়ে করবেন না ৷ ছেলেমেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবেন ৷ ছেলেমেয়েকে পেতে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন আলিনা ৷ ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে সেকথা জানিয়েছিলেন তিনি ৷ কোনোভাবে সেই কথা জেনে ফেলেন সাহেব ৷ এরপরেই ঘটে যায় সোমবার রাতের ঘটনা ৷
সায়মা বেওয়া পুলিশকে জানিয়েছেন, সোমবার রাত সোওয়া 12টা নাগাদ সাহেব তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে ৷ সে সোজা আলিনার ঘরে চলে যায় ৷ তখন মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল ৷ সে তাঁর মেয়েকে ঘুম থেকে তোলে ৷ তারপর কোনও কথাবার্তা না বলে সোজা তার বুক লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয় ৷ প্রথমে গুলির শব্দ, তারপর মেয়ের চিৎকারে তিনি জেগে ওঠেন ৷ মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখেন, রক্তে মেয়ের শরীর ভেসে যাচ্ছে ৷ তিনিও চিৎকার জুড়ে দেন৷ ছুটে আসেন পড়শিরা ৷ সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েকে মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকরা মেয়েকে তখনই কলকাতা রেফার করে দেন ৷ রাতেই মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় রওনা দেন তাঁদের পরিজনরা ৷ মেয়ে বর্তমানে কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷
মঙ্গলবার দুপুরে আলিনার বাবার বাড়িতে তদন্তে যায় কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ আলিনার ঘর থেকে একটি কার্তুজের খোল উদ্ধার করেন পুলিশকর্মীরা ৷ এসডিপিও (কালিয়াচক) ফায়সাল রাজা বলেন, “এই ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ গুলিবিদ্ধ তরুণী বর্তমানে কলকাতায় চিকিৎসাধীন ৷ পুরো ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ পলাতক যুবকের খোঁজে পুলিশি তল্লাশি চলছে ৷”