কলকাতা, 30 অক্টোবর: জেলে বসেই ফেসবুকের মাধ্যমে প্রস্তাব । এরপর আদালত চত্বরে বিয়ে । ঘটনা শুনে স্তম্ভিত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় । রিপোর্ট তলব করলেন জেল সুপারের কাছে ৷ কীভাবে জেলে বসেই ইন্টারনেটের ব্যবহার করতে পারে বন্দি, জানতে চায় আদালত । পাশাপাশি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়েও রিপোর্ট তলব করল বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের পূজাবকাশকালীন বেঞ্চ ।
রাকেশ রায় চৌধুরী ৷ প্রশাসনের খাতায় একজন বড়সড় প্রতারক । তার বিরুদ্ধে 86টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৷ সিঙ্গুর ও নিমতা থানা-সহ বিভিন্ন থানায় তার নামে অভিযোগ জমা পড়ে । এমনকি সিবিআইয়ের ডিআইজি আপ্ত সহায়কের পরিচয় দিয়েও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে রাকেশের বিরুদ্ধে । সেই পরিচয়ের ভিত্তিতে লালবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করত অভিযুক্ত । রাকেশের প্রতারণার মূল লক্ষ ছিল বিবাহ বিচ্ছিন্ন ও সিঙ্গেল মাদার'রা । নানা অছিলায় সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে তাদের থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করত সে । বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে কলকাতার একটি গেস্ট হাউস থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ।
এতেও স্বভাবের কোনও পরিবর্তন হয়নি রাকেশের । জেলে বসে নাম পরিবর্তন করে বাবাই রায় চৌধুরী নামে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলে । সেখান থেকেই ফের প্রতারণার ফাঁদ পাততে শুরু করে ৷ নিজেকে একজন জমিদার পরিবারের ছেলে এবং বড় হোটেল ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিত রাকেশ ৷ সেই ফাঁদেই পা দেন নিমতা থানা এলাকার বাসিন্দা নমিতা (পরিবর্তিত নাম) ।
প্রেসিডেন্সি জেলে বসেই নমিতাকে ব্যারাকপুর আদালতে আসার প্রস্তাব দেয় । সেই সময় নমিতাকে সে জানায় তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে । অবিলম্বে সে জেল থেকে মুক্তি পাবে । রাকেশকে যখন ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয় তখন তার প্রেমে অন্ধ হয়ে নমিতা হাজির হয় আদালত চত্বরে । সেখানেই রাকেশ তাকে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করে । এরপরেই ধীরে ধীরে নমিতা জানতে পারে রাকেশের আসল পরিচয় ।
এই বিষয়ে আইনজীবী অর্ক প্রতীম রায়চৌধুরী আদালতে জানান, প্রতিদিন রাতে জেল থেকে ফোন করে শারীরিক সম্পর্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন কথাবার্তা ও প্রস্তাব দিয়ে নমিতাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে বাবাই ওরফে রাকেশ । এমনকি জেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সে নমিতার জীবনে ক্ষতি করার হুমকিও দিতে থাকে । এই প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে উপযুক্ত বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নমিতা । তবে এই ঘটনায় রাকেশের পাশাপাশি জেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন আইনজীবী ।
সব শুনে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় জেল সুপারকে নির্দেশ দেন, একজন জেলে থাকা অভিযুক্ত কী করে জেল ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহার করল এই সমস্ত বিষয়ে একটি হলফনামা কলকাতা হাইকোর্টের রেগুলার বেঞ্চে জমা করতে হবে ।