হাবড়া, 6 জানুয়ারি: মদের নেশায় চুর হয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে মুগুর দিয়ে পিটিয়ে খুন। টানা ছ'বছর বিচার চলার পর সোমবার দোষী সাব্যস্ত স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল বারাসত আদালত। হত্যাকারী শেখর দেবনাথকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি এদিন 10 হাজার টাকার আর্থিক জরিমানাও করেছেন বিচারক। স্ত্রী ও মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে শনিবার আসামি শেখর দেবনাথকে দোষী সাব্যস্ত করেন বারাসত আদালতের বিচারক । সোমবার সেই মামলায় সাজা ঘোষণা করলেন তিনি ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর 24 পরগনার হাবড়ার মছলন্দপুরের বাসিন্দা শেখর তেমন কোনও কাজকর্ম করত না । উপরন্তু ছিল মদের নেশা ৷ তাতেই বিভিন্ন দিক থেকে দেনায় ডুবে গিয়েছিল শেখর। স্ত্রী মিঠু এবং মেয়ে পূজা বারবার বারণ করলেও মদের নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি সে । উল্টে, এনিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দিত স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে । তারই মধ্যে 2018 সালের 18 মার্চ ঘটে যায় নারকীয় এই জোড়া হত্যাকাণ্ড।
সেই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল শেখরের মেয়ে পূজা। ঘটনার সময় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাবে বলে প্রস্তুত হচ্ছিল পূজা। আচমকা সেই সময় মেয়ের মাথায় প্রথমে মুগুর দিয়ে আঘাত করে শেখর ৷ এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে দড়ি দিয়ে সিলিংয়ে ঝুলিয়ে দেয় ৷ স্ত্রী মিঠু তখন বাজারে গিয়েছিলেন । বাজার থেকে বাড়িতে ফিরতেই তাকেও ঠিক একই কায়দায় খুন করে ঝুলিয়ে দেয় গুণধর স্বামী ।
এদিকে, জোড়া হত্যাকাণ্ডের পরই মিঠুর বাপের বাড়ির লোকেরা হাবড়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন । এরপর পুলিশ শেখরকে গ্রেফতার করে । দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বারাসত আদালতে মামলার শুনানি চলার পর শনিবার বিচারক স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার দায়ে শেখরকে দোষী সাব্যস্ত করেন । সোমবার আদালত তার যাবজ্জীবন সাজার রায় ঘোষণা করেছে ।
এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি নীলোৎপল দাস বলেন,"ছ'বছর ধরে মামলাটি চলছিল বারাসত আদালতে । পুলিশের তদন্ত যথাযথ ছিল । মদের নেশার কারণে আসামি শেখর দেবনাথ বিপুল টাকা ধার করেছিল । এর জেরে মদের নেশায় সে প্রথমে মুগুর দিয়ে তার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েকে হত্যা করে । পরে স্ত্রীকেও একই কায়দায় খুন করে । এরপর দেহ দুটি সে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল । অর্থাৎ, তথ্য প্রমাণ লোপাট করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল সে । সেই কারণে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানের ভিত্তিতে বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ দিয়েছেন ।"