মালদা, 5 সেপ্টেম্বর: আরজি করের নির্যাতিতার দাবিতে রাত জাগছে রাজ্য ৷ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রাতের দখল নিচ্ছে ৷ রাতের নিস্তব্ধতা চিরে দিচ্ছে, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগান ৷ সেই জাস্টিসের আশাতেই দিন গুনে যাচ্ছে মালদা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন এক পূর্ণগর্ভা নাবালিকা ৷
ওই নাবালিকার বাড়ি কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের একটি গ্রামে ৷ তাঁর অভিভাবকদের অভিযোগ, ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে তিন মাস আগে ৷ কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি ৷ এখনও অধরা অভিযুক্ত যুবক ৷ আরও অভিযোগ, প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় তাঁরা মেয়েকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা মেয়েকে ভর্তি না-নিয়ে ফিরিয়ে দেন ৷ কারণ, মেয়ে তাঁর স্বামীর নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি ৷ অভিভাবকরা আরও জানান, পরে পুলিশই তাঁদের মেয়েকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করিয়েছে ৷
15 বছরের গর্ভবতী নাবালিকা এলাকারই একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে ৷ তার অভিযোগ, 26 বছরের ওই যুবকের সঙ্গে তার বছরখানেকের পরিচয় ৷ তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে ওই যুবক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে বলে অভিযোগ করেছে নাবালিকা ৷ তার কথায়, "এই কথা কাউকে যাতে না-বলি, সেজন্য সে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ৷ এভাবে জোর করে আমার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ায় আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি ৷ কয়েক মাসের মধ্যেই আমার শারীরিক পরিবর্তন ধরে ফেলেন মা ৷ তাঁকে সব কথা খুলে বলি ৷ বিষয়টি জানাজানি হতেই ও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় ৷ তারপর আর গ্রামে ফেরেনি ৷ আমি এর বিচার চাই ৷"
মেয়েটির মায়ের বক্তব্য, "মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছে তা ধর্ষণ ছাড়া কিছু নয় ৷ এই ঘটনায় আমি 26 জুন স্থানীয় মোথাবাড়ি থানায় ছেলেটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ কিন্তু পুলিশ ছেলেটিকে ধরতে কিছু করেনি ৷ এমনকি একবারের জন্য গ্রামেও তদন্ত করতে আসেনি ৷ মেয়ে এখন ন’মাসের গর্ভবতী ৷ গত সোমবার সন্ধেয় মেয়ের হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় ৷ সঙ্গে সঙ্গে ওকে স্থানীয় বাঙ্গীটোলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাই ৷ কিন্তু মেয়ের স্বামীর নাম আর পরিচয় জানাতে না-পারায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মেয়েকে ভর্তি নেননি ৷ ফিরিয়ে দিয়েছেন ৷ অবশ্য মোথাবাড়ি থানার পুলিশই মঙ্গলবার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মেয়েকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করিয়েছে ৷ আমি অভিযুক্ত যুবকের কঠোর শাস্তি দাবি করছি ৷"
একজন গর্ভবতী নাবালিকা শুধুমাত্র স্বামীর নাম-পরিচয় না-জানাতে পারায় তাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হল না কেন ? কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কৌশিক মিস্ত্রির জবাব, "এই অভিযোগ সত্যি নয় ৷ ওই গর্ভবতীকে পরীক্ষার পর বলা হয়েছিল, প্রসবের আরও অন্তত সাতদিন দেরি রয়েছে ৷ তাকে যেন সাতদিন পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ৷ আমার ধারণা, পরিবারের লোকজন ভুল বুঝছেন ৷ প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে আসা কোনও রোগীকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না ৷"
মোথাবাড়ি থানার ওসি কুণালকান্তি দাস জানাচ্ছেন, "এই ঘটনায় তিন মাস আগেই লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তও শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত যুবক পলাতক ৷ শোনা যাচ্ছে, সে ভিনরাজ্যে রয়েছে ৷ এখনও তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷ তবে তার খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে ৷"
মালদা মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই নাবালিকা ও তার গর্ভস্থ সন্তান পুরোপুরি সুস্থ ৷ দু’একদিনের মধ্যেই প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা ৷ আপাতত নাবালিকাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ৷