মালদা, 29 অক্টোবর: আমবাগানে নিয়মিতই বসে জুয়ার আসর ৷ সেই আসর বসেছিল মঙ্গলবারও ৷ হঠাৎ সেখানে হানা দেয় পুলিশ ৷ পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে যে যেদিকে পারে, সেদিকে পালাতে শুরু করেন জুয়াড়িরা ৷ তাঁদের পিছনে তাড়া করেন সিভিক ভলান্টিয়াররাও ৷ অভিযোগ, সিভিকের তাড়া খেয়েই এক ব্যক্তি পুকুরে ঝাঁপ মারেন ৷ কিন্তু সাঁতার জানতেন না তিনি ৷ শেষ পর্যন্ত জলে ডুবে মৃত্যু হয় তাঁর ৷
ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার ব্লকের শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পীরপুর গ্রামে ৷ এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মৃতের পরিবারের লোকজন ৷ যদিও পুলিশের দাবি, কাউকে তাড়া করা হয়নি ৷ পুলিশের গাড়ির আওয়াজ পেয়েই জুয়াড়িরা আসর থেকে দৌড়ে পালাতে শুরু করে ৷ অসতর্কতাবশত পুকুরে পড়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় ৷
মৃত ব্যক্তির নাম সাত্তার শেখ ৷ বয়স 45 বছর ৷ বাড়ি ইংরেজবাজার ব্লকেরই মিলকি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামে ৷ বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী বানো বিবি-সহ পাঁচ ছেলেমেয়ে ৷ পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন সাত্তার ৷ বছরের বেশিরভাগ সময় ভিনরাজ্যেই কাটাতেন ৷ অন্য রাজ্যে কাজ করে কিছুদিন আগেই ঘরে ফিরেছিলেন তিনি ৷ গতকাল দুপুরে তিনি বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পীরপুর গ্রামের আমবাগানে জুয়া খেলছিলেন ৷ সেই তাসের আসরে হঠাৎ স্থানীয় মিলকি ফাঁড়ির পুলিশ হানা দেয় ৷ তারপরেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা ৷ সন্ধে নাগাদ পুকুর থেকে উদ্ধার হয় সাত্তারের দেহ ৷ তড়িঘড়ি মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷
বুধবার সাত্তারের মেয়ে আকলেমা বিবি জানান, "আমার বাবা তাস খেলছিল না ৷ অন্যরা খেলছিল ৷ বাবা তাস খেলা দেখছিল ৷ সেই সময় সিভিক ভলান্টিয়াররা হঠাৎ সেখানে হাজির হয় ৷ সবাই পালানোর চেষ্টা করলে তারা তাড়া করে ৷ পুলিশের ভয়ে আমার বাবাও পালাচ্ছিল ৷ সেই সময় পা পিছলে পুকুরে পড়ে যায় ৷ সিভিকদের তাড়া খেয়েই বাবার এই দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ দুপুরে বাবার বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে গেলেও বাবা বাড়ি না ফেরায় আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি ৷ বাবার মোবাইলে ফোন করি ৷ কিন্তু ফোন সুইচ অফ ছিল ৷ অনেক পরে একজন জানায়, বাবা পুকুরে পড়ে গিয়েছে ৷ পুলিশের তাড়ায় ওই পুকুরে আরও কয়েকজন পড়ে গিয়েছিল ৷ তারা পাড়ে উঠতে পারলেও সাঁতার না জানায় আমার বাবা জলে তলিয়ে যায় ৷ ওই বাগানে কতদিন ধরে তাস খেলা হয় আমাদের জানা নেই ৷ তবে কোনওদিন বাবার জুয়ার নেশা ছিল না ৷"
একই বক্তব্য সাত্তার সাহেবের এক প্রতিবেশী শেখ সাজিবারেরও ৷ তিনি বলেন, "সিভিকদের তাড়াতেই পুকুরে পড়ে সাত্তারের মৃত্যু হয়েছে ৷ পুকুরে পড়ে যাওয়ার পরও সিভিকরা তাঁকে উঠতে দিচ্ছিল না ৷ এই ঘটনার জন্য সিভিকরাই দায়ী ৷ অন্যরা তাস খেলছিল ৷ সাত্তার কোনওদিন জুয়া খেলে না ৷ ওর কোনও নেশাই নেই ৷ শুধুমাত্র ভয়ে ওর মৃত্যু হল ৷"
তবে অভিযোগ মানতে রাজি নয় পুলিশ ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজবাজার থানার এক আধিকারিক জানান, "আমবাগানে যখন জুয়া খেলা চলছিল, তখন পাশের রাস্তা দিয়ে পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল ৷ সেই গাড়ি দেখে জুয়ার আসরে থাকা সবাই পালাতে শুরু করে ৷ পুলিশ কিংবা কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার কাউকে তাড়া করেনি ৷ পালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই ব্যক্তি পুকুরে পড়ে যান ৷ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ কারা ওই আমবাগানে জুয়া খেলছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে ৷"