বর্ধমান, 24 জানুয়ারি: বর্ধমানের প্রশাসনিক সভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ঠুঁটো জগন্নাথ বলে কটাক্ষ করেন। বুধবার বর্ধমানের গোদা এলাকায় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করেন। মঞ্চ থেকে বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসও করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন প্রথম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায় তাঁকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে ঠুঁটো জগন্নাথের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার ঠুঁটো জগন্নাথ। আমরা এখানে জগন্নাথ দেবের কথা বলছি না। রাজনৈতিক ঠুঁটোর কথা বলছি। বাক্সটা একদিন হয়ে যাবে ফুটো। ওরা বলছে জল দিচ্ছি অথচ বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছনোর কাজ আমরা করি। জমিটা টাকা দিয়ে আমরা কিনি। মেনটেইন আমরা করি। ওরা মাছের তেলে মাছ ভাজছে। এখান থেকে জিএসটি'র টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। 75 ভাগ আমরা খরচা করছি। ওরা যে 25 ভাগ খরচ করছে সেটাও আমাদের টাকা।"
একই সঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আগের বার বলেছিল 15 লক্ষ টাকা করে দেবে। বাড়িয়ে দিল গ্যাসের দাম। ওরা যা বলবে সব উশুল করে নেবে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে। ওদের বিশ্বাস করবেন না ৷ আমরা ওসব করি না। যখন রোজ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে মানুষ মরছে তখন তোমরা কোথায় থাকো।যখন জিনিসের দাম বাড়ে, ছাত্র হত্যা হয়, তখন কোথায় থাকে ? সংখ্যালঘুদের পিটিয়ে হত্যা হলে কোথায় থাকো ? 100 দিনের কাজ করার পরেও সাত হাজার কোটি টাকা দেয়নি। মানুষের ভাত মেরেছে ৷ কোনও কিছু কেনাকাটা করলেই জিএসটি। আর আমাদের টাকা দেয় না। আমরা দুর্বল নই।100 দিনের কাজে কেন্দ্র টাকা বন্ধ করে দিয়েছে ৷ এক পয়সাও দেয়নি, যারা কাজ করেছে তাদের এক পয়সাও দেয়নি ৷ এরপরেও আমরা জব কার্ড হোল্ডারদের 40 দিনের কাজ করিয়েছি।"
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাকে বলেছে টাকা দেবে না, আমি বলেছি কেন ? ওরা বলছে গেরুয়া রং করতে হবে। আমি বলেছি সেটা সাধুদের অধিকার। কিন্তু আপনারা কোন সাধু ? আপনার তো বিধু ! এখন বলছে ওরা ছ'মাসের জন্য চাল দেবে কিন্তু ওদের লোগো আর ছবি ব্যবহার করতে হবে ৷ আমি বলেছি তোমার টাকা চাই না ৷ আর তোমার লোগো, ছবি ব্যবহার করব না ৷ এটা কোন জমিদারি ?" এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়ে বলেন, "বাংলার ছেলে-মেয়েরা স্মার্ট ক্রেডিট কার্ডে 10 লক্ষ টাকা করে পেতে পারে উচ্চশিক্ষার জন্য। এক সময় বাবা মায়েরা মেয়েদের পড়ানো খাওয়ানো নিয়ে চিন্তায় থাকতেন। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, মেধাশ্রী করে দিয়েছি অথচ সব টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।"
রেশনের চাল দেওয়া নিয়ে মমতা বলেন, "কৃষক বন্ধুরা জানেন আমরা আগে ফুড কর্পোরেশন থেকে চাল কিনতাম ৷ যে ফুড কর্পোরেশন রেশনে আধ ভাঙা চাল দিত। আজকে আমরা গর্বিত আমার কৃষকেরা যে ধান উৎপাদন করে আমরা তাদের কাছ থেকে ধান কিনছি। এর জন্য আমরা 10 হাজার কোটি টাকা খরচ করি। মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দিই।" তিনি আরও বলেন, "আমার ছেলেমেয়েরা না থাকলে নাসা থেকে ভাষা সফল হতো না। এখন আর পড়ার জন্য বাইরে যেতে হবে না। এখানেও সুযোগ পাবেন। এখন নতুন করে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে, মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। কাউকে বাইরে কাজ করতে যেতে হবে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পরিযায়ী শ্রমিক ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাই যারা বাইরে থাকেন তাদের বলব ফিরে আসুন। কারণ ওখানে কিছু টাকা বেশি পেলেও খাদ্য ঘরবাড়ি কিছুই ভালো করে পাওয়া যায় না। সব টাকা খরচ হয়ে যায়। এখানে ঘরে থাকলে টাকা কম পেলেও সব কিছু পাওয়া যাবে ৷"
আরও পড়ুন