কলকাতা, 15 নভেম্বর: শুক্রবার বিরসা মুণ্ডার 150তম জন্মদিবস উপলক্ষে রাজারহাটে নবনির্মিত আদিবাসী ভবনে এসে বিজেপিকে চরম কটাক্ষ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নাম না-করে তিনি এদিন নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রীকেও ৷
কটাক্ষের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ওরা বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরম কো নেহি মানতা । দুর্গাপুজো নেহি করনে দেতা ! তোমরা স্বামীজিকে সামনে রেখে ইলেকশন করো ৷ অথচ সেই স্বামীজীর বাড়ি সসম্মানে উদ্ধার করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।" একইসঙ্গে এই মঞ্চ থেকে অসম্পূর্ণ দিঘা মন্দির তিনি উদ্বোধন করতে চান না বলে জানিয়ে নাম না-করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
প্রসঙ্গত, অমিত শাহ-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মুখে বারংবার শোনা গিয়েছে একটি অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেন না । এদিন আদিবাসী ভবনের উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে সেই অভিযোগের কড়া জবাব দিলেন মমতা । তিনি বলেন, ধর্ম, ভাষা, রঙ, সম্প্রদায় এসব নিয়ে বিভাজনে তিনি বিশ্বাসী নন । তিনি সবাইকে নিয়ে চলতে ভালোবাসেন । সব শ্রেণির মানুষকেই তিনি সম্মান করেন । আর তাই ভোটের সময় যাঁরা ধর্মের নামে ধুঁয়ো তোলেন, তাঁরা বাস্তবে রাজনীতিই করেন ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক কে করেছেন ! লাইট অ্যান্ড সাউন্ড ! স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল । আমি পুরো এটাকে অধিগ্রহণ করেছি । কলকাতা কর্পোরেশন আমাকে এ বিষয়ে অনেক হেল্প করেছে । ভগিনী নিবেদিতার যেখানে মৃত্যু হয়েছিল, সেটা চলে গিয়েছিল বিমল গুরুঙের হাতে । আমি গিয়ে একটা অন্য বাড়ি দিয়ে সেটাকে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দিই । কলকাতায় সিস্টার নিবেদিতার বাড়ি আমি তিনবার গিয়ে রাজি করিয়ে উদ্ধার করি । এক কোটি টাকা পর্যন্ত কলকাতা পুরনিগম দিতে চেয়েছিল ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের ওটা অধিগ্রহণ করতে হয় ।"
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ওরা কোর্টেও গিয়েছিল, কিন্তু কিছু করার নেই, ঐতিহ্যবাহী এই সম্পদগুলোকে রক্ষা করার জন্য এইটুকু করতেই হয় । মায়ের বাড়ির ক্ষেত্রেও সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে । এখন সবাই কত সহজে এইসব জায়গাগুলিতে যেতে পারে । এসব জানবেন না, শুধু বলবেন মমতা ব্যানার্জি ধরমকো নেহি মানতা । দুর্গাপুজো নেহি করনে দেতা । এটা ঠিক নয় ।"
মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতাদের নাম না-করে তাদের উদ্দেশে বলেন, "দক্ষিণেশ্বরে আপনারা অনেকেই এসে অনেকবার পুজো দিয়ে গিয়েছেন । কিন্তু স্কাইওয়াক তৈরি করেছে আমাদের সরকার । তারাপীঠ আগে কী ছিল, যান গিয়ে দেখে আসুন । তারকেশ্বরের উন্নয়ন করেছি আমরা, নকুলেশ্বর মন্দিরে যা বলা হয়েছে তাই করা হয়েছে । জল্পেশ মন্দির করেছি ৷ বাবা লোকনাথের চাকলা মন্দিরেরও কাজ করেছি আমরা ।"
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, "দিঘাতেও পুরীর মতোই জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে । উচ্চতায় যা পুরীর মন্দিরের সমান । জায়গা পুরীর মন্দিরের থেকেও বেশি । তবে ওখানে ঠাকুর মার্বেলের । আমরা ট্র্যাডিশনকে কোনও অসম্মান করি না । আর তাই সেখানে ছোট দেখে একটি নিম কাঠের ঠাকুরের তৈরি করা হয়েছে । সেখানেই পুজোটা হবে ।"
এরপরই নাম না-করে প্রধানমন্ত্রীকেও কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । দিঘার কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমার সেখানে সব কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার মুখে ৷ তবে আগে আমাকে একবার সেখানে যেতে হবে, মুখ্যসচিবকেও যেতে হবে । কারণ আমাদের একটা ট্রাস্টি তৈরি করতে হবে । পুরোহিত কারা পুজো করবেন, কারা ভোগ রান্না করবেন ! এবং পুরোটা কমপ্লিট হয়েছে কি না দেখতে হবে । কোনও ইনকমপ্লিট জিনিস আমি উদ্বোধন করব না । আমাদের লক্ষ্য কমপ্লিট করা । তাতে দু'মাস লাগলে লাগবে । কালীঘাট স্কাইওয়াক চাইলে কালকেই উদ্বোধন করে দিতে পারি । কিন্তু আমি তা করব না । কারণ সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হবে, তারপরে উদ্বোধন করব । ইনকমপ্লিটভাবে উদ্বোধন করা মানে তাকে সম্মান দেওয়া নয়, বরং তাকে অসম্মান করা ।"
হঠাৎ করে অসম্পূর্ণ মন্দির সম্পূর্ণ না-করে উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ কেন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী ? সরাসরি কারও নাম না করলেও রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এক্ষেত্রে রাম মন্দিরের উদ্বোধনের সঙ্গে তুলনা করতে চাইলেন তিনি । ভোটের মুখে অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধনের কারণে একাংশের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে । সন্ত সমাজ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল, অনেকেই এই নিয়ে মুখ খুলেছিলেন । কিন্তু সে সময় এই নিয়ে চুপ থাকলেও এদিন এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেই বিতর্ককে আরও একবার উসকে দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী ।