হাবড়া, 12 মার্চ: বাংলায় নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় জীবন দিতেও তৈরি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । এমনই হুংকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । তাঁর বার্তা, তিনি নাগরিকের পাহারাদার, তাই নাগরিকের অধিকার কাড়ার চেষ্টা হলে কোনওভাবেই তিনি তা মেনে নেবেন না ৷ বাংলায় কোনওভাবেই ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করতে দেবেন না । নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নামে নাগরিককে রাষ্ট্রহীন তিনি হতে দেবেন না ।
প্রসঙ্গত, গতকাল আশংকা প্রকাশ করেছিলেন । কারণ তখনও পর্যন্ত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিধি প্রকাশ্যে আসেনি । আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে হাবড়ার পরিষেবা প্রদানের মঞ্চ থেকে এই আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি। একইসঙ্গে, স্পষ্ট ভাবে বললেন, আইনের অনেক কিছু নিয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে । আশংকা প্রকাশ করলেন নাগরিকত্বের দাবি জানাতে গিয়ে নাগরিকদের রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়তে হয় । সরাসরি বিজেপির নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সঙ্গে এনআরসির যোগ রয়েছে বলে এ দিন দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আর সেই জায়গা থেকেই তাঁর আবেদন, "নাগরিকত্বের দাবি জানানোর আগে 10বার ভাবুন ৷"
এ দিন হাবড়ায় বাণীপুরের ডক্টর বিআর আম্বেদকরের নামাঙ্কিত মাঠে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো । মিনিট দশেক আগেও দু'ধারের রাস্তায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না । খুব স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে কী বলতে চান সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন মানুষ । আর এই জমায়েতকে সামনে রেখে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সংশোধনী ইস্যুতে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । এখানেই তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিধি আদৌ বৈধ কি না সন্দেহ আছে ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, নয়াবিধিতে এখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বাবার বার্থ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । তাঁর প্রশ্ন, "সবার বাবার বার্থ সার্টিফিকেট আছে তো ? আমার তো নেই ? আমার বাবা-মায়ের জন্মদিন কবে জানি না ।" তিনি বলেন, "অনেক পরিবার আছে, ব্যক্তি আছেন, যাঁদের 50-60 বছর বয়স । তাঁদের বাবার জন্ম শংসাপত্র খুঁজে পাবেন তো ? আমি মনে করি, এটা পুরোটাই ভাঁওতা।"
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন এই মঞ্চ থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সঙ্গে এনআরসিতে জুড়ে দেওয়ার একটা আশংকা করেছেন । তাঁর কথায়, "কিছুদিন পরেই সিএএর সঙ্গে এনআরসি যুক্ত করে দেওয়া হবে । আপনারা কি আদৌ বিশ্বাস করেন আইনটাকে ? যদি, তাই হয় তাহলে এতদিন বাদে আইনটিকে কেন চালু করা হল ? নির্বাচনের দু'দিন আগেই কোনও আইন করলে, সেটি আদৌ আইনে পরিণত হয় ।" তাঁর কথায়, বিজেপি অনেক রকম কথা বলবে, ওগুলো সব মিথ্যা ।
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আপনারা অধিকার পেলে আমি খুশি । এই আইনে যখনই আপনি দরখাস্ত করবেন তখন আপনি অবৈধ নাগরিক হয়ে গেলেন । এরপর লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো নাগরিক পরিষেবা আপনারা পাবেন কী করে ? এমনকি আপনাদের রেশন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে । আবেদন করার পর নতুন করে আইনের সাহায্য আপনারা নিতে পারবেন না । কারণ বিদেশিরা কোনও আইনি সাহায্য চাইতে পারে না । যদি সত্যিই সবাইকে নাগরিকত্ব দিতে চাইত কেন্দ্রীয় সরকার তাহলে অন্যান্য দেশে যে নিয়ম আছে, পাঁচ বছর 10 বছর দেশে থাকলে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, সে রকম কেন করা হচ্ছে না ? আসলে সবটাই বিজেপির ভাঁওতা । আসলে ভোটের জন্য এ সব করা হচ্ছে । আর আপনারা আবেদন করলেই রাষ্ট্রহীন হয়ে যাবেন ।"
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মঞ্চ থেকে নাগরিকের অধিকার কোনওভাবেই কাড়তে দেবেন না বলে হুংকার দিয়েছেন । তিনি বলেন, নাগরিকের অধিকার রক্ষা করতে প্রয়োজনে তিনি জীবন দিতেও তৈরি । তবে কোনওভাবেই বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প হতে দেবেন না । মমতার বক্তব্য, তিনিই পাহারাদার । নাগরিক অধিকার হরণের চেষ্টা হলে, তিনি তাঁদের আগলে রাখবেন । কারণ তিনিই নাগরিকের পাহারাদার ।
আরও পড়ুন: