মাথাভাঙা, 4 এপ্রিল: প্রচার মঞ্চ থেকে নাম না-করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কড়া আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বৃহস্পতিবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় তাঁর সভা ৷ অন্যদিকে এদিনই জেলার রাশমেলার মাঠেই নির্বাচনী প্রচারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তাঁকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, "আজ মিটিং করতে আসবে, কত কাঁদবেন দেখবেন, কত কুমীরের অশ্রু ঝরবে ৷" এদিনের সভা থেকে তিনি প্রার্থী জগদীশ বাসুনিয়াকে হিরের টুকরো বলে উল্লেখ করেন ৷
এদিন বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বিজেপি আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি মানে না ৷ ওটা ওদের ঘরবাড়ি ৷ যাঁর বিয়ে, তিনি নিজেই পুরোহিত ৷ ওদিকে কেউ তাকিয়ে দেখে না, ওরা মারলেও দোষ নয়, গ্রেফতার করলেও দোষ নয় ৷ এজেন্সি দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছে ৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছে, বিজেপিকে ভোট দাও আর এজেন্সি থেকে মুক্তি পাও ৷ আপনারা, কেউ মাথা নত করবেন না ৷ কারণ ওদের শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন ৷"
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এই কোচবিহারের শীতলকুচিতেই 5 জনের মৃত্যু হয়েছিল ৷ এই ঘটনায় সাসপেন্ড হয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশের উচ্চাধিকারিক দেবাশিস ধর ৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনে তিনি বীরভূমে বিজেপি প্রার্থী ৷ এদিনের মাথাভাঙার সভা থেকে দেবাশিস ধরের বিজেপি প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে শীতলকুচির ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ভুলে গিয়েছেন, শীতলকুচিতে নির্বাচনের সময় লাইনে দাঁড়ানো 5 জনকে গুলি করে মেরেছিল ৷ তাঁর মধ্যে 4 জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, একজন রাজবংশী ভাই ছিল ৷ নির্বাচন চলাকালীনই আমি ছুটে এসেছিলাম ৷ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম ৷ আর যে লোকটির নির্দেশে এই ঘটনা ঘটেছিল ৷ তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের দু'টি ডিপি কেস চলছে ৷ ভিজিল্যান্স ক্লিয়ার হয়নি ৷ ভারতের সরকার তাঁকে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে ৷ এরা আইন-কানুন কিছুই মানে না ৷ সে এখন বীরভূমে দাঁড়িয়েছে ৷ শীতলকুচিতে গুলি চালিয়ে, এত মানুষ মেরেও হাতের রক্ত মোছেনি ৷ শীতলকুচি থেকে বীরভূমে গিয়েছে ৷ সে বলছে, 'আমি ওখানে এসডিপিও' ছিলাম ৷"
তিনি আরও বলেন, "আমার কোনও অধিকার নেই দালালি করে মানুষের প্রাণ কেড়ে নেব ৷ আমরা রাজ্য সরকার অবজেকশন দিয়েছি ৷ দু'টি ডিপি কেস আছে, ভিজিল্যান্স কেস আছে ৷ কেন্দ্রে যে সরকার আছে তারা কোনও আইন, সংবিধান মানে কি না, জানিনা ৷ ওদের একটাই আইন আছে, ওয়ান নেশন, ওয়ান পলিটিক্যাল পার্টি ৷ আর নির্বাচন এলেই ভাঁওতা দেওয়া ৷" এরপরেই আসে কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রীর সভার প্রসঙ্গে ৷ নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আজ বাবুরা এখানে আসবে ৷ দেখবেন কত কাঁদবে, কত কুমিরের অশ্রু ঝরবে ৷"
এদিনও মমতার বক্তৃতায় বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, মনরেগার টাকার প্রসঙ্গ ৷ তিনি জানান, 11 লক্ষ ডেটা দিলেও কেন্দ্র আবাস যোজনার টাকা দেয়নি ৷ একশো দিনের কাজে বাংলা প্রথম ছিল ৷ রাস্তার কাজেও বাংলা প্রথম ছিল ৷ এখন নির্বাচনের সময় বিজেপি পার্টি অফিস থেকে ওই ডেটার ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করছে ৷ তারা বলছে, "আপনার বাড়ি চাই ? আবার আবেদন করুন ৷ আমরা বাজেটে বলেছি, মে মাসের পরে আমরা বাড়ি করে দেব ৷ আমরা কারও দয়া-ভিক্ষা চাই না ৷"
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একশো দিনের কাজের টাকা বৃদ্ধির কথা জানানো হয়েছে ৷ এখানে মমতা বকেয়া টাকা না-পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধে বলেন, "আরে টাকাই তো দিস না! তোমাদের 7 টাকা বাড়ানোর দরকার নেই ৷ যা বাড়ানোর আমিই করব ৷ কিন্তু এখন বলতে পারছি না ৷"
লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্তা, জেলাশাসকদের বদলি করা হয়েছে ৷ এখানে কেন্দ্রীয় এজেন্সির কথা তোলেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "সব এজেন্সি কাজে লাগাচ্ছে ৷ রাজ্য সরকারি অফিসারদের ট্রান্সফার করছে ৷ আর তোমাদের যাঁরা এনআইএ-র নামে, সিবিআই-এর নামে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাঁদের ক'জন ট্রান্সফার হয়েছে ? তাঁদের ক'জনের বিরুদ্ধে শাস্তি হয়েছে, আমি জানতে চাই ৷ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ ৷ আমি থাকাকালীন কারও ক্ষমতা নেই, বাংলার মানুষের গায়ে হাত দেবে ৷"
11 মার্চ সিএএ লাগু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার এর বিরোধিতা করেছেন ৷ এদিনের সভাতেও তিনি বললেন, "ক্যা হচ্ছে মাছের মাথা, আর এনআরসি হচ্ছে ল্যাজা ৷ পুরোহিত কী করে জানবেন, বাংলাদেশ থেকে তাঁর বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট আনতে হবে ৷ নাম লেখাবেন আর বাংলাদেশি হয়ে যাবেন ৷ আপনি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাবেন না, আপনি কন্যাশ্রী পাবেন না, আপনার সরকারি অধিকার থাকবে না ৷ আপনার নাগরিকত্ব থাকবে না ৷ এবার এটা ভালো না খারাপ, বুঝে নিন ৷ ডিটেনশন ক্যাম্প করে রেখে দেবে ৷ সেখানে বিদেশি বলে চিহ্নিত করবে ৷"
নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের দিন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সব রাজনৈতিক দলের সমান অধিকারের উপর জোর দিয়েছিলেন ৷ তবে তা হবে না বলেই অভিযোগ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ মমতা এদিন বলেন, "2014 সালে যে দিন থেকে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, সেদিন থেকে বাংলার উপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করেছে ৷ বাংলাকে মানে না, বাংলায় টাকা দেয় না ৷ 2019 সাল থেকে এই পাঁচ বছরে 6 লক্ষ 50 হাজার কোটি টাকা রাজস্ব নিয়ে গিয়েছে ৷ আর আমাদের 1 লক্ষ 80 হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে ৷ নির্বাচন কমিশন ওদের লোক বলে যা ইচ্ছে তাই বলবে, এটা হতে পারে না ৷ আমি নির্বাচন কমিশনকে বিনীত অনুরোধ করব, আমার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে ৷ দয়া করে দেখুন বিজেপির লোকেরা কীভাবে গুন্ডামি করছে ৷ আমি বলব, বিএসএফের নামে সিআইএসএফ, আয়কর, এনআইএ কীভাবে বিজেপির নেতা-কর্মীদের হয়ে কাজ করছে ৷ আর মানুষের উপর অত্যাচার করছে, হয়রান করছে ৷ এভাবে গণতান্ত্রিক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না ৷" এদিন তিনি বিজেপিকে বিশ্বাস না-করার পরামর্শ দেন ৷ মমতা বলেন, 'কেউটে সাপকে বিশ্বাস করবেন, বিজেপিকে করবেন না ৷'
আরও পড়ুন: