কলকাতা, 3 নভেম্বর: ষোড়শ অর্থ কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েই সরব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কখনও রং, কখনও অন্যান্য অছিলায় রাজ্যকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে এই বৈঠকে তোপ দাগেন তিনি । তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে 60 শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার দিলেও, রাজ্যকে 40 শতাংশ অর্থ দিতে হয় । তারপরেও একতরফাভাবে রাজ্যকে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী ।
একইসঙ্গে, রাজ্য থেকে নিয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় করের ভাগের 50 শতাংশ দাবি করেছে রাজ্য সরকার । এতদিন পর্যন্ত 41 শতাংশ রাজ্য পায় । রাজ্য সরকারের যুক্তি, "এই রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা তুলে নিয়ে যাবে, তারপরে কেন আমরা শুধু চল্লিশ শতাংশ অর্থ পাব !" সূত্রের খবর, এদিন এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলি । এক লক্ষ 76 হাজার কোটি টাকা আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পাইনি, বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে । রাজ্য থেকে প্রতিনিধিরাও গিয়েছিলেন, তা সত্ত্বেও পাওয়া যায়নি ।"
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, "সোশাল সিকিউরিটি স্কিম, যা অন্য কোনও রাজ্য করেনি, তা আমরা করেছি । তাতেও আমাদের কোনও টাকা দেওয়া হচ্ছে না । কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী প্রকল্প করা হয়েছে রাজ্যে । কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এক্ষেত্রে সেভাবে কোনও সাহায্য করেনি । বন্যা নিয়ন্ত্রণে কোনও অর্থ দেওয়া হয়নি । সুন্দরবনের জন্য কোনও অর্থ দেওয়া হয়নি আজ পর্যন্ত । নর্থ ইন্ডিয়াতে যে সমস্ত নদীগুলো আছে সেগুলোর ধাক্কাতে আমাদের এখানকার নদীর জল বেড়ে যায় । নদী ভাঙন দেখা দিচ্ছে । বন্যার ভ্রুকুটিও হচ্ছে । এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না ।" মুখ্যমন্ত্রী এদিন দাবি করেছেন, এ রাজ্য থেকে জিএসটি মারফত যে কর নেওয়া হয়, তার চল্লিশ শতাংশ আমাদের ফেরত দেওয়া হয় । আমরা চাই 50 শতাংশ ।"
মুখ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়ে বলেন, "বাংলা কৃষিতে এক নম্বর । আলু চাষে দু'নম্বর । সবজি উৎপাদনে এক নম্বর । তারপরেও কেন্দ্রীয় সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা ।" মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, "রাস্তা করার টাকা এখনও দেওয়া হয়নি । আমরা নিজেদের টাকাতেই রাস্তা করছি । 100 দিনের কাজের টাকাও দেওয়া হয়নি । কেন্দ্র বঞ্চনা করার পর এই 100 দিনের কর্মীদের নিয়ে রাজ্য নিজস্ব প্রকল্প তৈরি করেছে । যার টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার । কর্মশ্রী প্রকল্প নাম দিয়ে টাকা দিচ্ছি এবং কাজ হচ্ছে ।"
মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ করে বলেন, "আবাস যোজনার কিছুই দেওয়া হয়নি । 12 লক্ষেরও বেশি মানুষ বঞ্চিত ।" মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, "রাজ্যে গঙ্গার ভাঙন মোকাবিলা করছি ৷ কাজ করার পরেও, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সাহায্য পাচ্ছি না ।" এদিন গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় স্বীকৃতি না দেওয়া নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া হল না । প্রত্যেক বছর এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন । আমরা ওখানে ব্রিজ তৈরি করব ।" একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, "আদিবাসীদের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি এখানে হয়েছে । অথচ কোনও অর্থই দেওয়া হয়নি ।"