মালদা, 21 ফেব্রুয়ারি: ফের মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ৷ এ বার বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে গিয়ে কফিনবন্দি হয়ে ঘরে ফিরছেন দুই তরতাজা তরুণ ৷ দুর্ঘটনায় তাঁদের দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে ৷ মৃতদের একজনের বয়স মাত্র 19 বছর ৷ এই খবর পেয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ইংরেজবাজার ব্লকের কোতওয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৷ খবর পেয়ে দুই মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী ৷ তিনি দুই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ৷ তবে এই ঘটনার পর আরও একবার এই জেলায় কর্মসংস্থানের অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে ৷
মৃত দুই তরুণ হলেন 21 বছরের সুমন ঘোষ ও 19 বছরের সুজয় সরকার ৷ সুমনের বাড়ি কোতওয়ালি অঞ্চলের টিয়োরপাড়া গ্রামে ৷ সুজয় একই অঞ্চলের দৈবকীপুর গ্রামের বাসিন্দা ৷ সপ্তাহ তিনেক আগে তাঁরা বিদ্যুতের টাওয়ার লাগানোর কাজে বেঙ্গালুরু যান ৷ গত পরশু সকালে ট্র্যাক্টরে চেপে তাঁরা আরও কয়েকজনের সঙ্গে কাজে যাচ্ছিলেন ৷ রাস্তা পেরনোর সময় একটি দ্রুতগামী বাস তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা মারে ৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুমন ও সুজয়ের ৷ আহত হন আরও ছ’জন ৷ সবাইকে তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন ৷ ট্র্যাক্টরে থাকা বাকিরাও অল্পবিস্তর আহত হন ৷
মাত্র তিন মাস আগে বিয়ে হয়েছে সুমনের ৷ স্ত্রী দীপিকা এ দিন কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না ৷ সুমনের বাবা মংলা ঘোষও পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ৷ বিছানায় শয্যাশায়ী ৷ পরিবারের পেট চালাতেই ঝুঁকি নিয়ে ভিনরাজ্যে কাজে যান তিনি ৷ স্থানীয় প্রকাশ কর্মকার বলছেন, “সকালে ওরা আটজন মিলে একটি ট্র্যাক্টরে চেপে কর্মস্থলে যাচ্ছিল ৷ রাস্তা পেরনোর সময় একটি অত্যন্ত দ্রুতগতির বাস ট্র্যাক্টরে ধাক্কা মারে ৷ এতে ট্র্যাক্টরের ছ’জন আহত হয় ৷ কিন্তু এই দু’জন ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৷ সুমন মাত্র তিনমাস আগে বিয়ে করেছে ৷ তার মধ্যে এই ঘটনা মানতে পারছি না ৷ আমরা চাই, ওর পরিবারের জন্য সরকারের তরফে কিছু করা হোক ৷”
এ দিকে, সুজয়ের কাকা সাজু সরকার বলেন, “পেটের দায়ে মানুষ কী না কাজ করে ! ভাইপোও পেটের দায়ে বাইরে কাজে গিয়েছিল ৷ সেখানে দুর্ঘটনায় ও মারা গিয়েছে ৷ ট্র্যাক্টরে পোল ভর্তি করা ছিল ৷ সেই পোল ভেঙেই বিপত্তি ৷ আমরা ওর বাড়ির জন্য সরকারের কাছে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চাইছি ৷ বোনের বিয়ের জন্যই ভাইপো ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে ওর বোনের বিয়ে যাতে কোনওভাবেই না আটকায় ৷ এই অবস্থায় আমাদের আর্জি, ওর বোনের বিয়েটা যেন কিছুতেই না আটকায় ৷ তার জন্য সরকার পদক্ষেপ করুক ৷”
শোকাহত দুই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেন, “দুটো ঘটনাই মর্মান্তিক ৷ দুটো তরতাজা প্রাণ চলে গেল ৷ আসলে মালদা আর মুর্শিদাবাদে কোনও কর্মসংস্থান নেই ৷ শিল্প কিংবা অন্যান্য ব্যবস্থাপনাও নেই ৷ তাই এই দুই জেলার লাখ লাখ যুবক বাইরে কাজ করতে যান ৷ এখানে যে দুটো ছেলে মারা গেল, তাদের একজনের বয়স 19 বছর ৷ আরেকজন তিনমাস আগেই বিয়ে করেছে ৷ আজ আমরা এই দু’জনের দেহের জন্য অপেক্ষা করছি ৷ এসব ঘটনার জন্য আমরা এই রাজ্য সরকারকে ধিক্কার জানাই ৷ সারা দেশজুড়ে উন্নয়ন চলছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে ৷ রাজ্যে কাজ না পেয়ে লাখ লাখ শ্রমিক বাইরে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ৷ আমরা এই দুই পরিবারের সঙ্গে অবশ্যই আছি ৷ কিন্তু বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকারের কি কিছুই করার নেই ? কোনও ঘটনা ঘটলে দল বেঁধে আসা হয় ৷ আর কিছু হয় না ৷”
আরও পড়ুন: