মালদা, 24 অগস্ট: আশেপাশের সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে ৷ যে যেখানে পারে আশ্রয় নিয়েছে ৷ প্রায় বাড়ির ভিতে ধাক্কা মারছে গঙ্গা ৷ যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে পাকা বসতবাড়ি ৷ কিন্তু 85 বছরের গুদর মণ্ডলের এক গোঁ, ‘বাড়ি তিনি ছাড়বেন না’ ৷ মরতে হলে বাড়ির সঙ্গে ভরা গঙ্গায় তলিয়ে যাবেন ৷ কিন্তু তিন পুরুষের ভিটে তিনি ছাড়তে পারবেন না ৷’
গুদর মণ্ডল রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের কান্তটোলা গ্রামের বাসিন্দা ৷ যে কান্তটোলায় গত কয়েক বছর ধরেই বারবার হামলা চালিয়েছে গঙ্গা ৷ এখন গ্রামের সামান্য কিছুটা অংশই বেঁচে রয়েছে ৷ এ’বছরই গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন সবাই ৷ অবশ্য শুধু কান্তটোলা নয়, গঙ্গার ছোবলে পাশের শ্রীকান্তটোলাও মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার মুখে ৷ গত বছর থেকে এই দুই গ্রামের মানুষ ভিটে ছেড়ে অজানার পথে যাত্রা শুরু করেছেন ৷ প্রায় একই পরিস্থিতি মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসমহল, ভাষারামটোলা, নয়া বিলাইমারি গ্রামেরও ৷
বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়েছেন ৷ ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারেন না ৷ চৌকিতে শুয়ে মূলত দিন কাটে গুদর মণ্ডলের ৷ ঠিকমতো কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়েছেন ৷ স্ত্রী অমলা মণ্ডল মারা গিয়েছেন বহু বছর আগে ৷ বাড়িতে রয়েছেন ছেলে হেমন্ত মণ্ডল, পুত্রবধূ, দুই নাতি, নাতবউ আর তাঁদের ছেলেমেয়েরা ৷ এই মুহূর্তে গঙ্গা একেবারে গুদরবাবুর বাড়ির পিছনে ৷ ভাঙা জানালার বাইরেই অথৈ জলরাশি ৷ আগেই বেশিরভাগ প্রতিবেশী গ্রাম ছেড়েছেন ৷ হাতে গোনা যে ক’জন এখনও গ্রামে, তাঁরাও ঘরবাড়ি ছাড়ছেন ৷ সবাই তাঁকে বলছেন, সময় থাকতে তিনিও যেন বাড়ির সবাইকে নিয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নেন ৷ কিন্তু তিনি রাজি নন ৷ তাঁর একটাই কথা, এটা তিন পুরুষের ভিটে ৷ তিনি নিজে এই বাড়ি তৈরি করেছেন ৷ নিজের হাতে তৈরি বাড়ি তিনি ভাঙতে পারবেন না ৷ বাড়ির সবাই অন্য কোনও জায়গায় চলে যেতে পারে ৷ তিনি বাধা দেবেন না ৷ কিন্তু তিনি এই বাড়ি নিয়েই মরতে চান ৷
ছেলে হেমন্ত বাড়ির অন্য ঘরগুলি ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলেছেন ৷ কিন্তু বাবার ঘর আর ভাঙতে পারছেন না ৷ কথা বলতে বলতে কান্নায় গলা বুজে আসে হেমন্তর ৷ তিনি বলেন, “গঙ্গার তাণ্ডবে আমাদের গ্রামের অবস্থা খুব শোচনীয় ৷ এই পাড়ার লোকজন সবাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ নদীর জল বাড়ছে, পাড় ভাঙছে ৷ গোটা গ্রামটাই নদীতে চলে গেল ৷ আমার বাড়িতে এখন গঙ্গা ৷ তাই যতটা পারছি, বাড়ি ভাঙছি ৷ বৃদ্ধ বাবা বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না ৷ তিনি নিজের হাতে এই বাড়ি তৈরি করেছেন ৷ তাঁর তিন পুরুষ এই ভিটেতেই বড় হয়েছেন ৷ বাবা বলছেন, এখন তিনি কোথায় থাকবেন ৷ আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা নেই ৷ সরকারকে বলেছিলাম, একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক ৷ কিছু করল না ৷ উলটে মমতাদি বলছেন, তিনি কি গঙ্গার কিনারায় কাউকে বাড়ি তৈরি করতে বলেছিলেন ? এখন আমি পরিবার নিয়ে কোথায় যাব, এখনও ঠিক করতে পারিনি ৷” রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না ৷ তিনি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন ৷