কলকাতা, 2 ফেব্রুয়ারি: নির্বিঘ্নেই শুরু হল এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা ৷ অন্যান্যবারের চেয়ে এবার দু’ঘণ্টার বেশি এগিয়ে এসেছে পরীক্ষা শুরুর সময় ৷ ফলে কোথাও স্কুলের তরফে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হল ৷ আবার কোথাও-কোথাও পুলিশ-প্রশাসন নজরদারি চালালেন যাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা না হয় ৷ পরীক্ষা শুরুর আগে সামগ্রিক পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন স্বয়ং কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল ৷
মাধ্যমিককে ছাত্রজীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয় ৷ কারণ, এই প্রথম স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে অন্য স্কুলে বসে পরীক্ষা দিতে হয় ছাত্রছাত্রীদের ৷ ফলে পরীক্ষা শুরুর আগে পর্যন্ত প্রত্যেক পড়ুয়া থেকে তাদের অভিভাবক, সকলেরই ভয় কাজ করে ৷ তার উপর এবার পরীক্ষার সময় এগিয়ে আনা হয়েছে ৷ অন্যবার বেলা 12টায় পরীক্ষা শুরু হয় ৷ কিন্তু এবার পরীক্ষা শুরু হয়েছে সকাল 9টা 45 মিনিটে ৷
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সকাল সাড়ে আটটার পর থেকেই পড়ুয়ারা পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন ৷ ফলে রাজ্যের 9 লক্ষ পরীক্ষার্থীকেই সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য ৷ কেউ গণপরিবহণ ব্যবহার করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেছে, তো কেউ ভাড়ার গাড়িতে এসেছে ৷ পরীক্ষার ক’দিন তারা এভাবেই আসবে ৷
তবে বঙ্গবাসী স্কুল পড়ুয়াদের জন্যই গাড়ির ব্যবস্থা করেছে ৷ তবে তা করা হয়েছে শুধুমাত্র ছ’জন পরীক্ষার্থীর জন্য ৷ স্কুল সূত্রে খবর, এই ছয় পড়ুয়ার অভিভাবকই শুধুমাত্র গাড়ির জন্য আবেদন করেছিলেন ৷ তাই তাঁদের এই ব্যবস্থা করা হয় ৷ এক অভিভাবক জানালেন, তাঁরা দক্ষিণ 24 পরগনার বামনঘাটা থেকে আসছেন ৷ এই সময় বাস বা অন্য গণপরিবণে ভিড় থাকে ৷ ফলে পরীক্ষা কেন্দ্র কলেজ স্ট্রিটের হিন্দু স্কুল পর্যন্ত পৌঁছানো খুবই কঠিন ৷ তাই স্কুলের কাছে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আবেদন করা হয় ৷ স্কুল সেই ব্যবস্থা করে দেয় ৷ তবে গাড়ির ভাড়া অভিভাবকরাই দিচ্ছেন ৷
শুক্রবার দু’জন অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে ওই গাড়ি যথাসময়ে হিন্দু স্কুলের সামনে পৌঁছে যায় । পরে সেখানে হাজির হন অন্য অভিভাবকরা ৷ পরীক্ষার ক’দিন তাঁরা এই গাড়িতেই যাতায়াত করবেন ৷ এক অভিভাবক বলেন, ‘‘টাকা দিতে হলও আমাদের বাচ্চারা ঠিকমতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পেরেছে এটাতেই শান্তি ।"
অন্যদিকে কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল বেশ কয়েকটি স্কুলে পরীক্ষা শুরুর আগে যান ৷ পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ৷ প্রথমে শরৎ বোস রোডের পদ্মপুকুর ইনস্টিটিউশন, সেখান থেকে যান ইউনাইটেড মিশনারি গার্লস হাইস্কুলে । তিনি পরীক্ষা কেন্দ্র ঘুরে দেখেন । কথা বলেন সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা থেকে শিক্ষকদের সঙ্গে । পরীক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন । তাদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসার জন্য শুভেচ্ছা ও উৎসাহ জানান ।
কলকাতার নগরপাল বিনীত কুমার গোয়েল বলেন, ‘‘আমি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছি । তাদের সঙ্গে কথা বলেছি । তাদের জন্য অনেক শুভেচ্ছা । তাদের পরীক্ষা ভালো হোক । আমি আশা করছি খুব ভালো পরীক্ষা হবে । পরীক্ষা ঘিরে কোনও জায়গায় কোনও সমস্যা নেই । রাস্তা ঘাটে যানজটের কোনও সমস্যা হয়নি ।’’
এছাড়া কলকাতায় যাতে কোনও ধরনের অভিযোগ বা সমস্যা ঘটনা না ঘটে, সেদিকে কড়া নজর রাখছে কলকাতা পুলিশ । নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে পুলিশের তরফে । পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তা শুধু নয়, যাতে রাস্তায় যানবাহনের গতি ঠিক থাকে, পরীক্ষার শুরুর সময় বা শেষে ফেরার পথে সমস্যার মুখে না পড়তে হয় পরীক্ষার্থীদের, সেই বিষয়েও খেয়াল রাখছে পুলিশ ।
উল্লেখ্য, এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা ঘিরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । প্রশ্নপত্রের ছবি তোলার মতো ঘটনা ঘটলে পরীক্ষা বাতিলের মতো পদক্ষেপ করা হবে । এছাড়া কোনও ধাতব জিনিস, এমনকি জলের বোতল ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষার ঘরে প্রবেশ নিষেধ । পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে করতে সব দিকে নজর রাখছে পর্ষদ ও পুলিশ ।
এই বছর মাধ্যমিকে বসেছে 9 লক্ষ 23 হাজার পরীক্ষার্থী ৷ পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা 2 হাজার 675 ৷ কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর,পরীক্ষার দিনগুলিতে শহরে সকাল 6টা থেকে বেলা 12টা পর্যন্ত পণ্যবাহী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে । তবে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়িগুলিকে সকাল 8টা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে । পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনের রাস্তাগুলিতে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে ।
আরও পড়ুন: