ETV Bharat / state

আগুনে পুড়ে ছাই পরিচয়পত্র, ভোট দিতে পারবেন কি 'সর্বহারা'র দল? - LOK SABHA ELECTION 2024 - LOK SABHA ELECTION 2024

3rd Phase Election: মঙ্গলে মালদায় ভোট ৷ তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়েছেন ৷ সমস্ত নথি, পরিচয় পত্র পুড়ে ছাই ৷ প্রশ্ন একটাই, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন তো?

3rd Phase Election
মঙ্গলে মালদায় ভোট (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 6, 2024, 10:08 PM IST

অগ্নিকাণ্ডে ছাই পরিচয় পত্র (নিজস্ব প্রতিনিধি)

মালদা, 6 মে: ভোট আসে, ভোট যায় ৷ তবে যে তিমিরে জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলেন রয়ে গিয়েছেন সেই তিমিরেই ৷ তা-ও আশা ছাড়েননি ৷ আগুনে সবকিছু পুড়ে গিয়েছে ৷ ছাই হয়ে গিয়েছে ভোটার কার্ড-আধার কার্ড-সহ অন্যান্য নথিও ৷ কিন্তু, নাম রয়েছে ভোটার তালিকায় ৷ মঙ্গলে রাজ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে তাই রতুয়া-১ নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর বাঁধ সংলগ্ন প্রায় 70টি পরিবারের সদস্যরা যাবেন ভোট দিতে ৷ ভোট দেবেন ভালো দিনের আশায় ৷ তবে যদি নির্বাচন আধিকারিকরাও ফিরিয়ে দেন, তাহলেই বা কী করতে পারেন?

আগুনে সব হারানো মনোজকুমার মণ্ডল বলেন, "জঞ্জালিটোলায় বাড়ি ছিল ৷ নদীর ভাঙনে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি ৷ সেটাও 11 বছর হয়ে গেল ৷ এখানে আমরা প্রায় 200 ঘর আছি ৷ বুধবারের আগুনে 50-60টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ৷ ভাঙনে ঘর হারানোর পর সরকারি পুনর্বাসনের জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৷ এখনও সেই জমি দেয়নি ৷ ভোটের মুখে নেতারা আসছেন, কত কথা বলছেন, কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই ৷ আগুনে আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ সব নথি পুড়ে গিয়েছে ৷ তবু ভোট দিতে যাব ৷ ভোট দিতে দিলে দেবে, নইলে ফিরে আসব ৷"

গ্রামবাসী দুলিলাল মণ্ডল জানান, গঙ্গার ভাঙনে ভিটেহারা হয়ে এখানে এসেছিলাম ৷ এখানে আগুনে সর্বস্বান্ত হলাম ৷ কিছু বাঁচেনি ৷ নথি ছাড়াই ভোট দিতে যাব ৷ দিতে দিলে দেবে, নইলে ফিরে আসব ৷ 2013 সাল থেকে সরকারি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি ৷ প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব হয়নি ৷ নেতারা আসছেন, হবে হবে করে চলে যাচ্ছেন ৷ কিন্তু কবে হবে, কেউ বলতে পারছেন না ৷ পলিথিন পেয়েছি, দু’বেলা খাবারও দিচ্ছে কিন্তু ঝড় আসলেই এই পলিথিন উড়ে যাবে ৷ সরকারের উপরও আর আমাদের ভরসা নেই ৷ ভোট শেষ মানে রাজনীতি শেষ ৷ আমাদের যা হওয়ার হয়ে গেল ৷ আর কিছু হওয়ার নেই ৷ এই বিষয়ে রতুয়া-1 ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পোকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি ৷

গত বুধবার অর্থাৎ পয়লা মে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বলরামপুরে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় 70টি বাড়ি ৷ ঘরে থাকা দানাপানি, টাকা-পয়সা কিংবা আসবাবপত্র তো বটেই, ছাই হয়ে গিয়েছে ভোটার, আধার কার্ড-সহ সমস্ত নথি ৷ আগুনে পুড়ে মারা যান 71 বছরের বীণাপাণি মণ্ডল ৷ আগুনের খবর পেয়ে ভোটের মুখে ওই গ্রাম হয়ে উঠেছিল রাজনীতির আঙিনা ৷ কে আগে দুর্ভাগাদের কাছে পৌঁছোতে পারবেন, পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সহমর্মিতার ভোট নিজের ঝুলিতে পুরতে পারবেন, তা নিয়ে প্রধান তিন দলের প্রার্থীর মধ্যে যেন অলিম্পিকের দৌড় প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল ৷ ইভিএমের বোতামে সরকারে থাকা দলের গায়ে যেন এই ঘটনার কোনও আঁচ না লাগে, তার জন্য সতর্ক ছিল প্রশাসনও ৷ যখন বন্যা কিংবা অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ পৌঁছোতে দেখা যায় কচ্ছপের চাল, তখন রকেট গতিতে বলরামপুরে পৌঁছে গিয়েছিল সরকারি সহায়তা ৷

সেদিনের আগুনে যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই একসময় ওই পঞ্চায়েতেরই জঞ্জালিটোলা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ৷ 2013 সালেই গঙ্গা গিলে নিয়েছে গোটা গ্রামকে ৷ গ্রামের প্রায় আড়াইশো পরিবার বিভিন্ন দিকে ছিটকে যায় ৷ তবে প্রায় 200 পরিবার বলরামপুর বাঁধের নীচেই আশ্রয় নিয়েছিল ৷ বুধবার সেই ‘উদ্বাস্তু কলোনির’ বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডলের বাড়িতে প্রথম আগুন লেগেছিল ৷ কয়েক ঘণ্টার আগুন খাক করে দেয় গোটা বস্তিকে ৷ বিপর্যস্ত এই মানুষগুলো আগুনে নথি খুইয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন কি না, সেটাই দেখার ৷

আরও পড়ুন

1. ভোটের আগে মুর্শিদাবাদের দু'জায়গা থেকে উদ্ধার প্রচুর তাজা বোমা, আতঙ্ক এলাকায়

2. তৃতীয় দফায় বাংলার 4 কেন্দ্রে ভোট, নিরাপত্তায় 406 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী

3. লোকসভা নির্বাচনে একটা আসন বেশি হলেই এগিয়ে আসবে বিধানসভা নির্বাচন: সুকান্ত মজুমদার

অগ্নিকাণ্ডে ছাই পরিচয় পত্র (নিজস্ব প্রতিনিধি)

মালদা, 6 মে: ভোট আসে, ভোট যায় ৷ তবে যে তিমিরে জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলেন রয়ে গিয়েছেন সেই তিমিরেই ৷ তা-ও আশা ছাড়েননি ৷ আগুনে সবকিছু পুড়ে গিয়েছে ৷ ছাই হয়ে গিয়েছে ভোটার কার্ড-আধার কার্ড-সহ অন্যান্য নথিও ৷ কিন্তু, নাম রয়েছে ভোটার তালিকায় ৷ মঙ্গলে রাজ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে তাই রতুয়া-১ নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর বাঁধ সংলগ্ন প্রায় 70টি পরিবারের সদস্যরা যাবেন ভোট দিতে ৷ ভোট দেবেন ভালো দিনের আশায় ৷ তবে যদি নির্বাচন আধিকারিকরাও ফিরিয়ে দেন, তাহলেই বা কী করতে পারেন?

আগুনে সব হারানো মনোজকুমার মণ্ডল বলেন, "জঞ্জালিটোলায় বাড়ি ছিল ৷ নদীর ভাঙনে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি ৷ সেটাও 11 বছর হয়ে গেল ৷ এখানে আমরা প্রায় 200 ঘর আছি ৷ বুধবারের আগুনে 50-60টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ৷ ভাঙনে ঘর হারানোর পর সরকারি পুনর্বাসনের জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৷ এখনও সেই জমি দেয়নি ৷ ভোটের মুখে নেতারা আসছেন, কত কথা বলছেন, কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই ৷ আগুনে আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ সব নথি পুড়ে গিয়েছে ৷ তবু ভোট দিতে যাব ৷ ভোট দিতে দিলে দেবে, নইলে ফিরে আসব ৷"

গ্রামবাসী দুলিলাল মণ্ডল জানান, গঙ্গার ভাঙনে ভিটেহারা হয়ে এখানে এসেছিলাম ৷ এখানে আগুনে সর্বস্বান্ত হলাম ৷ কিছু বাঁচেনি ৷ নথি ছাড়াই ভোট দিতে যাব ৷ দিতে দিলে দেবে, নইলে ফিরে আসব ৷ 2013 সাল থেকে সরকারি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি ৷ প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব হয়নি ৷ নেতারা আসছেন, হবে হবে করে চলে যাচ্ছেন ৷ কিন্তু কবে হবে, কেউ বলতে পারছেন না ৷ পলিথিন পেয়েছি, দু’বেলা খাবারও দিচ্ছে কিন্তু ঝড় আসলেই এই পলিথিন উড়ে যাবে ৷ সরকারের উপরও আর আমাদের ভরসা নেই ৷ ভোট শেষ মানে রাজনীতি শেষ ৷ আমাদের যা হওয়ার হয়ে গেল ৷ আর কিছু হওয়ার নেই ৷ এই বিষয়ে রতুয়া-1 ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পোকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি ৷

গত বুধবার অর্থাৎ পয়লা মে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বলরামপুরে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় 70টি বাড়ি ৷ ঘরে থাকা দানাপানি, টাকা-পয়সা কিংবা আসবাবপত্র তো বটেই, ছাই হয়ে গিয়েছে ভোটার, আধার কার্ড-সহ সমস্ত নথি ৷ আগুনে পুড়ে মারা যান 71 বছরের বীণাপাণি মণ্ডল ৷ আগুনের খবর পেয়ে ভোটের মুখে ওই গ্রাম হয়ে উঠেছিল রাজনীতির আঙিনা ৷ কে আগে দুর্ভাগাদের কাছে পৌঁছোতে পারবেন, পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সহমর্মিতার ভোট নিজের ঝুলিতে পুরতে পারবেন, তা নিয়ে প্রধান তিন দলের প্রার্থীর মধ্যে যেন অলিম্পিকের দৌড় প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল ৷ ইভিএমের বোতামে সরকারে থাকা দলের গায়ে যেন এই ঘটনার কোনও আঁচ না লাগে, তার জন্য সতর্ক ছিল প্রশাসনও ৷ যখন বন্যা কিংবা অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ পৌঁছোতে দেখা যায় কচ্ছপের চাল, তখন রকেট গতিতে বলরামপুরে পৌঁছে গিয়েছিল সরকারি সহায়তা ৷

সেদিনের আগুনে যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই একসময় ওই পঞ্চায়েতেরই জঞ্জালিটোলা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ৷ 2013 সালেই গঙ্গা গিলে নিয়েছে গোটা গ্রামকে ৷ গ্রামের প্রায় আড়াইশো পরিবার বিভিন্ন দিকে ছিটকে যায় ৷ তবে প্রায় 200 পরিবার বলরামপুর বাঁধের নীচেই আশ্রয় নিয়েছিল ৷ বুধবার সেই ‘উদ্বাস্তু কলোনির’ বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডলের বাড়িতে প্রথম আগুন লেগেছিল ৷ কয়েক ঘণ্টার আগুন খাক করে দেয় গোটা বস্তিকে ৷ বিপর্যস্ত এই মানুষগুলো আগুনে নথি খুইয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন কি না, সেটাই দেখার ৷

আরও পড়ুন

1. ভোটের আগে মুর্শিদাবাদের দু'জায়গা থেকে উদ্ধার প্রচুর তাজা বোমা, আতঙ্ক এলাকায়

2. তৃতীয় দফায় বাংলার 4 কেন্দ্রে ভোট, নিরাপত্তায় 406 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী

3. লোকসভা নির্বাচনে একটা আসন বেশি হলেই এগিয়ে আসবে বিধানসভা নির্বাচন: সুকান্ত মজুমদার

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.