সন্দেশখালি, 9 ফেব্রুয়ারি: উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালির পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে এগোচ্ছে । শুক্রবারও অগ্নিসংযোগের ঘটনা থেকে বাদ গেল না সন্দেশখালি । ত্রিমোহনী এলাকার পর এবার জেলিয়াখালি । এবারও শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরার তিনটি পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দিলেন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা । ফলে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে পোল্ট্রি ফার্মগুলো । ঘটনার জেরে শুক্রবার আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি অঞ্চল ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছে পুলিশের বিশাল বাহিনী । তবে, এখনও সেখানে ঢুকতে পারেনি দমকল । কারণ, ভেড়ি অধ্যুষিত সেই এলাকা ঘিরে রেখেছেন গ্রামের মহিলারা । ফলে, পরিস্থিতি কোন জায়গায় পৌঁছয়, সেটাই এখন দেখার বিষয় ।
ঘটনার সূত্রপাত, রাতের অন্ধকারে জেলিয়াখালিতে নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর শাহজাহান বাহিনীর হামলা ঘিরে । অভিযোগ, কয়েকজন গ্রামবাসীকে মারধরের পাশাপাশি গ্রামের এক পড়ুয়াকে নিগৃহীত করেন বহিরাগত দুষ্কৃতিরা । এদের পিছনে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদারের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের । তারই জেরে শুক্রবার সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা । এরপরই গ্রামের মহিলারা একত্রিত হয়ে জেলিয়াখালির ভেড়ি এলাকায় তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরার পরপর তিনটি পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেন । ভাঙচুর করা হয় পাশের কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্মেও । পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে । কিভাবে সেই পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ-প্রশাসন, সেদিকেই এখন তাকিয়ে সকলে ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই পরিস্থিতি হওয়ার পিছনে দায়ী একমাত্র পুলিশ-প্রশাসনই । কারণ, যদি তারা সঠিক সময়ে শাহজাহান এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিত, গ্রামবাসীরাদের ক্ষোভের আগুন এতটা তীব্র হত না । কিন্তু, সেসব না করে উলটে শাহজাহান ও তাঁর দলবলের বেআইনি যাবতীয় কাজে প্রশয় দিয়ে গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনেরই একাংশ । যার ফলস্বরূপ, গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে একটানা তিনদিন ধরে জ্বলছে শাসকের শক্তঘাঁটি সন্দেশখালি ।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে চিন্তিত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ সামনেই লোকসভা নির্বাচন৷ সেই ভোটে এই জনরোষের প্রভাব পড়বে কি না, সেটাই চিন্তায় রেখেছে শাসক দলকে ৷ তৃণমূলের অভিযোগ, এই জনরোষে ইন্ধন দিচ্ছে বিরোধীরা ৷ যদিও এর পিছনে রাজনীতি নেই বলেই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ সম্প্রতি দুষ্কৃতিদের হাতে আক্রান্ত হওয়া দম্পতি শম্ভু সিংহ ও কৃষ্ণা সিংহের কথায়, "শাহজাহান ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সরদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধেই গ্রামের মানুষ এখন জোটবদ্ধ হয়েছে । পুলিশ এদের না ধরে উলটে গ্রামবাসীদেরই মিথ্যা মামলার ফাঁসাচ্ছে । তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার না করা হলে কখনোই সন্দেশখালি শান্ত হবে না ৷"
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কারও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি ৷ তবে গ্রামবাসীদের আন্দোলন রুখতে সন্দেশখালি থানা চত্বরে 144 ধারা জারি করা হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে ।
আরও পড়ুন: