ETV Bharat / state

নেই স্বস্তি! মালদায় ফের বজ্রপাতের আশঙ্কা; সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা - lightning in Malda

Reason Behind Frequent Lightning: প্রকৃতির রোষে বৃহস্পতিবার মালদায় মৃত্যু হয়েছে 11 জনের ৷ ঘটনায় উদ্বিগ্ন আবহাওয়াবিদরাও ৷ মালদাতেই কেন বারবার এই ঘটনা ঘটছে? আবারও কী বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে? বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত।

Reason Behind Frequent Lightning
মালদায় ফের বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা! (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 17, 2024, 8:39 PM IST

Updated : May 17, 2024, 9:01 PM IST

মালদা ঘিরে নয়া আশঙ্কা (ইটিভি ভারত)

মালদা, 17 মে: প্রকৃতির রোষে প্রাণ গিয়েছে 11 জনের । সামান্য সময়ের মধ্যে এতগুলি মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনকে ৷ সকলেই জানতে চান এমন ঘটনা আর ঘটবে কি না। প্রকৃতির রোষানলে আবার পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে জেলার। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, কয়েকদিন পর ফের এমন ঘটনা ঘটতেই পারে এই জেলায় ৷ তার মূল কারণ দূষণ ৷ কিন্তু কেন শুধুই মালদা? কেন আশেপাশের জেলায় এমন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেনি?

এর মূল কারণ হিসেবে বজ্রগর্ভ মেঘের সঙ্গে দূষণের গভীর সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিজিৎ দাস ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "এপ্রিল ও মে মাসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী সৃষ্টির আদর্শ পরিবেশ থাকে ৷ কালবৈশাখী বলতে আমরা ঘণ্টাখানেক ঝড় ও বৃষ্টিকেই বুঝি ৷ তারপর ফের আবহাওয়া আগের মতো হয়ে যায় ৷ এখন ঝড় ও বৃষ্টির পরিমাণ আগের মতো না হলেও বজ্রপাতের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে ৷ আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে ৷ বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছে ৷ এর জন্য দায়ী মানুষের খামখেয়ালি আচরণ ৷"

তিনি আরও বলেন, "বজ্রপাতের পিছনে দূষণ অন্যতম কারণ ৷ শহর ও তার আশাপাশের এলাকায় যানবাহন থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাউড এবং সালফার ডাই অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় ৷ শুধু তাই নয়, নির্মাণ কাজ থেকে বেরোনো ধুলিকণাও দূষণের কারণ ৷ একে বলা হয় সাসপেন্ডেড পার্টিকুলার ম্যাটারস ৷ পিএম 2.5 এবং পিএম 10 ৷ এর সঙ্গে যখন বিভিন্ন দূষিত গ্যাস মেশে তখন বাতাসের তাপ গ্রহণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় ৷ এই পরিস্থিতিতে কোনও কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে বজ্রগর্ভ অর্থাৎ কিউমিউলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয় ৷ এই ঘটনাটা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হামেশাই ঘটছে ৷"

অধ্যাপক অরিজিৎ আরও জানান, এই কিউমিউলোনিম্বাস মেঘ থেকে ঝড় ও বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও বজ্রপাত বেড়ে যায় ৷ যেহেতু দূষণ অনিয়ন্ত্রিত, তাই এই পরিস্থিতি কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না ৷ এই দূষণ বৃদ্ধিতে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারও সহায়তা করে ৷ মালদা জেলায় বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেশি ৷ মালদার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ আরও কিছু এলাকায় এই ঘটনা ঘটছে ৷ এতে প্রাণহানির আশঙ্কাও বাড়ছে ৷ মালদার বাতাসে দূষণ কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। আগামী 7 থেকে 15 দিনের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে ৷"

আবহাওয়া দফতরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা ড. গোপীনাথ রাহা বলেন, "এবার মালদা জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি হয়নি ৷ বেশিদিন বৃষ্টি না হলেই এই সমস্যা দেখা দেয় ৷ মালদায় গরমের মাত্রা অনেক বেশি ছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে যখনই জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে, বাতাসে একটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ৷ প্রথমত, বেশি তাপমাত্রা এবং দ্বিতীয়ত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, এই দুটি বিষয়ের উপরেই বাতাসে অস্থিরতা কতটা তৈরি হবে, তা নির্ভর করে ৷ দীর্ঘদিন ধরে মালদায় বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসের অস্থিরতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এখন জলীয় বাষ্প ঢুকতেই সেখানে উলম্বভাবে দীর্ঘ উচ্চতাসম্পন্ন বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছে ৷ এতে বাজের মারণ ক্ষমতাও বেড়েছে ৷" ইতিমধ্যেই, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন, মালদার ঘটনা চিন্তার বিষয় ৷ পুরো বিষয়টি পর্যালোচনায় রয়েছে ৷ কারণ অনুসন্ধানের জন্য নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৷

আরও পড়ুন

  1. দূষণ থেকেই বাড়ছে বজ্রপাত, মালদায় 12 জনের মৃত্যুতে চিন্তিত আবহবিদরা
  2. বজ্রপাতের সতর্কতা, পারদ চড়লেও আশা জাগাচ্ছে বর্ষার আগমনবার্তা
  3. মালদায় বজ্রপাতে মৃত 12, শোক প্রকাশ মমতার

মালদা ঘিরে নয়া আশঙ্কা (ইটিভি ভারত)

মালদা, 17 মে: প্রকৃতির রোষে প্রাণ গিয়েছে 11 জনের । সামান্য সময়ের মধ্যে এতগুলি মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনকে ৷ সকলেই জানতে চান এমন ঘটনা আর ঘটবে কি না। প্রকৃতির রোষানলে আবার পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে জেলার। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, কয়েকদিন পর ফের এমন ঘটনা ঘটতেই পারে এই জেলায় ৷ তার মূল কারণ দূষণ ৷ কিন্তু কেন শুধুই মালদা? কেন আশেপাশের জেলায় এমন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেনি?

এর মূল কারণ হিসেবে বজ্রগর্ভ মেঘের সঙ্গে দূষণের গভীর সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিজিৎ দাস ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "এপ্রিল ও মে মাসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী সৃষ্টির আদর্শ পরিবেশ থাকে ৷ কালবৈশাখী বলতে আমরা ঘণ্টাখানেক ঝড় ও বৃষ্টিকেই বুঝি ৷ তারপর ফের আবহাওয়া আগের মতো হয়ে যায় ৷ এখন ঝড় ও বৃষ্টির পরিমাণ আগের মতো না হলেও বজ্রপাতের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে ৷ আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে ৷ বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছে ৷ এর জন্য দায়ী মানুষের খামখেয়ালি আচরণ ৷"

তিনি আরও বলেন, "বজ্রপাতের পিছনে দূষণ অন্যতম কারণ ৷ শহর ও তার আশাপাশের এলাকায় যানবাহন থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাউড এবং সালফার ডাই অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় ৷ শুধু তাই নয়, নির্মাণ কাজ থেকে বেরোনো ধুলিকণাও দূষণের কারণ ৷ একে বলা হয় সাসপেন্ডেড পার্টিকুলার ম্যাটারস ৷ পিএম 2.5 এবং পিএম 10 ৷ এর সঙ্গে যখন বিভিন্ন দূষিত গ্যাস মেশে তখন বাতাসের তাপ গ্রহণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় ৷ এই পরিস্থিতিতে কোনও কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে বজ্রগর্ভ অর্থাৎ কিউমিউলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয় ৷ এই ঘটনাটা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হামেশাই ঘটছে ৷"

অধ্যাপক অরিজিৎ আরও জানান, এই কিউমিউলোনিম্বাস মেঘ থেকে ঝড় ও বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও বজ্রপাত বেড়ে যায় ৷ যেহেতু দূষণ অনিয়ন্ত্রিত, তাই এই পরিস্থিতি কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না ৷ এই দূষণ বৃদ্ধিতে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারও সহায়তা করে ৷ মালদা জেলায় বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেশি ৷ মালদার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ আরও কিছু এলাকায় এই ঘটনা ঘটছে ৷ এতে প্রাণহানির আশঙ্কাও বাড়ছে ৷ মালদার বাতাসে দূষণ কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। আগামী 7 থেকে 15 দিনের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে ৷"

আবহাওয়া দফতরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা ড. গোপীনাথ রাহা বলেন, "এবার মালদা জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি হয়নি ৷ বেশিদিন বৃষ্টি না হলেই এই সমস্যা দেখা দেয় ৷ মালদায় গরমের মাত্রা অনেক বেশি ছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে যখনই জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে, বাতাসে একটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ৷ প্রথমত, বেশি তাপমাত্রা এবং দ্বিতীয়ত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, এই দুটি বিষয়ের উপরেই বাতাসে অস্থিরতা কতটা তৈরি হবে, তা নির্ভর করে ৷ দীর্ঘদিন ধরে মালদায় বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসের অস্থিরতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এখন জলীয় বাষ্প ঢুকতেই সেখানে উলম্বভাবে দীর্ঘ উচ্চতাসম্পন্ন বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছে ৷ এতে বাজের মারণ ক্ষমতাও বেড়েছে ৷" ইতিমধ্যেই, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন, মালদার ঘটনা চিন্তার বিষয় ৷ পুরো বিষয়টি পর্যালোচনায় রয়েছে ৷ কারণ অনুসন্ধানের জন্য নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৷

আরও পড়ুন

  1. দূষণ থেকেই বাড়ছে বজ্রপাত, মালদায় 12 জনের মৃত্যুতে চিন্তিত আবহবিদরা
  2. বজ্রপাতের সতর্কতা, পারদ চড়লেও আশা জাগাচ্ছে বর্ষার আগমনবার্তা
  3. মালদায় বজ্রপাতে মৃত 12, শোক প্রকাশ মমতার
Last Updated : May 17, 2024, 9:01 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.