বর্ধমান ও কাঁকসা, 3 অগস্ট: বৃষ্টির জন্য প্রহর গুনছিলেন কৃষকরা ৷ কিন্তু সেই বৃষ্টির জলেই যে সব শেষ হয়ে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তাঁরা। এক রাতের বৃষ্টিতেই ফুঁসছে অজয় নদ ৷ জল বাড়ছে টুমনিতেও। জলমগ্ন হাজার হাজার বিঘা চাষের জমি। নষ্ট বিঘার পর বিঘা কুমড়ো, পটল, বেগুন, উচ্ছে-সহ বিভিন্ন সবজি। একাধিক ইটভাটাও জলমগ্ন। ধানের বীজও চলে গিয়েছে ভেসে।
কাঁকসার মলানদিঘীর বিষ্ণুপুর আর বিদবিহারের প্রায় 10টি গ্রামের চাষীরা এইসব সবজি চাষ করে থাকেন। এই সবজির যোগান দেন দুর্গাপুরের বিভিন্ন সবজির বাজারে আর হাটে। বুধবার রাত থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে জল বেড়েছে অজয় আর টুমনিতে। সেই জলেই শেষ হয়ে গেল সব। চরম ক্ষতির মুখে কয়েক হাজার কৃষক। দুই কৃষক মধুসূদন ঘোষ ও দিলীপ মল্লিকরা জানাচ্ছেন, আমাদের কুমড়ো, পটল, বেগুন, উচ্ছে হচ্ছিল জমিতে। বিক্রিও শুরু করেছিলাম। সেই সবই আজ বন্যায় নষ্ট হয়ে গেল। ধান চাষের জমিতে বীজ রোপনের আগেই ধানের বীজও নষ্ট হয়ে গেল। এখন যে কী ক্ষতি হল আমাদের তা বলেও বোঝাতে পারব না। সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না করলে আমাদের অথৈ জলে পড়ে থাকতে হবে।"
ইটভাটা মালিকরাও জানাচ্ছেন, এই জলে তাঁদেরও চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকার কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শ্রমিকদের থাকার অনেক বাড়িও জলের তলায় চলে গিয়েছে। দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রতিটি জায়গায় নজরদারি চালাচ্ছে। বহু মানুষকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। কোনও মানুষের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সে সব দিকেও নজরদারি চলছে।"
একই ছবি দেখা গিয়েছে, বর্ধমানেও ৷ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকগুলির মধ্যে বর্ধমান 1, বর্ধমান 2, কাটোয়া, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম, রায়না, জামালপুর কালনা, কাটোয়া, গুসকরা এলাকার বহু জায়গা জলের তলায় চলে গিয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টি থামার পরে জল নামতে শুরু করে। তবে জমিগুলো জলের তলায় চলে গিয়েছে। অজয় নদীর জলে কাটোয়া এলাকায় ও কুনুর নদীর জলে গুসকরা এলাকা প্লাবিত হয়।
কালনা এলাকায় কালনা, পূর্বস্থলী 1, পূর্বস্থলী 2, মন্তেশ্বর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ জমি জলের তলায় চলে যায়। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, "বৃষ্টি থেমেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমিতে জল জমে গিয়েছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে জল ছাড়া বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারের বেশি মানুষকে ফ্লাড সেন্টারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।" জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল বলেন, "টানা বৃষ্টির জেরে জমিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় 37 শতাংশ জমিতে বীজ রোপন করা হয়ে গেছে। সেই জল দ্রুত নেমে গেলে চাষের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।"