কলকাতা, 22 সেপ্টেম্বর: শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ও বাতাসে আগমনীর সুর ৷ অর্থাৎ, দশভুজার আরাধনার সময় ৷ এই মুহূর্তে প্রতিমা পাড়া কুমোরটুলিতে শুধু কর্মব্যস্ততা নয় ৷ উপচে পড়ে ফটোগ্রাফারদের ভিড় ৷ দুর্গা প্রতিমা তৈরির বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায় ৷ উৎসবের আগে প্রতিমা পাড়ায় এক অন্য উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয় ৷ তবে, সম্প্রতি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার প্রভাব পড়েছে এবারের সেই অন্য উৎসবে ৷ মানুষজন আসছেন, ছবি তুলছেন ৷ কিন্তু, ডি-এসএলআর হাতে ফটোগ্রাফারদের ভিড় কার্যত উধাও পটুয়াপাড়ায় ৷
বিশেষত, রবিবার ছুটির দিনে তিলধারণের জায়গা থাকে না কুমোরটুলির গলিতে ৷ সেই তুলনায় এদিন তেমন একটা ভিড় দেখা গেল না ৷ আর যে ক’জন এসেছিলেন, তাঁদের ফোটশুটে দেখা গেল আরজি করের প্রতিবাদ ৷ একরত্তি মেয়েকে মা দুর্গার আঙ্গিকে সাজানো হয়েছিল ৷ পরনে ছিল লাল পাড়ের শাড়ি ও হাতে ছিল পদ্ম ৷ আর কপালে ও গায়ে চন্দনের কলকা, মাথায় পটচুল ৷ আর তার ছবি তোলা হচ্ছিল মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ৷ কখনও বড় দুর্গা প্রতিমার পায়ের সামনে বসিয়ে, তো কখনও ছোট্ট একচালা ঠাকুরের পাশে ৷
এসবের মধ্যেই একরত্তির হাতে দেখা গেল একটি পোস্টার ৷ সেখানে লেখা, 'মা বিচার চাই ৷ তবে, নতুন জামা পরব' ৷ আরজি করের প্রতিবাদের এই পোস্টার নজরে আসতেই, একঝাঁক চিত্রগ্রাহকের ভিড় জমল খুদের সামনে ৷ সকলের ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, 'প্রতিবাদের ফটোশুটে' ৷ ফটোশুটের জেরে প্রতিবার জেরবার হন শিল্পীরা ৷ প্রতিমা তৈরি করতে সমস্যা হয় তাঁদের ৷ লোকজনের ভিড়, প্রতিমার সামনে ছবি তোলা-সহ নানান ঝক্কি সামলে কাজ করতে হয় ৷
তাই বিগত কয়েক বছর ধরে শিল্পীরা সমিতির মাধ্যমে টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন ৷ কিন্তু, তাতেও লাগাম ছবি তোলার হিড়িকে লাগান পরানো যায়নি ৷ উলটে টিকিট কেটেই ঝাঁকে-ঝাঁকে মডেল ও চিত্রগ্রাহকরা আসছেন ৷ মরশুমের টিকিট 100 টাকা, আর সাপ্তাহিক টিকিট 50 টাকা ৷ তবে, আরজি কর-কাণ্ড সেই ব্যবস্থাতেও প্রভাব ফেলেছে এবছর ৷
কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির কোষাধক্ষ্য সুজিত পাল জানিয়েছেন, "গতবছর ঠিক এই সময় প্রতিদিন 15000 টাকার অনুদান হয়েছে টিকিট বিক্রি করে ৷ দিনে 600-700, কোনও দিন হাজার লোক টিকিট কাটতো ৷ এবছর সবে দিন দুই হল এমন লোকজনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে ৷ তবে, ছুটির দিনেও সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কম ৷ রবিবারে আড়াইশো থেকে তিনশোজন টিকিট কেটেছেন ৷ এই ক’দিনে গড়ে ধরলে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা টিকিট বাবদ এসেছে ৷"