কৃষ্ণনগর, 10 মে: আগামী 13 মে চতুর্থ দফার ভোটে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের ভোটাররা নিজেদের রায় ইভিএম বন্দি করবেন ৷ এবার সেখানে দ্বিতীয়বার জয়ের লক্ষ্যে লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র ৷ যিনি 2019 সালে এই কেন্দ্র থেকে প্রথমবার জিতেছিলেন ৷
2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্র 63 হাজার 218 ভোটে জিতেছিলেন ৷ তিনি পেয়েছিলেন 6 লক্ষ 14 হাজার 882 ভোট ৷ তাঁর নিকটতম প্রার্থী বিজেপির কল্যাণ চৌবে 5 লক্ষ 51 হাজার 654 ভোট পেয়েছিলেন ৷ সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা'র প্রাপ্য ভোট ছিল 1 লক্ষ 20 হাজার 222 । কংগ্রেস প্রার্থী ইন্তাজ আলি শাহ পেয়েছিলেন 38 হাজার 305 ।
ভোটে জেতার পরবর্তী সময়ে মহুয়া মৈত্রকে বারবার সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও তিনি বহুবার সরাসরি আক্রমণ করেছেন ৷ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে ৷ লোকসভার এথিক্স কমিটির সুপারিশে তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয় কয়েকমাস আগে ৷ এখনও সিবিআই তদন্ত চলছে ওই ঘটনা নিয়ে ৷
যদিও ওই ঘটনার প্রভাব যে কৃষ্ণনগরের ভোটে পড়বে না, তা মহুয়া মৈত্রের বক্তব্যেই স্পষ্ট ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি জেতার বিষয়ে 200 শতাংশ আশাবাদী । গত পাঁচ বছরে আমি প্রায় 99 শতাংশ কাজ করেছি । সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি । বিরোধীরা বিরোধীদের মতো প্রচার করুক । কিন্তু সবশেষে মানুষ তো ভোট দেবে । আমি পুনরায় জয়লাভ করব । আমার এই লোকসভা কেন্দ্রে 81টা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং একটি মাত্র পৌরসভা রয়েছে । আমি প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি । যাতে সাধারণ মানুষ না বলতে পারে প্রার্থী আমাদের এলাকায় এলেন না ।’’
মহুয়ার বিরুদ্ধে এবার বিজেপির বাজি কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায় ৷ তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে গেরুয়া শিবিরের তরফে ৷ তাঁর জনসভা করে গিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ভোট ঘোষণার আগেও তিনি কৃষ্ণনগরে একটি জনসভা করেন ৷ অমৃতা রায়ের নাম ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ফোনও করেন ৷ অমিত শাহও এসেছিলেন তাঁর প্রচারে ৷
তাই জয় নিয়ে নিশ্চিত অমৃতা রায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যা আন্তরিকতা দেখাচ্ছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে আমি ইতিমধ্যে জিতে গিয়েছি । মানুষ প্রচুর সমর্থন করছে এবারের জয় আমার হবে ।’’ পাশাপাশি তিনি মহুয়া মৈত্র প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ালো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না । আমার লক্ষ্য মানুষের হয়ে কাজ করা, আমি সেটাই করে যাব ।’’
উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি সাংসদ হওয়ার পর আমরা বেশ কয়েকটি কাজ করার খুব আগ্রহ রয়েছে । যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে আমাকে 100 দিনের কাজের কথাটি মাথায় রাখতে বলেছেন । কৃষ্ণনগর বেলেডাঙ্গায় একটি রেললাইনের উপর দিয়ে ওভারব্রিজ করার প্রয়োজন রয়েছে । তার কারণ সেখানে দীর্ঘক্ষণ প্রচণ্ড যানজট লেগে থাকে ৷ কৃষ্ণনগরের অঞ্জনা নদী ও জলঙ্গি নদী, এই দুটি নদীকেই সংস্কার করব ৷ আরও একটি প্রধান কাজ হল কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর রেল চলাচল ।’’
তিনি কি পারবেন ? নির্বাচনী পরিসংখ্যান কী বলছে ? লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান যদি বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে 2009 সাল থেকে 2019, দশ বছরে বিজেপি এখানে প্রায় 24 শতাংশ ভোট বৃদ্ধি করেছে ৷ গতবার পাঁচ শতাংশের কিছু কম ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন বিজেপির কল্যাণ চৌবে ৷ যদিও 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের অন্তর্গত ছ’টি বিধানসভায় বিজেপিকে হারতে হয় ৷ একটি মাত্র জয় আসে কৃষ্ণনগর উত্তরে ৷ সেখানে জিতেছিলেন মুকুল রায় ৷ পরে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যান ৷
তবে বিজেপি জিততে পারুক বা না পারুক, তৃণমূলের সঙ্গে মূল লড়াই তাদেরই হবে ৷ যদিও হাল ছাড়তে নারাজ সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদিও ৷ তিনি বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগর কেন্দ্র এবার বামেদের দখলে আসবে । মানুষের সমর্থন দেখে আমি সেটা প্রথম থেকেই বলে আসছি । 2011 সালের পর থেকে তৃণমূল এ রাজ্যে এবং 2014 সালের পর থেকে বিজেপি পুরো দেশটাকে কর্পোরেটে পরিণত করেছে । বিজেপি প্রতিটি দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করার চেষ্টা করছে । লকডাউনের পর থেকে আদানি-আম্বানিদের সম্পত্তি বেড়ে গিয়েছে । আর যারা দেশের ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী, তাঁরা সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছেন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘অন্যদিকে তৃণমূল দলটা আগাগোড়া দুর্নীতিতে যুক্ত । কৃষ্ণনগরের যিনি সাংসদ ছিলেন কী কারণে বহিষ্কৃত হয়েছেন সেটা সকলেই জানেন । আমি তাঁর এই দুর্নীতিকে কালীঘাটের দুর্নীতি বলে মনে করি । তাছাড়া বিজেপি এবং তৃণমূল যেভাবে মানুষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছে, তাতে করে আগামিদিনে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে যাবে । সেই কারণেই আমরা বলছি, যারা বিজেপি ও তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই একজোট হোন ।’’
কিন্তু 2009 থেকে 2019, এই দশ বছরের নির্বাচনী পরিসংখ্যান বিচার করলে দেখা যাবে যে সিপিএমের ভোট কমেছে প্রায় 27 শতাংশ ৷ তাই তাঁর আশা কতটা পূরণ হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ৷ এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী 4 জুন লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন ৷
আরও পড়ুন: