হাবড়া, 14 অক্টোবর: ধর্ষণের অভিযোগ সালিশি সভায় মিটমাট করতে হবে ৷ এমন নির্দেশ না-শুনে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্যাতিতা ৷ অভিযোগ তার জেরে চলছিল লাগাতার 'হুমকি' এবং মানসিক চাপ ৷
সেই আবহেই এবার নির্যাতিতা মহিলার রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়াল ধর্ষণে অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী, তাঁর তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য স্ত্রী এবং নির্যাতিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। ঘটনাকে ঘিরে তীব্র শোরগোল পড়ে গিয়েছে উত্তর 24 পরগনার হাবড়ায়।
মৃতের ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে পুলিশ মূল অভিযুক্ত জয়ন্ত বিশ্বাস, তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা ও নিহত মহিলার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে, মৃতের পরিবারের অভিযোগ, থানায় নির্যাতিতার ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরও পুলিশ অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। সঠিক সময়ে অভিযুক্তকে ধরতে যদি তারা উদ্যোগী হত, তাহলে নির্যাতিতার এই পরিণতি হত না। যদিও সালিশি সভা বসিয়ে ধর্ষণের ঘটনা মিটিয়ে নেওয়া কিংবা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মতো অভিযোগ মানতে রাজি হননি বারাসত জেলার অতিরিক্ত সুপার স্পর্শ নিলাঙ্গি।
ঘটনাটি কী?
ঘটনার সূত্রপাত,মাস দেড়েক আগে। শ্বশুরবাড়িতে বনিবনা না-হওয়ায় কলকাতা পুলিশের কর্মীর হাবড়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতে যান বছর 33-এর ওই মহিলা। গত 5 সেপ্টেম্বর ঘরে ঢুকে মহিলাকে পাশের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে জয়ন্ত ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। 9 সেপ্টেম্বর পুলিশের কাছে করা অভিযোগে নির্যাতিতা মহিলা জানান, ধর্ষণের পরে তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। গ্রামে সালিশি ডেকে একসময় বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেন অভিযুক্ত। তাতে রাজি না-হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত জয়ন্ত বিশ্বাস পলাতক ছিল।
ওই ঘটনার পর মহিলা আবার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান। তারপরেই শুক্রবার তাঁর শ্বশুরবাড়ির দোতলার ঘরে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় নির্যাতিতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর বাড়ির লোকজনই দেহটি নামিয়ে ছিলেন। পুলিশ সেই অবস্থায় দেহ উদ্ধার করে।মৃতদেহ উদ্ধারের পর তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
মহিলার দেহ পাওয়ার পর-
শনিবার মৃতের দাদা হাবড়া থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর বোনকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ওইদিনই পুলিশ মহিলার স্বামী, ধর্ষণে অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী এবং তাঁর পঞ্চায়েত সদস্য স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের কাছে করা অভিযোগে নির্যাতিতা মহিলার দাদা আরও জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর বোনকে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। বাধ্য হয়ে তিনি ভাড়া বাড়িতে গিয়েছিলেন। এবারে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী এবং তাঁর পঞ্চায়েত সদস্যা স্ত্রী মিলে মহিলার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ৷
এদিকে, এই ঘটনার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের উপস্থিতিতে কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? ঘটনার জন্য বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেমন দায়ী, তেমনই সমানভাবে দায়ী কলকাতা পুলিশের কর্মী জয়ন্ত এবং তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য স্ত্রী সঞ্চিতাও। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক। সাজা পাক দোষীরা। এমনই দাবি নির্যাতিতার দাদার।
অন্যদিকে, সোমবার বারাসতে নিজের দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নিলাঙ্গি বলেন, "অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই পুলিশ গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটি খতিয়ে দেখেছে। যেহেতু ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী পলাতক ছিল, সেহেতু তার নাগাল পাওয়া সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও পুলিশ তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি এই অভিযোগ ঠিক নয়। ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু, সালিশি সভা বসিয়ে মিটমাট করার দাবি সঠিক নয়। তদন্তেও সেরকম কিছু উঠে আসেনি।"