কলকাতা, 26 ফেব্রুয়ারি: অস্ত্রোপচারের সময় টানা খুলে রাখতে হবে চোখের পাতা । সেটাই ছিল চ্যালেঞ্জ । তবে সেই চ্যালেঞ্জকে জয় করে টানা তিন ঘণ্টা চোখের পাতা খুলে রেখেই সফল অস্ত্রোপচার হল বছর পাঁচেকের গীতাঞ্জলির । দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম ঝাড়খণ্ডের শিশুটিকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতাল ৷
গিরিডি অঞ্চলের বাসিন্দা বিকাশ কুমার গুপ্তা । পেশায় তিনি হকার । তাঁর স্ত্রী পাম্পি দেবী গৃহবধূ । তাঁদেরই পাঁচ বছরের মেয়ে গীতাঞ্জলি । গত বছর বড়দিনে সকাল ন'টায় বাবার সঙ্গে বাইকে চড়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল ছোট্ট কন্যা । আচমকাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে বাইকটিকে । বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যায় শিশুটি ৷ তার মুখে গুরুতর চোট লাগে ৷
তৎক্ষণাৎ তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়খণ্ডের একটি নিকটবর্তী হাসপাতালে । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের খোঁজ পায় আহত শিশুর পরিবার । এক মিনিটও দেরি না-করে মেয়ে ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সেদিন রাত সাড়ে 12টায় কলকাতার মুকুন্দপুরের কাছে ওই বেসরকারি হাসপাতালে চলে আসেন বিকাশ গুপ্তা ৷ হাসপাতালে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কন্যার অস্ত্রোপচার শুরু হয় ৷
প্লাস্টিক সার্জেন অখিলেশ কুমার আগরওয়ালের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার হয় শিশুটির । দুর্ঘটনার কারণে গীতাঞ্জলির মুখের হাড় থেকে টিস্যু আলাদা হয়ে গিয়েছিল । বিশেষ করে তার মুখের ডান দিক, চামড়া, চোখের মণি আর নাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । চিকিৎসকের কথায়, "সামগ্রিক চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম একটি দিক ছিল তার দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো । তবে বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না । কারণ তার চোখের সকেটে ছিদ্র তৈরি হয়েছিল । ফলে অস্ত্রোপচারের সময় অনেকক্ষণ চোখ খুলে রাখতে হবে । নয়তো তার চোখের বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ।" সেই ভাবেই অস্ত্রোপচার করা হয় ।
গীতাঞ্জলি কুমারীর বাবা বিকাশ গুপ্তা বলেন, "মেয়ে খুব যন্ত্রণায় ছিল । সারা মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল । আমরা ওকে চটজলদি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই । তারা আমাদের বলে, দ্রুত কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য । ওই রাতেই আমরা ওকে এখানে ভর্তি করি । একদিকে আমরা ভীষণ চিন্তায় ছিলাম, আমাদের মেয়ের প্রাণ বাঁচানো নিয়ে । সত্যি কথা বলতে কি, এই ধরনের চিকিৎসা খুবই ব্যয়সাধ্য । তবে হসপিটালের তরফ থেকে খুবই সাহায্য করা হয় ।"
অস্ত্রোপচারের পর পাঁচ সপ্তাহ ধরে পুরো রিহ্যাব চলে । বর্তমানে চোখ স্বাভাবিকভাবে খুলতে ও বন্ধ করতে পারছে গীতাঞ্জলি ।
আরও পড়ুন: