কলকাতা, 30 জুন: গুরুতর অসুস্থ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী অলকা ইয়াগনিক । নিজের অসুস্থতার কথা নিজেই সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছিলেন তিনি । এক বিরল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত এই প্রখ্যাত গায়িকা । যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'সেন্সরিনিউয়াল হেয়ারিং লস' ।
এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে কানে শুনতে পাচ্ছেন না জনপ্রিয় এই সংগীত শিল্পী । তাঁর অসুস্থতার খবর চিন্তায় ফেলেছে অনুরাগীদের । অনেকেই জানতে চাইছেন, কী এই 'সেন্সরিনিউয়াল হেয়ারিং লস' রোগ ? এটা কী এমন রোগ, যাতে কানে শোনার ক্ষমতা হঠাৎ করেই হারিয়ে ফেললেন তিনি ? কীভাবে এই রোগের কবলে পড়লেন শিল্পী ? কবে এবং কী করে ফের সুস্থ জীবনে ফিরবেন তিনি ? এই সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজল ইটিভি ভারত ৷ যোগাযোগ করা হয়েছিল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসাইন্সের নিউরো অটোলজিস্ট ডাঃ অনির্বাণ বিশ্বাসের সঙ্গে । জেনে নিন তিনি কী বললেন এই রোগ সম্পর্কে ৷
ইটিভি ভারত: 'সেন্সরিনিউয়াল হেয়ারিং লস' কী?
চিকিৎসক: ককলিয়ার যে নার্ভ সেখানে একটা ভাইরাস থেকে এই ধরণের সমস্যা হয় । আমাদের কানের রক্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ধমণীটি থাকে সেখানে কোনও ভাবে চর্বি জমে যায় । তখন কানে রক্ত পৌঁছতে পারে না । ফলে কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে যায় । সেটাই অলকা ইয়াগনিকের হয়েছে । তবে তাঁর একটা কানে শোনার ক্ষমতা চলে গিয়েছে । কিন্তু অপর একটি কান ঠিক রয়েছে ।
ইটিভি ভারত: কোন বয়সিরা সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয় এই রোগে?
চিকিৎসক: এই রোগে আক্রান্ত হয় বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেই । তবে সাধারণত 35 থেকে 60 বছর বয়সের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায় ।
ইটিভি ভারত: এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব?
চিকিৎসক: এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, 5 থেকে 10 শতাংশ মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হলে ভালো হয়ে যেতে পারেন । কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই হন না । অনেকে আবার চিকিৎসায় কিছুটা সেরে ওঠেন । তবে এই রোগের যথাযথ কোনও চিকিৎসা নেই । কোন চিকিৎসায়, কখন রোগীর সাড়া মিলবে, তা বোঝা যায় না ।
ইটিভি ভারত: এই রোগে হলে কী করা উচিত এবং কোন কোন বিষয়গুলি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন ?
চিকিৎসক: এটা একটা ভাইরাস ঘটিত রোগ । তাই কখন হবে, সেটা বোঝা যায় না । কী করলে এ ধরনের রোগ হবে না, সেটাও বলা সম্ভব নয় । কী থেকে এই রোগটা হচ্ছে সেটাও সঠিক ভাবে বলা যায় না । এমনকী এই নিয়মগুলি মানলে এই রোগটা হবে না, এমনটাও বলা সম্ভব নয় । বিজ্ঞান এখনও ততটা উন্নত হয়নি ।
ইটিভি ভারত: একটা কানে শ্রবণ শক্তি চলে গিয়েছে, অপর কানে রয়েছে ৷ তাকে বাঁচাবো কী করে?
চিকিৎসক: মূলত এটা একটা কানেই হয়, খুব কম যে দুটো কানে দেখা যায় । তবে আমরা বলি, আর একটা কানকে বাঁচানোর জন্য খুব জোরে মিউজিক বা কোন আওয়াজ যাতে না শোনা হয় । বেশ কিছু ওষুধ আছে যার কারণে কানের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । অ্যাসপিরিন, ইকোস্পিরিন জাতীয় ওষুধ ব্রেন স্ট্রোক বা ডায়াবেটিক রোগীদের দেওয়া হয় । এছাড়াও অ্যান্টি ডায়বেটিক, অ্যান্টি ম্যালেরিয়ার এবং বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ রয়েছে । যেগুলো থেকে কানের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় । অপর কানকে বাঁচানোর জন্য আমরা সেই ওষুধগুলো খেতে বারণ করে দিই ৷ কিন্তু শুধু ওষুধ দিয়ে দিলাম ওই কানটাকে বাঁচানোর জন্য তা হয় না ।
ইটিভি ভারত: একটা কানে শ্রবণশক্তি চলে গেলেও অপর কান ঠিক আছে, তাতে কোনও সমস্যা হয়?
চিকিৎসক: এই ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে । কারণ, তার একটা কান সম্পূর্ণ বন্ধ ফলে ওই দিক থেকে কোন আওয়াজ এলে সে বিষয়টি বুঝতে অনেক সময় লেগে যায় । তার কারণ, দুটো কান থেকে যদি সমানভাবে শব্দ ব্রেনে না পৌঁছয় তাহলে ব্রেন ঠিকমতো এর অর্থ বুঝতে পারে না । এ ক্ষেত্রে কানের যন্ত্র দেওয়া যায় । কিন্তু যাদের পুরো শ্রবণ শক্তি চলে যায়, তাদের যন্ত্রেও কাজ হয় না ।
তাঁর সংযোজন, এ ক্ষেত্রে ককলিয়া ইমপ্ল্যান্ট করতে হয় । মানে, অপরেশন করে একটা যন্ত্র কানের পিছনে বসিয়ে দিতে হয় । আরেকটা পদ্ধতি আছে । যে কানে রোগী শুনতে পাচ্ছেন না, তাতে মাইক্রোফোন লাগানো থাকে । ওই মাইক্রোফোনটি কথাটি শুনে অন্য কান দিয়ে ব্রেনে প্রবেশ করায় । কিন্তু এই দুটোতেই সমস্যা তবুও থেকেই যায় ।