কলকাতা, 12 নভেম্বর: বর্ষা আসার আগে যেমন প্রতিবছর প্রস্তুতি বৈঠক হয়, তেমনই শীত পড়ার মুখে বায়ু দূষণ ঠেকাতে একাধিক সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা কর্পোরেশন। একটি জরুরি বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের নেতৃত্ব দিয়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
নভেম্বর মাস শুরু হতেই বাতাসের মান পড়তে থাকে। দূষক বাড়তে থাকে। অন্য শহরের মতই কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন শহরের পরিস্থিতি একই রকম হয়। বৃষ্টি না হওয়া ও বাতাসে গতি না থাকার কারণে ধুলিকনা, গ্যাস ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে। আর এই পরিস্থিতিতে দীপাবলি ও ছট উৎসব ঘিরে দেদার বাজি ফাটানো দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলে। বায়ু দূষণের মাত্রা লাফিয়ে বাড়তে থাকলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে শারীরিক সমস্যা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা আছে। পাশাপশি চর্মরোগ। আরও নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয় মানুষকে।
চলতি বছরে কালীপুজোর পর থেকেই শুরু হয়েছে বায়ু দূষণ। তাই শুরুতেই এবার নজর দিচ্ছে কলকাতা কর্পোরেশন। বিশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্মাণ কাজে বাধ্যতামূলক ভাবেই সম্পূর্ণ ঢেকে করতে হবে। খোলা জায়গায় কংক্রিট বর্জ্য বা সিমেন্ট-বালি ফেলে রাখা চলবে না। পাশাপশি দিনে একবার করে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় গাছে জল দেওয়া হতো, সেটা এখন দিন তিনবার করে দেওয়া হবে। রাস্তায় জল ছিটানো হবে স্প্রিঙ্কলার মাধ্যমে। ময়দানে বা কোনও উদ্যান এলাকায় আবর্জনা জ্বালানো যাবে না ।
ভারতে বায়ুদূষণ মাত্রা লঙ্ঘিত হয়, এমন শহরগুলির মধ্যে এক্কেবারে প্রথমে যদি দিল্লির নাম আসে তাহলে তার পরেই কলকাতার নামও বলতে হয়। তালিকায় আছে পটনাও । দিল্লি, পটনা দুই শহরে দূষণ রুখতে পরিবেশবান্ধব বাজি পর্যন্ত পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। যদিও কলকাতায় সে সব উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। রাজ্যেই কলকাতা ছাড়াও বায়ুদূষণ মাত্রা লঙ্ঘিত হয়, এমন শহরের তালিকায় আছে হাওড়া, দুর্গাপুর, আসানসো-সহ বেশ কয়েকটি নাম । সম্প্রতি কলকাতা কর্পোরেশনের একাধিক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে কিছুটা হলেও বাতাসে দূষণের পরিমাণ কম থাকছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তোষজনক থাকছে।
পরিবেশ বিষেশজ্ঞদের কথায়, লাগাতার গাছে জল দিয়ে পাতা ধুয়ে দেওয়া, বাতাসে জল ছিটানো, রাস্তায় জল দেওয়ার ফলে ধূলিকণা, গ্যাস বাতাসে ভূপৃষ্ঠের কাছে সেই অর্থে ভাসমান অবস্থায় থাকছে না। কিন্তু, খেয়াল রাখতে হবে নির্মাণ কাজের দিকে আর রাস্তায় চলা যানবাহনে। কারণ, জ্বালানি তেলের ধোঁয়া বাতাসে দূষণ মাত্র বৃদ্ধি করে। পাশাপশি, এই সময় মাস্ক ব্যবহার জোর দিতে বলা হচ্ছে।
কলকাতায় প্রতি বোরোতে ওয়াটার স্প্রিংকলার গাড়ি আছে, যার মাধ্যমে রাস্তা ধোয়া হয়, মাঠে জল দেওয়া হয়। বিশেষ গাড়ি করে গাছ ধোয়া হচ্ছে। এছাড়াও, জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কাছে দুটি মিস্ট ক্যানন আছে, যার মাধ্যমে বাতাসে জলীয় কনা ঝরানো হয়। এতে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বেশিক্ষণ বাতাসে থাকতে না পারে।