কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: নুন বা লবণের ব্যবহার কেবলই খাবারের স্বাদের জন্য নয়, এটা মানব শরীরে আয়োডিন ও আয়রনের মতো জরুরি খনিজ পদার্থ জোগায় ৷ এবার কলকাতা শহরে সেই নুনের গুণগত মান যাচাই করবে রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা কমিশন ৷ আর এই কাজে তাদের সাহায্য করবে কলকাতা পুরনিগমের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ ৷
প্যাকেট নুনের পাশাপাশি, খোলা নুনও বিক্রি হয় বাজারে ৷ এই দু’ধরনের নুনের গুণগত মান পরীক্ষা করা হবে ৷ মূলত, নুনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান আয়োডিন সঠিক মাত্রায় আছে কি না, তা যাচাই করবে খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ ৷ এর জন্য শহরের বিভিন্ন দোকান ও পাইকারি বাজার থেকে সব ধরনের নুনের নমুনা সংগ্রহ করা হবে ৷
এর পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গে ভিনরাজ্য বিশেষত, গুজরাত থেকে বিপুল পরিমাণে বস্তাবন্দি নুন মালগাড়িতে চিৎপুর রেল ইয়ার্ড-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আসে ৷ মূলত, চিৎপুর রেল ইয়ার্ডেই অধিক পরিমাণ নুন এসে পৌঁছায় ৷ তাই রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা কমিশন ও কলকাতা পুরনিগমের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ যৌথভাবে চিৎপুরের রেল ইয়ার্ড থেকে অধিক পরিমাণে সব বস্তা থেকে নুনের নমুনা সংগ্রহ করবে ৷ তারপর তা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে পুরনিগমের ল্যাবে ৷
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং খাদ্য সুরক্ষা কমিশনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ আর এই প্রক্রিয়া কেবলমাত্র কলকাতা নয় ৷ বরং রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও হবে ৷ সেখানকার পুরনিগম এবং পুরসভাগুলির সাহায্য এই নমুনা সংগ্রহ ও তার গুণমান যাচাই হবে ৷
নুনের গুণমান যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ইটিভি ভারত বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খোঁজ চালায় ৷ সেই সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান কর্মব্যস্ততার যুগে মানুষকে অবসাদ খুব সহজেই গ্রাস করছে ৷ আর শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে, অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা খুব সহজেই বেড়ে যায় ৷ বিশেষত, শহুরে জীবনে অবসাদ একটা বড় সমস্যা ৷ তাই খাবারে ব্যবহার হওয়া নুনে আয়োডিনের মাত্রা সঠিকভাবে রয়েছে কি না, তা যাচাই জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি সূত্রে খবর ৷
এ নিয়ে চিকিৎসক কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, "আমাদের জীবনে নিত্য ব্যবহারের খাদ্য সামগ্রীর একটি হল নুন ৷ যা খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস ৷ যে নুন আমরা খেয়ে থাকি, তা সমুদ্রে জলকে শুকিয়ে তৈরি করা হয় ৷ তারপর তাকে পরিশুদ্ধ করতে নানান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রকমের রাসায়নিকের ব্যবহার হয় ৷ যা আমরা বুঝতেও পারি না ৷ আর সেই কারণে, নুনের সবচেয়ে জরুরি গুণগত খনিজ পদার্থ আয়োডিন ও আয়রনের মাত্রা নষ্ট হয়ে যায় ৷"
চিকিৎসক কাজলকৃষ্ণ বণিকের কথায়, "আর মানবদেহে আয়োডিন ও আয়রন সঠিক মাত্রায় প্রয়োজন ৷ আমাদের দেশে আয়োডিন যুক্ত নুন বিক্রি করা বাধ্যতামূলক ৷ এর জন্য আইন আছে ৷ বাজারে বিক্রি হওয়া নুনে ন্যূনতম 15 পিপিএম আয়োডিন থাকা বাধ্যতামূলক ৷ তা না-হলে সেই নুনের গুণমান ভালো নয় ৷ তাই আয়োডিনের ন্যূনতম মাত্রা বজায় থাকছে কি না, তা যাচাই করা প্রয়োজন ৷"
নুনে বাধ্যতামূলক ন্যূনতম 15 পিপিএম আয়োডিন থাকা নিয়ে চিকিৎসক জানান, "আমাদের বাড়ির মা-বোনেদের অ্যানিমিয়া বা থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয় আয়োডিন ও সঠিকমাত্রায় আয়রনের অভাবে ৷ নুনে সেই মাত্রাটা বজায় রাখতে অনেক সংস্থা আয়রন মেশায় ৷ কিন্তু, সব নুনে সেটা না-ও থাকতে পারে ৷ বিশেষত, শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের সমস্যা দেখা দেয় আয়োডিনের অভাবে ৷ তাই ভালো নুন তাকেই বলব, যা খেলে শরীরে কোনও ক্ষতিকারক পদার্থ যাবে না ৷ একইভাবে অ্যানিমিয়া ও থাইরয়েড হবে না ও বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ ঠিক মতো হবে ৷ তাই খোলা নুন ও প্যাকেট নুনের পরীক্ষা প্রয়োজন ৷"