কলকাতা, 4 অগস্ট: চলতি মাসের মাঝে বা শেষ থেকেই পুরোদমে শুরু হবে পুজোর বাজার । ইতিমধ্যেই শহরে পুজো পুজো গন্ধ । ঠিক তার আগেই দমদম স্টেশনের অদূরে একটি পুরোনো তিনতলা বাড়ির একাংশ না জানিয়ে ভেঙে ফেলার অভিযোগ কলকাতা পুরনিগমের বিরুদ্ধে ৷ ওই তিনতলা বাড়ির নীচের তলায় দু'একটা নয়, 21টিরও বেশি বড় দোকান রয়েছে । ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৷ পুজোর আগে ক্ষতির মুখে একাধিক দোকান ৷ ওই বাড়ির দোতলায় বেশ কয়েকজন আবাসিকও থাকেন । চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন তাঁরাও ৷
ব্যবসায়ীদের দাবি, আচমকাই শনিবার দুপুরে বিরাট পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে কোনও আগাম নোটিশ ছাড়াই ওই বাড়ির উপরের অংশ ভাঙতে থাকেন কয়েকজন। দোকান মালিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা নিজেদের কর্পোরেশনের কর্মী বলে পরিচয় দেন । ভবনের একাংশ ভাঙার পর সন্ধ্যায় একটি বিপজ্জনক বাড়ি লেখা বোর্ড ও কিছু নোটিশ দেওয়ালে লাগিয়েও দিয়ে যান তাঁরা । তাতে রয়েছে, কলকাতা পুরনিগমের নাম ও লোগো ৷ তবে তাঁরা পুরনিগমের আধিকারিক নন প্রমোটারের লোকজন ৷ এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
এ বিষয়ে কলকাতা পুরনিগমের 2 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাকলি সেন বলেন, " বাড়িটি বহু দিন ধরেই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে । কর্পোরেশনের তরফে বোর্ড লাগিয়ে গিয়েছিল । তারপরও মেরামত না করাতেই হয়ত কাল পরিস্থিতি বুঝে ভেঙে দিয়ে গিয়েছে কর্পোরেশন ।" তাঁর এই বক্তব্যের পরও কে বা কারা ওই বাড়ির একাংশ ভাঙল তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে । বাড়ির উপরের অংশের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। নীচতলায় সার দিয়ে মিষ্টি থেকে শুরু করে কাপড়,কেক এমনকী সোনার গয়না-সহ মোট 21টি দোকান রয়েছে । উপরে থাকেন তিনজন আবাসিক ।
ব্য়বসায়ী ইতু চক্রবর্তী ও সঞ্জয় পালের কথায়, "শনিবার দুপুরে আচমকা বিরাট পুলিশ বাহিনী আসে । তাদের সঙ্গে ছিল আরও অনেকে। তারা দোকান থেকে ব্যবসায়ীদের বেরিয়ে যেতে বলে। আশপাশের দোকানও বন্ধ করিয়ে দেয়। এরপর নিজেদের কলকাতা পুরনিগমের কর্মী পরিচয় দিয়ে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করেন ৷ আমাদের দোকানের বোর্ড থেকে শুরু করে চাল ভেঙে ফেলে । দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট করে। আমরা এই বিষয় নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হব । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব । সামনে পুজো । তার আগে এই ভাবে দোকান ভেঙে দেওয়ায় ব্যবসা করব কী করে বুঝে উঠতে পারছি না । দোকানে যে কর্মীরা কাজ করেন তাঁদের বেতনই বা দেব কী করে ৷"
বাড়ির মালিক এলকে টোডির বক্তব্য, "এই বাড়িটি 100 বছর পুরোনো। বাড়ির অবস্থা বেশ খারাপ ৷ ওই এলাকাটি খুবই জনবহুল । বহু মানুষ যাতায়াত করেন । বাড়ি ভেঙে কেউ আহত বা নিহত হলে আমাকেই দায়ী থাকতে হবে । তাই আমি কর্পোরেশনকে বলেছি আপনারা যা করার করুন আমার কোনও আপত্তি নেই । কর্পোরেশন নিজের মতো নোটিশ দিয়ে ভেঙে গিয়েছে । আমার বলার কিছু নেই । আমি ভাড়াটেদের কোনওদিন উঠে যেতে বলেনি । আমার ওদের নিয়ে কোনও অসুবিধা নেই ।"
কর্পোরেশন সূত্রে খবর, বিপজ্জনক বাড়ি হলে কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগ বাড়ির মালিককে নোটিশ দেন । মেরামত করে নেওয়ারও সময় দেন। যদি মেরামত না করা হয় তারপর ফের নোটিশ দেওয়া হয় । তখনও না শুনলে বিপজ্জনক বাড়ি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয় । এরপর টাউন প্লানিং বিভাগের আধিকারিকদের অনুমতি নিয়ে বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দিতেই পারে পুরনিগম। তখনও অবশ্য বাড়ির মালিক, ভাড়াটে দোকানদার সব পক্ষকেই নোটিশ দিয়ে জানিয়ে এই কাজ করতে হয় পুরনিগমকে । এইভাবে আচমকা কোন কাজ করে না কর্তৃপক্ষ । এক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে বলে অভিযোগ ৷