মালদা, 17 জুন: নির্ধারিত সময়ের আট ঘণ্টা পর 1200 জনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে মালদা স্টেশনে পৌঁছল দুর্ঘটনাগ্রস্ত আগরতলা-শিয়ালদা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ৷ যাত্রীদের জন্য আগে থেকেই সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছিল পূর্ব রেলের মালদা ডিভিশন ৷ যাত্রীদের রাতের খাবার হিসাবে বিরিয়ানির প্যাকেট, দই, লস্যি-সহ বিভিন্ন শুকনো খাবার, পানীয় জলের বোতলের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসা পরিষেবাও ৷ এই ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী আগেই সড়কযোগে মালদা স্টেশনে চলে আসেন ৷ তাঁদের একাংশ মালদা স্টেশনে রেলের অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ৷ শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে নটা নাগাদ শিয়ালদার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ট্রেনটি ৷
দুর্ঘটনার পর 13174 নম্বর ট্রেনটির ঠিক যে অংশ দু'টি ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তার আগের কামরাতেই ছিলেন বীরভূমের সদাইপুর এলাকার মিঠুন পৈতণ্ডি ৷ গুয়াহাটির একটি হোটেলের কর্মী তিনি ৷ ট্রেনের পিছনের দিকের একটি অসংরক্ষিত কামরায় বাড়ি ফিরছিলেন ৷ তিনি বলেন, "সংঘর্ষে গোটা কামরায় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয় ৷ উপরের বাঙ্কে শুয়েছিলাম ৷ ঝাঁকুনিতে ভয় পেয়ে যাই ৷ তড়িঘড়ি ব্যাগ নিয়ে নীচে নেমে আসি ৷ দেখি, আমার পিছনের কামরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে ৷ পাশের একটি কন্টেনার বোঝাই মালগাড়ির উপর একটি কামরা উঠে গিয়েছে ৷ দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরাগুলিতে রক্ত, হাত-পা ভাঙা মানুষ দেখে শরীর খারাপ করছিল ৷ এমন ঘটনার সাক্ষী আগে কখনও থাকিনি ৷ কিন্তু মালদা থেকে ওই ট্রেনেই বাড়ি ফিরতে হবে ৷ প্রাণের ভয় নিয়েই অভিশপ্ত ট্রেনে চাপব ৷"
অভিশপ্ত ট্রেনের সংরক্ষিত এস-5 কামরায় কলকাতা যাচ্ছিলেন আগরতলার বাবলু ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "সেই সময় আমি মিডল বার্থে ঘুমিয়ে ছিলাম ৷ হঠাৎ বিকট শব্দ ! তীব্র ঝাঁকুনিতে নীচে পড়ে যাই ৷ আমার উপর আরও 3-4 জন ছিটকে পড়েন ৷ কামরা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি ৷ দেখি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ৷ কোনওরকমে কামরা থেকে বেরিয়ে আসি ৷ সব দেখে অসুস্থ হয়ে যাই ৷ এলাকার মানুষজন আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন ৷ এখান থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা যাব ৷ এই অভিশপ্ত ট্রেনে ওঠার আর ইচ্ছে নেই ৷"
অন্যদিকে, মালদা স্টেশনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রীদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ ত্রিপুরার সুমন সোম ৷ তিনি বলেন, "দুর্ঘটনার পর আমিও বাস ধরে মালদা চলে আসি ৷ কিন্তু এখানে আমাদের মতো যাত্রীদের জন্য কোনও ব্যবস্থাই করা হয়নি ৷ আমাদের বসার জায়গা পর্যন্ত নেই ৷ কীভাবে যে মালদা এসেছি আমরাই জানি ৷ রেলকর্মীদের আমাদের জন্য কি সামান্য সহানুভূতি পর্যন্ত নেই! বাড়ির লোক চিন্তায় আছেন ৷ কেন এভাবে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে তা রেল কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত ৷”
এখানেই উঠেছে প্রশ্ন ৷ ভারতীয় রেলের পূর্বোত্তর সীমান্ত ও কোঙ্কন রেলওয়েতে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস ৷ সেই ডিভাইস সময় মতো কাজ করল না কেন? প্রশ্ন রয়েছে এলএইচবি কোচ ব্যবহার না করা নিয়েও ৷ এলিট ট্রেন নয় বলেই কি রেল কর্তৃপক্ষ এই ট্রেনগুলির দিকে সেভাবে নজর দেয় না? প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই ৷