কলকাতা, 19 জুন: দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের জমির লেনের বাড়িতে ততক্ষণে ভিড় জমেছে ৷ ছোট্ট মেয়েটি দরজার সামনে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বাবার অপেক্ষায় ৷ ভোর তখন 3টে 45 মিনিট ৷ মেয়ের অপেক্ষার অবসান ঘটল ৷ বাবা শুভজিৎ মালি বাড়ি ফিরলেন ৷ তবে জীবিত অবস্থায় নয়, বাড়িতে এসে পৌঁছল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত 32 বছরের যুবকের নিথর দেহ । দেহ দেখেই জমির লেনের বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েলেন মৃতের স্ত্রী, মেয়ে-সহ পরিবারের সদস্যরা । বন্ধুদের চোখেও জল । শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শুভজিতের বাড়িতে হাজির হন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও ৷ মৃতের মেয়েকে শান্তনা দিতে দেখা গেল তাঁকে ৷
শুভজিৎ মালি গাড়ি ডেলিভারি করতে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে । সামনেই মেয়ের জন্মদিন ৷ তাই তড়িঘড়ি কাজ সেরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে করে কলকাতায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি । সেটাই কাল হল । তিনি ফিরলেন, তবে মৃত অবস্থায় । এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে । বুধবার সকালে শববাহী গাড়ি করে শুভজিতকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানেই পাড়া প্রতিবেশী ও পরিবারের উপস্থিতিতে শেষকৃত্য হয় তাঁর ।
গত সোমবার সাত সকালে শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফাঁসিদেওয়া ব্লকের চটেরহাট ও রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কলকাতাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস । পিছন থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি মালগাড়ি জোরে ধাক্কা মারে ট্রেনটিতে । ফলে দুটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায় । বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে আশেপাশের এলাকায় । ঘটনায় আহত হন একাধিক যাত্রী, মৃত্যু হয় অনেকের ৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার শুভজিৎ মালি এবং উত্তর কলকাতার ফুলবাগানের বাসিন্দা শঙ্করমোহন দাস ৷ তিনি রেলওয়ে মেল সার্ভিসের কর্মী ছিলেন । অবসরের পর চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করছিলেন । সেই কাজ থেকেই ফিরছিলেন । পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি ৷
মঙ্গলবার বাড়িতে ফেরে শঙ্করমোহন দাসের দেহ ৷ তাঁকেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল । শঙ্করকে শ্রদ্ধা জানাতে যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও সিপিএম নেতা রাজীব বিশ্বাস । তবে মৃতের কাকা সুরেশ মোহন দাসের অভিযোগ, ঘটনার পর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি কোনও সরকার । কেউ যায়নি ভাইপোর দেহ আনতে । পরিবারের সদস্যরা টাকা খরচ করে ও অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে দেহ আনতে গিয়েছিলেন ৷