ETV Bharat / state

অবশেষে পুলিশের জালে কালিয়াচকের ‘ত্রাস’ তৃণমূল নেতা আসাদুল্লা, কে এই ডন ? - Trinamool Congress Leader Arrested - TRINAMOOL CONGRESS LEADER ARRESTED

Trinamool Congress Leader Arrested in Murder Case: গত 18 অগস্ট মালদার কালিয়াচকে ওয়াহিদুর শেখ নামে এক ব্যক্তি খুন হন ৷ সেই মামলায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন কালিয়াচকের বেতাজ বাদশা বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা আসাদুল্লা বিশ্বাস ৷ কে এই ডন ? কী কী অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ?

Trinamool Congress Leader Arrested in Murder Case
পুলিশের জালে কালিয়াচকের ‘ত্রাস’ তৃণমূল নেতা আসাদুল্লা (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 16, 2024, 2:02 PM IST

মালদা, 16 সেপ্টেম্বর: অবশেষে পুলিশের জালে কালিয়াচকের বেতাজ বাদশা ৷ দিল্লি থেকে ডন আসাদুল্লা বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে এনেছে মালদার কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ তাঁর গ্রেফতারিতে খানিকটা স্বস্তি, খানিকটা অস্বস্তিতে রয়েছেন কালিয়াচকের বাসিন্দারা ৷ অস্বস্তির কারণ ডনের সাগরেদরা ৷ যদিও এনিয়ে মুখে কুলুপ সবার ৷ তবে ডনের গ্রেফতারিতে খুশির হাওয়া পুলিশ মহলে ৷

কিন্তু কে এই আসাদুল্লা ? জেলার রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকাই বা কী ? স্থানীয়রা বলছেন, আসাদুল্লার বাড়ি কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের মোজমপুর গ্রামে৷ বাম আমলে ছিলেন সিপিএমের প্রভাবশালী নেতা ৷ জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েক দফায় ৷ অবশ্য সেই সময় মোজমপুর এলাকায় নির্বাচনের নামে প্রহসন হত বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা ৷ শুধু তিনিই নন, তাঁর ভাই গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাসও বিনা বাধায় জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৷ রাজ্যে পালাবদলের পর তিনিও ‘লাল জামা’ পালটে ফেলেন ৷ নাম লেখান ঘাসফুল শিবিরে ৷ কিন্তু এলাকায় তাঁর রাজত্ব চলতে থাকে ৷

একটা সময় বছরের বেশিরভাগ দিনই বোমা-গুলির শব্দে ঘুমোতে যেতেন ও ঘুম থেকে উঠতেন মোজমপুরের বাসিন্দারা ৷ এলাকার লোকের অভিযোগ, আসাদুল্লা বিশ্বাসের সঙ্গে স্থানীয় নারায়ণপুর এলাকার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা তুহুর আলি বিশ্বাসের দ্বন্দ্বে কত যে খুন হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই ৷ তুহুর আলির দুই ছেলেও এই দ্বন্দ্বের শিকার ৷ যদিও পরবর্তীতে পুলিশের কড়া হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷

শুধুই কি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই ? মাদক ব্যবসা, জাল নোট ও বেআইনি অস্ত্রের কারবার, সীমান্তে চোরাপাচার, গোটা এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে পরিকল্পিতভাবে হিংসা ছড়ানো, এমনকি নিজের স্বার্থে থানা পোড়ানোর মতো ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত তিনি ৷ এসবের জন্যও কালিয়াচকে খুনের ঘটনা কম ঘটেনি ৷

অভিযোগ, সম্প্রতি ব্রাউন সুগার ব্যবসায় এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল ওয়াহিদুর শেখ আর ঝান্টু শেখের গ্রুপের সঙ্গে ৷ গত 18 অগস্ট গুলি করার পর কুপিয়ে খুন করা হয় ওয়াহিদুরকে ৷ আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মোজমপুর ৷ এই ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত আসাদুল্লা ৷

তাঁকে গ্রেফতার করতে চারদিকে জাল পাতে পুলিশ৷ দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে তাঁর এক ছেলে-সহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করেন কালিয়াচকের এসডিপিও ফয়সাল রাজা ৷ তার মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সারিউল শেখও ৷ কিন্তু আবারও পুলিশের পাতা জাল কেটে পালিয়ে যান ডন আসাদুল্লা ৷ শেষ পর্যন্ত দিল্লির গোপন আস্তানা থেকে তাঁকে পাকড়াও করে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷

কালিয়াচক থানার পুলিশ জানাচ্ছে, আসাদুল্লা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মোট 48টি মামলা রয়েছে ৷ আদালতের নির্দেশে বছরতিনেক ধরে কালিয়াচকে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল ৷ শুধুমাত্র বিভিন্ন মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার অনুমতি ছিল তাঁর ৷ বাইরে থেকেই তিনি নিজের রাজত্ব নিয়ন্ত্রণ করতেন ৷ মাঝেমধ্যে গোপনে এলাকাতেও আসতেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ ৷

মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, “সম্প্রতি কালিয়াচকের মোজমপুরে এক ব্যক্তির উপর ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছিল ৷ পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি মারা যান৷ সেই ঘটনায় গত 19 অগস্ট কালিয়াচক থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয় ৷ ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত আসাদুল্লা বিশ্বাস পলাতক ছিল ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়৷ দিল্লি পুলিশের সহযোগিতায় আমরা দিল্লি থেকেই তাঁকে ধরে নিয়ে এসেছি ৷ ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে মালদা নিয়ে আসা হয় ৷ গতকাল জেলা আদালতের সম্মতিতে তাঁকে 10 দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ৷ ধৃতের বিরুদ্ধে কালিয়াচক থানায় প্রায় 50টি মামলা রয়েছে ৷ ধৃতকে জেরা করে 18 অগস্টের খুনের কিনারা করার চেষ্টা চলছে ৷”

তবে আসাদুল্লার গ্রেফতারিতে আশঙ্কাও রয়েছে মোজমপুরে ৷ নেতার গ্রেফতারিতে তাঁর সাগরেদরা ফের এলাকা উত্তপ্ত করে তুলবে না-তো ? আরও খুনের ঘটনা ঘটবে না-তো? কালিয়াচকের এসডিপিও ফয়সাল রাজা অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, “মোজমপুরের উপর আমাদের কড়া নজর রয়েছে ৷ সেখানে পুলিশ পিকেটও রয়েছে ৷ কোনও বিশৃঙ্খলা যেন সেখানে আর না-হয়, তা দেখা হচ্ছে ৷”

মালদা, 16 সেপ্টেম্বর: অবশেষে পুলিশের জালে কালিয়াচকের বেতাজ বাদশা ৷ দিল্লি থেকে ডন আসাদুল্লা বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে এনেছে মালদার কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ তাঁর গ্রেফতারিতে খানিকটা স্বস্তি, খানিকটা অস্বস্তিতে রয়েছেন কালিয়াচকের বাসিন্দারা ৷ অস্বস্তির কারণ ডনের সাগরেদরা ৷ যদিও এনিয়ে মুখে কুলুপ সবার ৷ তবে ডনের গ্রেফতারিতে খুশির হাওয়া পুলিশ মহলে ৷

কিন্তু কে এই আসাদুল্লা ? জেলার রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকাই বা কী ? স্থানীয়রা বলছেন, আসাদুল্লার বাড়ি কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের মোজমপুর গ্রামে৷ বাম আমলে ছিলেন সিপিএমের প্রভাবশালী নেতা ৷ জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েক দফায় ৷ অবশ্য সেই সময় মোজমপুর এলাকায় নির্বাচনের নামে প্রহসন হত বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা ৷ শুধু তিনিই নন, তাঁর ভাই গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাসও বিনা বাধায় জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৷ রাজ্যে পালাবদলের পর তিনিও ‘লাল জামা’ পালটে ফেলেন ৷ নাম লেখান ঘাসফুল শিবিরে ৷ কিন্তু এলাকায় তাঁর রাজত্ব চলতে থাকে ৷

একটা সময় বছরের বেশিরভাগ দিনই বোমা-গুলির শব্দে ঘুমোতে যেতেন ও ঘুম থেকে উঠতেন মোজমপুরের বাসিন্দারা ৷ এলাকার লোকের অভিযোগ, আসাদুল্লা বিশ্বাসের সঙ্গে স্থানীয় নারায়ণপুর এলাকার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা তুহুর আলি বিশ্বাসের দ্বন্দ্বে কত যে খুন হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই ৷ তুহুর আলির দুই ছেলেও এই দ্বন্দ্বের শিকার ৷ যদিও পরবর্তীতে পুলিশের কড়া হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷

শুধুই কি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই ? মাদক ব্যবসা, জাল নোট ও বেআইনি অস্ত্রের কারবার, সীমান্তে চোরাপাচার, গোটা এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে পরিকল্পিতভাবে হিংসা ছড়ানো, এমনকি নিজের স্বার্থে থানা পোড়ানোর মতো ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত তিনি ৷ এসবের জন্যও কালিয়াচকে খুনের ঘটনা কম ঘটেনি ৷

অভিযোগ, সম্প্রতি ব্রাউন সুগার ব্যবসায় এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল ওয়াহিদুর শেখ আর ঝান্টু শেখের গ্রুপের সঙ্গে ৷ গত 18 অগস্ট গুলি করার পর কুপিয়ে খুন করা হয় ওয়াহিদুরকে ৷ আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মোজমপুর ৷ এই ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত আসাদুল্লা ৷

তাঁকে গ্রেফতার করতে চারদিকে জাল পাতে পুলিশ৷ দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে তাঁর এক ছেলে-সহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করেন কালিয়াচকের এসডিপিও ফয়সাল রাজা ৷ তার মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সারিউল শেখও ৷ কিন্তু আবারও পুলিশের পাতা জাল কেটে পালিয়ে যান ডন আসাদুল্লা ৷ শেষ পর্যন্ত দিল্লির গোপন আস্তানা থেকে তাঁকে পাকড়াও করে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷

কালিয়াচক থানার পুলিশ জানাচ্ছে, আসাদুল্লা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মোট 48টি মামলা রয়েছে ৷ আদালতের নির্দেশে বছরতিনেক ধরে কালিয়াচকে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল ৷ শুধুমাত্র বিভিন্ন মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার অনুমতি ছিল তাঁর ৷ বাইরে থেকেই তিনি নিজের রাজত্ব নিয়ন্ত্রণ করতেন ৷ মাঝেমধ্যে গোপনে এলাকাতেও আসতেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ ৷

মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, “সম্প্রতি কালিয়াচকের মোজমপুরে এক ব্যক্তির উপর ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছিল ৷ পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি মারা যান৷ সেই ঘটনায় গত 19 অগস্ট কালিয়াচক থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয় ৷ ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত আসাদুল্লা বিশ্বাস পলাতক ছিল ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়৷ দিল্লি পুলিশের সহযোগিতায় আমরা দিল্লি থেকেই তাঁকে ধরে নিয়ে এসেছি ৷ ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে মালদা নিয়ে আসা হয় ৷ গতকাল জেলা আদালতের সম্মতিতে তাঁকে 10 দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ৷ ধৃতের বিরুদ্ধে কালিয়াচক থানায় প্রায় 50টি মামলা রয়েছে ৷ ধৃতকে জেরা করে 18 অগস্টের খুনের কিনারা করার চেষ্টা চলছে ৷”

তবে আসাদুল্লার গ্রেফতারিতে আশঙ্কাও রয়েছে মোজমপুরে ৷ নেতার গ্রেফতারিতে তাঁর সাগরেদরা ফের এলাকা উত্তপ্ত করে তুলবে না-তো ? আরও খুনের ঘটনা ঘটবে না-তো? কালিয়াচকের এসডিপিও ফয়সাল রাজা অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, “মোজমপুরের উপর আমাদের কড়া নজর রয়েছে ৷ সেখানে পুলিশ পিকেটও রয়েছে ৷ কোনও বিশৃঙ্খলা যেন সেখানে আর না-হয়, তা দেখা হচ্ছে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.