আসানসোল, 31 অক্টোবর: ভূতেদের আনন্দ দিতে, খুশি করতে বিশেষ পুজোর আয়োজন ! ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় ভাত, মাংস ৷ আর তার সঙ্গে কারণ বা সুরা । শুনেছেন নাকি এমন পুজোর কথা ? ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় উঠে এল আসানসোলের মহিশিলায় ভূত চতুর্দশীর রাতে তেঁনাদের আহ্বানে এমনই বিশেষ পুজোআর্চা ।
আসানসোলের মহিশিলা কলোনির পিয়ালবেড়া এলাকা । অতীতে এই এলাকা একেবারে নির্জন ছিল এবং এই এলাকায় একটি শ্মশান ছিল । সেই শ্মশানে সাধনা করেছিলেন বামাক্ষ্যাপার অন্যতম প্রিয় শিষ্য বনমালী ভট্টাচার্য । বামাক্ষ্যাপার নির্দেশেই তিনি নাকি পিয়ালবেড়া শ্মশানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তারা মায়ের মন্দির । এক হাজার মাথার খুলির উপর নাকি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই মন্দির । তখন থেকেই ভূত চতুর্দশীর রাতে তারা মায়ের সাধনা করা হয় এই মন্দিরে । তার পাশাপাশি ভূতেদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয় ভোগ ।
বনমালী ভট্টাচার্য মারা গিয়েছেন বহু বছর হল । মহিশিলার পিয়ালবেড়া শ্মশান আর শ্মশান নেই । সেখানে এখন গড়ে উঠেছে জন ঘনবসতি । কিন্তু ভূত চতুর্দশীর রাতে শ্মশানের তিনটি গাছের তলায় আজও ভূতেদের ভোগ নিবেদন করা হয় । বনমালী ভট্টাচার্যের ছেলে বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য বর্তমানে ওই মন্দিরের সেবায়েত । তিনি ভূত চতুর্দশীর রাতে ওই গাছের তলায় গিয়ে ভূতেদের উদ্দেশে ভোগ নিবেদন করেন এবং ধ্যানস্থ হয়ে তিনি ভূতেদের নাম ধরে ডাকেন "শিবানী, শংকরী আয় আয়"।
বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বহু বছর ধরেই প্রাচীন এই রীতি চলে আসছে । তিন প্রহর ধরে ভূতেদের ভোগ নিবেদন করা হয়, তাদের আনন্দ দিতে । তারা এসে নাকি নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় । প্রথম ভোগ নিবেদন করা হয় রাত দশটায়, তারপর রাত একটায় এবং শেষে ভোররাতে ভোর চারটেয় । ভোগে থাকে ভাত, মাংস এবং সুরা । সুরা ছাড়া ভূতেদের ভোগ পছন্দ হয় না বলেই জানিয়েছেন বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য ।
তবে ভূতেদের ভোগ নিবেদন করার পাশাপাশি এদিন তারা মায়ের সাধনাও করা হয় । বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, "বাবার নির্দেশেই চতুর্দশীর দিন আমরা তারা মায়ের সাধনা করি আমাদের মন্দিরে । বহু মানুষের ভিড় হয় মন্দিরের এই পুজোয় । তবে ভূত চতুর্দশী রাতে পিয়ালবেড়া শ্মশানের সেই গাছের কাছে যেতে সাধারণ মানুষ আজও ভয় পান । গাছ থেকে যে শিবানী, শঙ্করীরা নেমে আসে ভোগ গ্রহণ করার জন্য।"