কাকদ্বীপ, 17 জুলাই: আবারও বাংলার মুকুটে পালক ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় নাসার গবেষণাগারে আয়োজিত হতে চলেছে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস প্রোগ্রাম ৷ সেখানে ডাক পেলেন বাংলার মেয়ে ঋত্বিকা মাইতি ৷ তিনি দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার কাকদ্বীপের সুভাষনগরের বাসিন্দা । বর্তমানে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী 23 বছরের ঋত্বিকা। রসায়নে স্নাতক করছেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর আলোচনা সভাতেও ঋত্বিকা ডাক পেয়েছিলেন । সেখানে তাঁর মৌলিক ভাবনা তুলে ধরেছিলেন । এবার নাসার বিজ্ঞানীদের সামনে মহাকাশ গবেষণার সম্পর্কে ঋত্বিকা তাঁর মৌলিক ভাবনা তুলে ধরবেন । জানা গিয়েছে, মার্কিন সংস্থা এক্সা এ্যারোস্পেস আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নাসার বিজ্ঞানীরা মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কে তরুণ ছাত্রছাত্রীদের হাতে-কলমে শিক্ষাদান করবেন । পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণার সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা তরুণ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মৌলিক ভাবনার কথা শুনবেন। ইতিমধ্যেই ঋত্বিকা মহাকাশ গবেষণার বিষয় নিয়ে তাঁর মৌলিক ভাবনাকে তুলে ধরে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেই প্রবন্ধ মার্কিন সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছিল।
প্রবন্ধটি পড়ে মার্কিন সংস্থার বিজ্ঞানীরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ঋত্বিকাকে মনোনীত করেছেন । এরপরই মার্কিন সংস্থা এক্সা এ্যারোস্পেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা অনলাইনে ঋত্বিকার ইন্টারভিউ নেন । সেই ইন্টারভিউতেও ঋত্বিকা পাশ করেন । এরপরই তাঁকে মার্কিন মুলুকে নাসার গবেষণা কেন্দ্রের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। মার্কিন সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো গত কয়েকদিন আগে সেই আমন্ত্রণ পত্র এসে পৌঁছেছে ঋত্বিকার হাতে ।
তবে ঋত্বিকার স্বপ্ন ডানা মেলার আগেই তা মুখ থুবড়ে পড়েছে আর্থিক সংকটের কাছে ৷ কাকদ্বীপ থেকে নাসায় পাড়ি দিতে কমপক্ষে সাত লক্ষ টাকার প্রয়োজন । সেই টাকা যোগার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঋত্বিকার পরিবারকে ৷ তাই এখন অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে ঋত্বিকার নাসা পাড়ি ৷ এ বিষয়ে ছাত্রী বলেন, "আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল যে আমি নাসার হয়ে কাজ করব ৷ কিন্তু সেই সুযোগ এসেও টাকার অভাবে আমি ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারছি না । যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে এসে সাহায্য করেন তাহলে খুবই ভালো হয় ।
ঋত্বিকার বাবা বিশ্বজ্যোতি মাইতির কথায়, "এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে কমপক্ষে সাত লক্ষ টাকার প্রয়োজন রয়েছে । আমি পেশায় একজন শিক্ষক । আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এই খরচ বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য । জানি না কীভাবে ঋত্বিকার স্বপ্নপূরণ হবে ।" ঋত্বিকার দাদা সৌরজ্যোতি মাইতিও উচ্চশিক্ষার সঙ্গে জড়িত ৷ তিনি বলেন,"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করতে যাচ্ছি অঙ্কে ৷ আমার পর বোনকে সেখানো পাঠানোয় পরিবারকে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ৷ তবে আশাবাদী কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা এগিয়ে এসে আমাদের সাহায্য করবে ৷"
ঋত্বিকার মা রীতা মাইতি জানান, ছোটবেলা থেকেই ঋত্বিকা পড়াশোনা নিয়েই থাকতেন ৷ সঙ্গে গানবাজনা করতেন ৷ মেয়ে নাসার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে এতে খুব খুশি তিনি ৷ তবে মেয়ের সেখানে যেতে পারবে কি না, ঠিক নেই ৷ কারণ তাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এত টাকা বহন করা সম্ভব নয় ৷ যদি কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তাহলেই মেয়ে নাসার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে ৷