কলকাতা, 3 মার্চ: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদ ছাড়ছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় ৷ আগামী মঙ্গলবার ইস্তফা দিতে পারেন বলে এক বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় ৷ একই সঙ্গে, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় ৷ তবে কোন দলের হয়ে প্রার্থী হবেন তা স্পষ্ট করেননি তিনি ৷ যদিও তৃণমূলে যোগ দেবেন না, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি ৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। পাশাপাশি বিচারপতির জন্য দরজা খোলা রাখছে বামেরা।
লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে ৷ ইতিমধ্যেই বিজেপি প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে ৷ যেখানে পশ্চিমবঙ্গের 20 জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি ৷ এখনও তৃণমূল বা অন্য়ান্য কোনও রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি ৷ এই অবস্থায় আচমকাই বোমা ফাটালেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ বিচারপতি পদ ছেড়ে এবার রাজনীতিতে আসতে চলেছেন তিনি ৷ তবে কোন দলে যাবেন তিনি তা এখনও স্পষ্ট করেননি বিচারপতি ৷ বেসরকারি এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিচারপতি বলেন, "বাম, কংগ্রেস, বিজেপি-আছে ৷ ছোট ছোট অনেক রাজনৈতিক দল আছে ৷ তারা যদি মনে করে, তো টিকিট দেবে ৷ আগামী মঙ্গলবার পদত্যাগ করব ৷ রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেব ৷ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধানবিচারপতিকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেব ৷"
একই সঙ্গে, তিনি বলেন, "রাজনৈতিক ময়দানেই আমি যাব ৷ শাসক দল বারবার চ্যালেঞ্জ করেছে ৷ রাজনীতির মাঠে ইতিহাসে মৌর্য সাম্রাজ্য দেখেছি, এখানে চৌর্য সাম্রাজ্য দেখছি ৷ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই ৷" বার বার বিভিন্ন মামলায় পর্যবেক্ষণ দিতে গিয়ে যে মন্তব্য এসেছে বিচারপতির মুখ থেকে তা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে ৷ রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে তাঁকে আক্রমণও করা হয়েছে বিস্তর ৷ সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, "বিভিন্ন সময়ে শাসকদলের পছন্দ না হলেই অসম্মানজনক কথা বলে হয়েছে ৷ কালো কোট পরে কিছু দালালও নেমে গিয়েছিল মাঠে ৷ শাসকদল বার বার চ্য়ালেঞ্জ করেছে, সেই মতো আমি রাজনীতির ময়দানেই নামছি ৷"
পরে বিকালে সাংবাদিক বৈঠকও করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় ৷ তখন তিনি বলেন, "সংবিধানের 217 নম্বর ধারা অনুয়ায়ী আমি পদত্যাগ করব ৷ এটা ফিরিয়ে নেওয়ার আর কোনও জায়গা নেই ৷ সংবাদমাধ্যমের কাছে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি ৷ আমার কাজের পিছনে আপনাদের যে সমর্থন পেয়েছি তার জন্য আমি মিডিয়াকে প্রণাম করছি ৷ পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ার কাছে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ৷ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেভাবে আপনারা লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন তার জন্য ধন্যবাদ ৷"
এদিন কুণাল ঘোষ এক্স হ্য়ান্ডেলে লিখেছেন, "বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নতুন ইনিংসের শুভেচ্ছা। এ ধরণের মানুষ রাজনীতিতে এলে ভালো। যে দলেই যান, তাতে আপনার আগের রায়, সংলাপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। আপনি তৃণমূল বিরোধী হিসেবেই ওসব বলেছেন, প্রমাণ হবে। যে দলেই যান, সেখানে দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ থাকবেই। সেগুলো তখন মেনে নিতে পারবেন তো? রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু অন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা থেকে যদি কেউ রাজনীতিতে আসেন, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতিতে তা স্বাস্থ্যকর বা ইতিবাচক। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছি।" কুণাল ঘোষ প্রসঙ্গেও এদিন মুখ খুলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় ৷ সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, "কুণাল ঘোষের সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে ৷ কুণালবাবুকে মানুষ হিসাবে আমার ভালো লেগেছে ৷ মুখপাত্র হিসাবে উনি যা বলেছেন সেটা ভিন্ন ৷ বাঙালির আবেগ আছে বলেই এখানে জাত-পাত এতটা প্রকট নয় ৷"
আরও পড়ুন
দুর্বল প্রার্থী দিতে কোটি টাকার ডিল তৃণমূল-বিজেপির ! বিস্ফোরক পোস্ট অনুপমের
ঘাটালে প্রার্থী হিরণ, নাম ঘোষণা হতেই দেওয়াল লিখন শুরু বিজেপির