কলকাতা, 30 মার্চ: মিমি চক্রবর্তী ৷ 2019 সালে টলিউড থেকে সরাসরি পৌঁছে গিয়েছিলেন পার্লামেন্টে ৷ তার পর পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর ৷ চলে এসেছে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন ৷ এবার ভোট রাজনীতির ময়দানে অনুপস্থিত তিনি ৷ তবুও যাদবপুরের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রিক আলোচনা থেকে রেহাই নেই তাঁর ৷ কারণ, মিমির কাজের খতিয়ানের উপর নির্ভর করেই ভোট-প্রার্থনা করতে হচ্ছে যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষকে ৷
তৃণমূল কংগ্রেসের অবশ্য দাবি, যথাসাধ্য কাজ করেছেন সাংসদ ৷ যেকোনও প্রয়োজনে তাঁকে পাশে পেয়েছেন সাধারণ মানুষ ৷ যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার জানালেন, এলাকায় পানীয় জল, নিকাশি ও হাসপাতালের সমস্যার সমাধান হয়েছে ৷ তাছাড়া যখন প্রয়োজন পড়েছে, তখনই এসেছেন সাংসদ ৷ এই পাঁচ বছরের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মিমি চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমকে সাফ বলেছিলেন, ''মানুষের করের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করে উন্নয়নমূলক কাজ করেছি ।''
যদিও স্থানীয় মানুষের মধ্যে এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে ৷ ইটিভি ভারত-এর ক্যামেরার সামনে মুখ খুললেও নাম প্রকাশ করতে চাননি কেউ কেউ ৷ তেমনই একজন বলেন, ‘‘মিমির দেখা পাওয়া যায়নি । তাই এবার অন্য দলে ভরসা রাখব ।" কেউ কেউ আবার যাদবপুরের উন্নয়ন নিয়ে সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন ৷ যাদবপুর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, "আমাদের সাংসদ ও বিধায়ক আমাদের এলাকায় অনেক কাজ করেছেন । আমরা এই দলের উপরেই ভরসা রাখব । দিদির পাশে থাকব ।" তিনিও নিজের নাম বলতে চাননি ৷
অনেকে আবার জানেনই না মিমি আদৌ কোনও কাজ করেছেন, নাকি করেননি ! তেমনই একজন সুরজ সমাদ্দার ৷ তিনি বলেন, "কিছু কাজ তো করেছেনই । না হলে এতদিন রইলেন কী ভাবে । এরপরে যিনি আসবেন, তিনি কী করেন সেটাই দেখার ।" ফলে যাদবপুরে তৃণমূলের নতুন প্রার্থী সায়নী ঘোষের উপর মানুষ ভরসা রাখবেন কি না, সেটাই এখন দেখার !
যদিও বরাবরের বামদুর্গ বলে পরিচিত এই লোকসভা আসন 2009 সাল থেকে নিজেদের দখলে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ কিন্তু প্রতিবারই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করেছেন ৷ কোনওবার আগের ভোটের জয়ী প্রার্থীকে পরেরবার তিনি টিকিট দেননি ৷ 2009 সালে যাদবপুরে জয়ী হন কবীর সুমন ৷ 2014 সালে তাঁকে তৃণমূল প্রার্থী করেনি ৷ বদলে সেবার এখানে তৃণমূল প্রার্থী করে সুগত বসুকে ৷ তিনি এখান থেকে জিতে সাংসদ হন ৷ 2019 সালে তাঁকে প্রার্থী না করে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে ভোটে দাঁড় করানো হয় এখান থেকে ৷ এবার সায়নী ঘোষ যাদবপুরের তৃণমূলের প্রার্থী ৷
তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই কেন্দ্রে যেমন আগের ভোটের জয়ী প্রার্থী দ্বিতীয়বার সুযোগ পাননি, তেমনই যাঁরা 2009 যাদবপুরের সাংসদ হয়েছেন, তাঁরাও দ্বিতীয়বার ভোটে লড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি ৷ তৃণমূলও তাঁদের আর ভোটে লড়ার জন্য জোর করেনি ৷ তাছাড়া যাদবপুরের ভোটারদের অধিকাংশকেই রাজনৈতিক সচেতন বলে মনে করা হয় ৷ অথচ, এই কেন্দ্রে 2009 সাল থেকে প্রতিবারই অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাই তৃণমূলের হয়ে লড়েছেন এবং সাংসদ হয়েছেন ৷
তাঁকে আর এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল ৷ যদিও মাসখানেক আগে তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের ইস্তফাপত্রও দেন বলে জানা গিয়েছিল ৷ যদিও সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে হলে, তা লোকসভার অধ্যক্ষের কাছেই দিতে হয় ৷ তিনি তেমন কোনও পদক্ষেপ করেছিলেন কি না, জানা যায়নি ৷ তবে নলমুড়ি আর জিরানগাছা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন পদ থেকে মিমি ইস্তফা দেন ৷ সংসদে শিল্পবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি ও শক্তি মন্ত্রক এবং নবীন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ মন্ত্রকের যৌথ কমিটির সদস্য ছিলেন যাদবপুরের সাংসদ । সেখান থেকেও তিনি পদত্যাগ করেন ৷
এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ''আমি মিমি চক্রবর্তী। আমার জীবনের অধিকাংশ সময় আমি অভিনয় দিয়ে মানুষের মনোরঞ্জন করেছি । কিন্তু বিগত 5 বছর, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্রের এক সাংসদ রূপে যতটা কাজ সাধারণ মানুষের জন্য করতে পেরেছি, মানুষের করের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করে উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, সৎপথে থেকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে গিয়েছি... ।"
তাঁর দাবি কতটা ঠিক, তার ফল ভোটবাক্সে দেখা যাবেই ৷ 20 বছর আগে 2004 সালে এই কেন্দ্রে হারতে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে ৷ সেই সময় যাদবপুরের সাংসদ ছিলেন কৃষ্ণা বসু ৷ তাঁকে হারিয়েছিলেন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী ৷ বিশ সাল বাদে যাদবপুরে বামেদের ব্যাটন সুজনের বদলে সৃজন ভট্টাচার্যর হাতে ৷ পাশাপাশি লড়াইয়ে রয়েছেন বিজেপির অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ও ৷ তাই শেষ পর্যন্ত এটাই দেখার, যে যাদবপুরে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় জায়ান্ট কিলার আখ্যা পেয়েছিলেন, সেই কেন্দ্র টানা চারবার দখল করে রাখতে পারে কি না তৃণমূল ৷
আরও পড়ুন: