আসানসোল, 26 সেপ্টেম্বর: স্কুলের পাঠ চুকিয়ে দেওয়ার পর খুব কম প্রাক্তনীই পুনরায় স্কুলে ফিরে আসেন । কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুনর্মিলনী উৎসব হয় ৷ তবে আসানসোলের কুলটি চক্রের মিঠানি হাইস্কুল যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল তা বিরল । গ্রামের সরকারি স্কুলে কৃতী প্রাক্তনীরা ফিরে এসে বিদ্যাসাগরের মূর্তি উপহার দিলেন স্কুলকে । পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 205তম জন্মদিবসে সেই মূর্তিটি বর্ণাঢ্যভাবে উন্মোচিত হল ।
সম্প্রতি বাংলা পক্ষ নামে একটি সংগঠন দাবি তুলেছে বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসকেই জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হোক । এই বছর রাজ্য শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে নির্দেশনামা জারি করা হয়েছে, প্রতিটি সরকারি স্কুলে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন করা হবে । সেই মতো রাজ্যের প্রায় প্রতিটি স্কুলেই বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালিত হয়েছে । কিন্তু দৃষ্টান্ত স্থাপন হল আসানসোলের কুলটি ব্লকের মিঠানি গ্রামে । মিঠানি গ্রামের মিঠানি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপিত হল । শুধু তাই নয়, এই মূর্তিটি স্কুলকে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন স্কুলের প্রাক্তনীরাই ।
গত জানুয়ারি মাসে স্কুলে প্রাক্তনীদের একটি পুনর্মিলনী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল । সেই পুনর্মিলনী উৎসবে বিনোদনের খরচ বাঁচিয়ে প্রাক্তনীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, স্কুলকে একটি উপহার দিতে হবে এবং সেই মতো বিদ্যাসাগরের একটি আবক্ষ মূর্তি স্কুলকে উপহার দেওয়া হল । মূর্তিটি বানিয়েছেন আসানসোলের বিশিষ্ট ভাস্কর ভীম পাল । অসাধারণ এই মূর্তিটি বিদ্যাসাগরের 205তম জন্মদিবসে মিঠানি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হল ।
প্রাক্তনীদের অন্যতম কিংশুক মুখোপাধ্যায় ৷ তিনি নিজেও ওই স্কুলের বর্তমান শিক্ষক ৷ তিনি জানালেন, "আজ আমার আবেগে কণ্ঠরোধ হয়ে আসছে । আমি এই স্কুলের প্রাক্তনী । কিন্তু তার পাশাপাশি আমি স্কুলের শিক্ষক । আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমি অবসর নেব । কিন্তু আমার ছাত্রছাত্রীরা ভেবেছে স্কুলে বিদ্যাসাগরের একটি মূর্তি বসানো যায়, সেটাই আমার জীবনে অন্যতম সেরা পাওয়া হয়ে রইল ।"
আরও এক প্রাক্তনী তথা বিশিষ্ট কবি অর্পিতা ঠাকুর জানালেন, "আমরা পুনর্মিলনী উৎসব কমিটি ঠিক করেছিলাম স্কুলকে কিছু একটা উপহার দেব । কিন্তু বিদ্যালয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তির চেয়ে ভালো উপহার আর কিছু হতে পারে না । আজ খুব ভালো লাগছে আমরা সেটা করতে পেরেছি ।"
মিঠানি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণাংশু মাজি জানালেন, "আমাদের স্কুলে কোনও মূর্তি ছিল না ৷ এবার বিদ্যাসাগরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রার্থনা করবে । এর চেয়ে ভালো দৃশ্য আর কীই বা হতে পারে । আমরা প্রাক্তনীদের ধন্যবাদ জানাই, তাঁরা এরকম একটি উপহার হল স্কুলকে দিয়েছেন ।"