জলপাইগুড়ি, 17 ডিসেম্বর: তাজমহল দেখতে আমরা সবাই ছুটে যাই সুদূর আগ্রায় ৷ তাজমহলের প্রতিকৃতির দেখা মেলে কলকাতার অদূরে নিউটাউনের ইকো পার্কে ৷ কিন্তু উলটো তাজমহল কখনও দেখেছেন কি? সেই সুযোগও মিলবে পশ্চিমবঙ্গেই ৷
কোথায় রয়েছে উলটো তাজমহল ?
জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাটের আপার কলাবাড়িতে অবস্থিত ডুয়ার্স ফান সিটি । ডায়না নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই ফান সিটিতে গেলেই এবার দেখা মিলবে উলটো তাজমহলের ৷
জলপাইগুড়ি জেলার পর্যটন মানচিত্রে নতুন পালক যুক্ত করল এই উলটো তাজমহল ৷ আপনিও কী যেতে চান উলটো তাজমহল দেখতে ? অবশ্যই যাওয়ার পথ বলে দেবে ইটিভি ভারত ৷
কীভাবে যাবেন ফান সিটিতে?
- কলকাতা থেকে ডুয়ার্স ফান সিটি যাওয়ার পথ
ফান সিটিতে যাওয়ার জন্য আপনাকে কলকাতা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপে আসতে হবে বানারহাটে স্টেশন । সেখান থেকে 10 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আপার কলাবাড়ি ডুয়ার্স ফান সিটি । বানারহাটে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়ি ভাড়া নিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন ফান সিটিতে ৷
- শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স ফান সিটি যাওয়ার পথ
অন্যদিকে আপনি আসতে পারেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকেও ৷ ট্রেন থেকে নেমে ভাড়া নিয়ে নিন ছোট গাড়ি ৷ তাতে করে চালসা পেরিয়ে নাগরাকাটা শুলকাপাড়া মোড় হয়ে বানারহাট পৌঁছতে হবে । বানারহাটের দেবপাড়া চা-বাগানের পাশ দিয়েই পৌঁছে যাওয়া যাবে আপার কলাবাড়িতে । শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স ফান সিটির দূরত্ব 90 কিলোমিটার । শিলিগুড়ি থেকেও বাসে চলে আসতে পারেন ফান সিটিতে ৷ নামতে হবে বানারহাটে । সেখান থেকে গাড়ির যাত্রা ৷
- বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ডুয়ার্স ফান সিটি
বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকেও পৌঁছে যেতে পারেন বানারহাটের আপার কলাবাড়ির ডুয়ার্স ফান সিটিতে ৷ তার জন্য করতে হবে গাড়ি ৷ বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ডুয়ার্স ফান সিটির দূরত্ব 105 কিলোমিটার ।
উলটো ঘর রয়েছে ডুয়ার্স ফান সিটিতে
কয়েকবছর হল ডুয়ার্সের বুকে তৈরি হয়েছে এই ফান সিটি ৷ আগেই এখানে ছিল উলটো ঘর, সুবিশাল হাওয়াই চটি, উলটো চিরুনির মতো দেখার জিনিস ৷ যা দেখতে ফান সিটিতে ইতিমধ্যে ভিড় জমাচ্ছেন দেশ-বিদেশের পর্যটক ৷ এবার সেখানে নতুন সংযোজন উলটো তাজমহল ৷ যাকে ঘিরেও পর্যটকদের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই ।
তাই তো যার মাথা থেকে এই নতুন ধরনের পর্যটন ক্ষেত্রের চিন্তা-ভাবনা এসেছে সেই ব্যবসায়ী শেখ জিয়াউর রহমান বলেন, "কলাবাড়ির ডুয়ার্স ফান সিটি একটি পর্যটন কেন্দ্র । আমরা সব সময় চেষ্টা করি এখানে নতুনত্ব কিছু আনার । আমরা আগে উলটো ঘর করেছি । যা খুব জনপ্রিয় হয়েছে । যা দেখতে প্রচুর মানুষ আসে । এ বছর নতুন কী করতে পারি সেটা চিন্তা ভাবনা করছিলাম, তখনই আগ্রার তাজমহলের কথা মাথায় আসে । তবে সোজা নয়, এবার উলটো তাজমহল করেছি ।"
উলটো করে তাজমহল কেন করা হল, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে । এ বিষয়ে ওই পর্যটন ব্যবসায়ী বলছেন, "উলটো করে তাজমহল করা হয়েছে বিনোদন দেওয়ার জন্যই । পর্যটকদের টানার উদ্দেশ্যেই উলটো তাজমহল করেছি । ডুয়ার্সের পর্যটন শিল্পকে আরও বাড়াতে পারি, সেই আশায় এটা করেছি ।"
রবিবার (15 ডিসেম্বর) 'আম্বুলেন্স দাদা' নামে পরিচিত পদ্মশ্রী করিমুল হকের হাতেই হল এই উলটো তাজমহলের উদ্বোধন ৷ সেই নিয়ে 'আম্বুলেন্স দাদা' বলেন, "আমার পরিবারকে নিয়ে উলটো ঘর দেখতে এসেছিলাম । কিন্তু এসে দেখি উলটো তাজমহল । আমাকে দিয়েই উদ্বোধন করানো হল এটির । আমি আবার চিন্তা করলাম আগ্রায় তাজমহল আছে । এটা আবার উলটো করেছে, কোন অপমানজনক কিছু হল না তো? এর জবাবটা রহমানকেই দিতে হবে । কারণ, ওই এটা তৈরি করেছে ।"
তাঁর সংযোজন, "আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম সোজা তাজমহল কেন করা হল না ? আমাকে জানিয়েছে, সোজা তাজমহল করলে আইনি জটিলতা হতে পারে ৷ তাই বিনোদনের জন্য উলটো করে তাজমহল করা হয়েছে । প্রচুর পর্যটক আসবে উলটো তাজমহল দেখতে । আর এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণে স্থায়ী প্রচুর ছেলে মেয়ে কাজ পেয়েছে ৷ তাদের রুটিরুজির ব্যবস্থা হয়েছে ।"
উলটো ঘর, সুবিশাল হাওয়াই চটি দেখতে এসেছিলেন দেশ বিদেশের পর্যটক ৷ কিন্তু উলটো তাজমহল দেখে তারা হতভম্ব হয়ে গেলেন ৷ সেরকম একজন নেপালের থেকে আগত পর্যটক চিত্ত কুমার রাই বলেন, "ভারতে এসেছি । খুব ভালো লাগছে । এখানে তাজমহলকে উলটো করে তৈরি করেছে । আমরা দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি । আমি যা ভেবেছিলাম তার থেকেও ভালো লেগেছে ।"
খুদে পর্যটক রিমজান শেরপার কথায়, "আমি উলটো ঘর দেখেছি, উলটো তাজমহল দেখেছি । আমার খুব ভালো লেগেছে ।" পর্যটক সরস্বতী লামা জানান যে উলটো ঘর, সুবিশাল হাওয়াই চটি তো ভালোই ৷ তবে উলটো তাজমহল তাঁদের খুবই মন কেড়েছে, সেকথাও জানাতে ভোলেননি তিনি ৷