ETV Bharat / state

এশিয়ায় নয়া প্রজাতির প্যাঙ্গোলিন খুঁজে পেল জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, কী নাম - INDO BURMESE PANGOLIN

এশিয়ায় নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার করল জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ৷ তার নাম 'মানিস ইন্দোবার্মানিকা'৷

ETV BHARAT
ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 9 hours ago

কলকাতা, 9 জানুয়ারি: প্যাঙ্গোলিন গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ! জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জেডএসআই) বিজ্ঞানীরা একটি নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিন চিহ্নিত করেছেন । যার নাম ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিন (মানিস ইন্দোবার্মানিকা)। এই নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার প্যাঙ্গোলিনের বিবর্তনীয় বৈচিত্র্যের ইতিহাস উল্লেখ করে ।

বিজ্ঞানীদের দাবি নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনটি প্রায় 34 লক্ষ বছর আগে চিনা প্যাঙ্গোলিন (মানিস পেন্টাডাক্টিলা) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল । বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলির মধ্যে ইন্দো-বার্মা অঞ্চল উল্লেখযোগ্য । সেখানে ভূ-জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে 'মানিস ইন্ডোবার্মানিকা'র বেড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে ।

ETV BHARAT
নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার (নিজস্ব চিত্র)

জেডএসআই-এর অধিকর্তা ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় গবেষক দলের প্রশংসা করে বলেন, "এই অসাধারণ আবিষ্কারটি জীববৈচিত্র্যের ঐতিহ্য এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীতার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেছে ৷ ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিনকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ । কারণ, এই প্যাঙ্গোলিন ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের পরিবেশগত অখণ্ডতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য ৷

তিনি আরও বলেন, "নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়ে অবদান রাখে না, বরং তাদের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কৌশল বা পদক্ষেপের যে প্রয়োজন রয়েছে তা উল্লেখ করে । নানা কারণে ভূ-জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে । প্রাণীকুল এক প্রকার হুমকির মুখে রয়েছে বলা চলে । তাই, এই রকম পরিস্থিতিতে এই নতুন চিহ্নিত প্রজাতির প্রাণী যাতে বেঁচে থাকে, তা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে ।" এর জন্য, স্থানীয় বাসিন্দা-সহ সংরক্ষণ সংস্থা এবং নীতিনির্ধারকদের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ।

সূত্রের খবর, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার গবেষক ড. মুকেশ ঠাকুরের নেতৃত্বে এই গবেষণায় মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম বিশ্লেষণের জন্য অত্যাধুনিক জিনোমিক টুল ব্যবহার করা হয়েছে । তিনি বলেন, "এই আবিষ্কার আধুনিক জেনেটিক সরঞ্জামের শক্তি প্রমাণ করে । কারণ, জীববৈচিত্র্যর মধ্যে যে লুকনো ঐতিহ্য আছে, তা এই সরঞ্জামের মাধ্যমে উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে । ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিন শুধুমাত্র এশিয়ান প্যাঙ্গোলিন সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে না, বরং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চল-ভিত্তিক সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও যে রয়েছে তা স্পষ্ট করে ।"

নতুন প্রজাতির এই প্রাণীর গবেষণায় ড. মুকেশ ঠাকুরের সঙ্গে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি স্কলার লেনরিক কনচোক ওয়াংমো । অরুণাচল প্রদেশের হলোটাইপ এবং প্যারাটাইপ নমুনা সনাক্ত করতে ওয়াংমো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত । এরকম গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ সকলে সহজে পায় না বলে জানান তিনি । তাঁর কথায়, "নতুন প্রজাতির প্রাণী প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে । তাদের বিচরণ ক্ষেত্র ও বাসস্থলগুলির অবক্ষয় রোধ করে সংরক্ষণের প্রয়োজন ।"

মূল গবেষণায় আর কী জানা গেল ?

এই প্যাঙ্গোলিনের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানতে পেরেছন যে, ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিন প্রায় 3.4 মিলিয়ন অর্থাৎ 34 লক্ষ বছর আগে চিনা প্যাঙ্গোলিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল । এই দুই প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে 0.038 জেনেটিক দূরত্ব এবং 3.8% বারকোড ব্যবধান রয়েছে । যা 'মানিস ইন্দোবার্মানিকা' যে চিনা প্যাঙ্গোলিন থেকে আলাদা তা প্রমাণ করে । একইসঙ্গে, এদের নির্দিষ্ট বাসস্থান ও বিচরণ ক্ষেত্রকেও চিহ্নিত করে ।

গবেষণা পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্লিওসিন এবং প্লাইস্টোসিন যুগে প্রজাতিগুলি বিচ্ছিন্নভাবে জলবায়ু ও ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিবর্তিত হয়েছিল । ফলে এগুলি মূলত, অরুণাচল প্রদেশ, অসমের কিছু অংশ ছাড়াও নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমারের কিছু অংশে পাওয়া যায় ।

গবেষক ড. মুকেশ ঠাকুর বলেন, "ইন্দো-বর্মী প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কারের ফলে ওই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণের যে প্রয়োজনীতা রয়েছে তা উল্লেখ করে । কারণ, প্যাঙ্গোলিন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি ।"

কলকাতা, 9 জানুয়ারি: প্যাঙ্গোলিন গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ! জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জেডএসআই) বিজ্ঞানীরা একটি নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিন চিহ্নিত করেছেন । যার নাম ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিন (মানিস ইন্দোবার্মানিকা)। এই নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার প্যাঙ্গোলিনের বিবর্তনীয় বৈচিত্র্যের ইতিহাস উল্লেখ করে ।

বিজ্ঞানীদের দাবি নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনটি প্রায় 34 লক্ষ বছর আগে চিনা প্যাঙ্গোলিন (মানিস পেন্টাডাক্টিলা) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল । বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলির মধ্যে ইন্দো-বার্মা অঞ্চল উল্লেখযোগ্য । সেখানে ভূ-জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে 'মানিস ইন্ডোবার্মানিকা'র বেড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে ।

ETV BHARAT
নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার (নিজস্ব চিত্র)

জেডএসআই-এর অধিকর্তা ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় গবেষক দলের প্রশংসা করে বলেন, "এই অসাধারণ আবিষ্কারটি জীববৈচিত্র্যের ঐতিহ্য এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীতার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেছে ৷ ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিনকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ । কারণ, এই প্যাঙ্গোলিন ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের পরিবেশগত অখণ্ডতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য ৷

তিনি আরও বলেন, "নতুন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কার শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়ে অবদান রাখে না, বরং তাদের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কৌশল বা পদক্ষেপের যে প্রয়োজন রয়েছে তা উল্লেখ করে । নানা কারণে ভূ-জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে । প্রাণীকুল এক প্রকার হুমকির মুখে রয়েছে বলা চলে । তাই, এই রকম পরিস্থিতিতে এই নতুন চিহ্নিত প্রজাতির প্রাণী যাতে বেঁচে থাকে, তা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে ।" এর জন্য, স্থানীয় বাসিন্দা-সহ সংরক্ষণ সংস্থা এবং নীতিনির্ধারকদের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ।

সূত্রের খবর, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার গবেষক ড. মুকেশ ঠাকুরের নেতৃত্বে এই গবেষণায় মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম বিশ্লেষণের জন্য অত্যাধুনিক জিনোমিক টুল ব্যবহার করা হয়েছে । তিনি বলেন, "এই আবিষ্কার আধুনিক জেনেটিক সরঞ্জামের শক্তি প্রমাণ করে । কারণ, জীববৈচিত্র্যর মধ্যে যে লুকনো ঐতিহ্য আছে, তা এই সরঞ্জামের মাধ্যমে উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে । ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিন শুধুমাত্র এশিয়ান প্যাঙ্গোলিন সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে না, বরং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চল-ভিত্তিক সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও যে রয়েছে তা স্পষ্ট করে ।"

নতুন প্রজাতির এই প্রাণীর গবেষণায় ড. মুকেশ ঠাকুরের সঙ্গে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি স্কলার লেনরিক কনচোক ওয়াংমো । অরুণাচল প্রদেশের হলোটাইপ এবং প্যারাটাইপ নমুনা সনাক্ত করতে ওয়াংমো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত । এরকম গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ সকলে সহজে পায় না বলে জানান তিনি । তাঁর কথায়, "নতুন প্রজাতির প্রাণী প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে । তাদের বিচরণ ক্ষেত্র ও বাসস্থলগুলির অবক্ষয় রোধ করে সংরক্ষণের প্রয়োজন ।"

মূল গবেষণায় আর কী জানা গেল ?

এই প্যাঙ্গোলিনের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানতে পেরেছন যে, ইন্দো-বার্মিজ প্যাঙ্গোলিন প্রায় 3.4 মিলিয়ন অর্থাৎ 34 লক্ষ বছর আগে চিনা প্যাঙ্গোলিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল । এই দুই প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে 0.038 জেনেটিক দূরত্ব এবং 3.8% বারকোড ব্যবধান রয়েছে । যা 'মানিস ইন্দোবার্মানিকা' যে চিনা প্যাঙ্গোলিন থেকে আলাদা তা প্রমাণ করে । একইসঙ্গে, এদের নির্দিষ্ট বাসস্থান ও বিচরণ ক্ষেত্রকেও চিহ্নিত করে ।

গবেষণা পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্লিওসিন এবং প্লাইস্টোসিন যুগে প্রজাতিগুলি বিচ্ছিন্নভাবে জলবায়ু ও ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিবর্তিত হয়েছিল । ফলে এগুলি মূলত, অরুণাচল প্রদেশ, অসমের কিছু অংশ ছাড়াও নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমারের কিছু অংশে পাওয়া যায় ।

গবেষক ড. মুকেশ ঠাকুর বলেন, "ইন্দো-বর্মী প্যাঙ্গোলিনের আবিষ্কারের ফলে ওই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণের যে প্রয়োজনীতা রয়েছে তা উল্লেখ করে । কারণ, প্যাঙ্গোলিন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.