মালদা, 2 মার্চ: মালদা জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নাবালিকা মায়ের মৃত্যুর হার ৷ বাড়ছে নাবালিকা গর্ভবতীর সংখ্যাও ৷ স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষাতেই এই তথ্য উঠে এসেছে ৷ এই নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন৷ প্রশ্ন উঠেছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের ভূমিকা নিয়েও ৷ নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে প্রশাসনের কড়া উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সবাই ৷
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, 2021-22 বর্ষে মালদা জেলায় নাবালিকা মায়ের মৃত্যুর হার ছিল মোট মৃত্যুর 23.61 শতাংশ ৷ 2023-24 বর্ষে সেই হার বেড়ে দাঁড়ায় 27.14 শতাংশে ৷ আর চলতি বছরের প্রথম দু’টি মাসে 15 থেকে 24 বছর বয়সী মায়ের মৃত্যুর হার প্রায় 55 শতাংশ ৷ এর মধ্যে সিংহভাগের বয়স 18 বছর হয়নি বলেই স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে ৷ বছর শেষে এই পরিসংখ্যান কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে, তা চিন্তা করে এখন থেকেই আতঙ্কিত স্বাস্থ্যকর্তারা ৷
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি বলেন, “শেষ যে সার্ভে হয়েছিল তাতে মালদা জেলায় গর্ভবতীদের মধ্যে প্রায় 21 শতাংশ নাবালিকা ছিল ৷ বর্তমানে সেই হার অবশ্য 19 শতাংশে নেমে এসেছে ৷ কিন্তু এই পরিসংখ্যানও যথেষ্ট চিন্তার ৷ সবচেয়ে বড় বিষয়, মালদা জেলায় 15 থেকে 19 বছর বয়সী মেয়েদের মাতৃকালীন অবস্থায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান ৷ এই পরিসংখ্যান আরও বেশি৷ নাবালিকা মায়ের মৃত্যুর হার প্রায় 24 শতাংশ ৷ আর যদি আমরা 15 থেকে 24 বছর বয়সকে এই পরিসংখ্যানে ধরি, সেক্ষেত্রে মাতৃ-মৃত্যুর হার প্রায় 35 শতাংশ ৷ একটি বিষয় পরিষ্কার, আমাদের নাবালিকা বিয়ে ও নাবালিকা গর্ভবতীর সংখ্যা কমাতেই হবে ৷”
প্রশ্ন অন্য জায়গায়৷ বাল্যবিবাহ রোধে রাজ্য সরকারের অন্যতম প্রধান অস্ত্র কন্যাশ্রী প্রকল্প ৷ কেন্দ্রের ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পও বাল্যবিবাহ বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই তৈরি ৷ কিন্তু সরকারি প্রকল্প কি সঠিকভাবে জেলায় প্রয়োগ হচ্ছে ? নাবালিকা বিয়ে ঠেকাতে প্রশাসনের তরফে গ্রামেগঞ্জে প্রচার অভিযান চালানো হয় ৷ করা হয় সচেতনতা শিবিরও ৷ কিন্তু সেসব কতটা কাজে আসছে, স্বাস্থ্য দফতরের এই পরিসংখ্যান সামনে আসার পর, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক ৷
মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান সত্যিই ভীষণ উদ্বেগজনক ৷ প্রশাসনের তরফে বাল্যবিবাহ রোধে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ৷ কোথাও নাবালিকা বিয়ের খবর জানা গেলে প্রশাসন ও পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে তা বন্ধ করছে ৷ কিন্তু বাল্যবিবাহ রোধে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে ৷ আরও সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের ৷ স্বাস্থ্য দফতরের এই পরিসংখ্যান সেকথাই বলছে ৷”
আরও পড়ুন: