নামখানা, 7 ডিসেম্বর: নেই মাথার উপর স্থায়ী ছাদ ৷ শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা ৷ গোয়ালঘরে চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ৷ ঘটনাটি দক্ষিণ 24 পরগনার নামখানা ব্লকের ৷
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা ও সহায়িকার অভিযোগ, বিগত 20 বছর আগে এই শিবনগর আবাদ 319 নম্বর পূর্ণ প্রতিভা আইসিডিএস সেন্টারটি গড়ে ওঠে । তারপর থেকেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কোনও স্থায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফে । এলাকার এক ব্যক্তি বিনা শর্তে জায়গা দান করেন, কিন্তু ঘর তৈরি না-হওয়ায় সমস্যায় পড়েন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী থেকে অভিভাবকরা সকলেই ।
শেষ পর্যন্ত কল্যাণী তুঙ্গ নামে একজন এলাকাবাসী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালানোর জন্য তাঁদের বাড়ির পাশে গোয়ালঘর দেন । সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি । অভিযোগ, বহুবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা কিংবা শিক্ষিকা পঞ্চায়েত এবং বিডিও অফিসে বিষয়টি জানিয়েছেন ৷ তবে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ ৷ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাড়ি গড়ে ওঠেনি ৷ যার ফলে বর্ষা, শীত কিংবা গরমের সময় মুশকিলে পড়ছেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা ও শিক্ষিকা ৷
গোয়ালঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্না করতে হচ্ছে ৷ খাওয়ার তৈরির সময় পোকা বা টিকটিকি পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় ৷ এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের স্থায়ী ঘর না থাকার কারণে কেবলমাত্রই খাবার দেওয়া হয় ৷ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কোনও প্রকারে পড়াশোনা করানো হয় না । এলাকাবাসীদের দাবি, অবিলম্বে এই জায়গায় একটি স্থায়ী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি করা হোক ।
তবে এই বিষয়ে নামখানার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিষেক দাস বলেন, "অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বিষয়টি নজরে এসেছে ৷ এই নিয়ে আগে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি ৷ তবে জানার পর খুব শীঘ্রই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ৷ এর পাশাপাশি খুব শীঘ্রই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি যাতে নির্মাণ করা যায়, সেদিকেও নজর দেওয়া হবে ।"
এই বিষয়ে এক অভিভাবিকা প্রতিমা গিরির কথায়, "অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য কোনও ঘর নেই । এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি । বর্ষার সময় প্রচণ্ড অসুবিধা হয় ছাত্র-ছাত্রীদের । ভয়ে আমরা বাচ্চাদের কেন্দ্রে পাঠাই না ৷ আমরা চাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সংস্কার করে ভালোভাবে পঠন পাঠানো হোক ।"
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা মহুয়া বাগ বলেন, "খুব কষ্টের মধ্য়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালাচ্ছি ৷ বাচ্চাদের বসার জায়গা নেই ৷ পড়ানোর জায়গা নেই ৷ বর্ষার সময় রান্নার সমস্যা হয় ৷ এমনকি বন্ধও থাকে রান্না ৷ পঞ্চায়েত ও প্রধানকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি ৷ কেবল প্রতিশ্রুতিই মিলছে ৷"
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা আশালতা পাত্র বলেন, "এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কোনও পরিকাঠামো নেই লোকের গোয়াল ঘরে, এক টুকরো জায়গার মধ্যে আমাদের রান্নার কাজ করতে হয় । বারবার পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসে জানিয়েও কোনোরকম লাভ হয়নি । আমরা চাই যাতে সরকারি সাহায্যে এবং সরকারি পরিকাঠামোয় আইসিডিএস সেন্টারটি গড়ে উঠুক ৷ বাচ্চারা পড়াশোনার পাশাপাশি যাতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাক সেদিকেই প্রশাসনিক আধিকারিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।"
যদিও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এই হাল নিয়ে শাসকদলের সমালোচনায় সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ বিজেপি নেতা অনুপম সামন্ত বলেন, "সরকারি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র কীভাবে গোয়ালঘরে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলতে পারে, সেটি খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় । এর দ্রুত তদন্ত করে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, সেদিকে সরকারকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত । সরকারি খিচুড়ি স্কুল এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলতে পারে না । যেখানে শিশুদের খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে সেটাকে অনেক সুরক্ষিতভাবে রাখতে হয় । কিন্তু সেই সুরক্ষার বিষয় কোন হেলদোল নেই প্রশাসনিক আধিকারিকদের ।"
ভূমিদানকারী পরিবারের সদস্য কল্যাণী তুঙ্গের বক্তব্য, "ওঁরা কাদার মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালাতেন ৷ গরু নেই বলে তাই গোয়ালঘরটা দিই ৷ বছরের পর বছর ধরে বিনা পয়সায় ঘরটা দিয়ে রেখেছি ৷ ওখানেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে ৷ আমার বাবা জায়গা দিয়ে গিয়েছেন, তাও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হয়নি ৷"