মালদা, 29 নভেম্বর: রেলের মাধ্যমে বাড়ছে মানব পাচার ৷ সম্প্রতি পূর্ব রেলের তরফে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে সে কথা জানানো হয়েছে ৷ পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গোটা জোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা ঘটেছে মালদা রেল ডিভিশনে ৷ গত এক মাসে মালদা ডিভিশন থেকে পাচার হওয়ার আগে উদ্ধার করা হয়েছে 30 জনকে ৷ এদের মধ্যে যেমন নাবালক ও যুবক রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে দু’চারজন কিশোরীও ৷ এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে 10 জন পাচারকারীকে ৷ ধৃতদের জেরা করে পাওয়া গিয়েছে একাধিক তথ্য ৷ যা রীতিমতো উদ্বেগের ৷
পূর্ব রেলের মালদা ডিভিশনের ম্যানেজার মণীশকুমার গুপ্তা জানিয়েছেন, "মানব পাচার রুখতে রেলের তরফে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷ এক্ষেত্রে আরপিএফ সতর্ক রয়েছে ৷ ট্রেনে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের একা দেখা গেলেই তাদের জেরা করা হয় ৷ অবশ্য শুধু আরপিএফ নয়, মানব পাচার রুখতে সতর্ক থাকে রেল পুলিশও ৷ গত এক মাসে এই ডিভিশন থেকে 30 জন নাবালক, যুবক, এমনকি কয়েকজন নাবালিকাকেও উদ্ধার করা হয়েছে ৷ 10 জন পাচারকারী ধরা পড়েছে ৷ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷ ট্রেনে মানব পাচার রুখতে আমরা সবসময় সতর্ক রয়েছি ৷"
পাচারকারীদের জেরা করে আরপিএফয়ের তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পেরেছেন, মানব পাচারের নেটওয়ার্ক গোটা দেশে বিস্তৃত ৷ এদের সফট টার্গেট মূলত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েরা ৷ কারণ, তাদের মধ্যে প্রচুর অর্থ উপার্জনের চাহিদা থাকে ৷ সোশাল মিডিয়ায় এসব ছেলেমেয়েদেরই টার্গেট করে পাচারকারীরা ৷
ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব পাতিয়ে প্রথমে তারা ছেলেমেয়েদের আস্থা অর্জন করে ৷ তারপর তাদের সিনেমা বা টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের টোপ দেওয়া হয় ৷ রঙিন স্বপ্নের জাল বোনা ছেলেমেয়েরাও সেই টোপ গিলে নেয় ৷ বাড়ি থেকে পালিয়ে তারা পাচারকারীদের হাতে ধরা দেয় ৷ এরপর তাদের মুম্বই কিংবা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে দেওয়া হয় ৷ কখনও কখনও পরিবারের তৎপরতায় পুলিশ কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পারলেও বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরই আর খোঁজ পাওয়া যায় না ৷
বিষয়টি জানার পরেই তৎপর থাকেন ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরপিএফ জওয়ানরা ৷ কোনও অল্পবয়সি ছেলেমেয়েকে ট্রেনে একা ভ্রমণ করতে দেখলেই তাঁরা তাঁদের জেরা করেন ৷ এক্ষেত্রেও অবশ্য তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয় ৷ অনেক ছেলেমেয়ে নিজেদের বয়স বাড়িয়ে বলে ৷ অনেকে আবার সঙ্গে থাকা পাচারকারীদের মামা কিংবা মাসি পরিচয় দেয় ৷ অনেকে বলে, তারা ক্যাটারিংয়ের কাজে মামার সঙ্গে ভিনরাজ্যে যাচ্ছে ৷ আবার কেউ দাবি করে, বিউটি পার্লারে কাজ করার জন্য মাসির হাত ধরে সে অন্য জায়গায় যাচ্ছে ৷
এমন ঘটনা দেখলে আরপিএফ জওয়ানরা প্রধানত তাঁদের দীর্ঘ জেরা করেন ৷ তখনই সত্যি ঘটনা বেরিয়ে আসে ৷ পরিস্থিতি বুঝে ওই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে থাকা পাচারকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ তবে তারা সফল হতে পারে না বললেই চলে ৷ এসব ক্ষেত্রে রেল পুলিশের তরফে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারার পাশাপাশি জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট ও শিশু শ্রম নিষিদ্ধকরণের ধারায় মামলা রুজু করা হয় ৷ উদ্ধার হওয়া ছেলেমেয়েদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে পাঠানো হয় ৷