কলকাতা, 29 জানুয়ারি: নরেন্দ্রপুর বলরামপুর এমএন বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকদের উপরে হামলার ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদের স্কুলে ঢোকার উপর আপাতত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল কলকাতা হাইকোর্ট । বহিরাগতদের আক্রমণের ঘটনায় সোমবার বারুইপুরের এসডিওকে আপাতত ওই স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীনও স্কুলে প্রধান শিক্ষক স্কুলে ঢুকতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ।
বারুইপুরের এসপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে এই মামলার তত্ত্বাবধান করতে । যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ সহকারী শিক্ষকদের, সেই প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য আগামিকাল মঙ্গলবার আদালতকে জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। 'কারা স্কুলে তাণ্ডব চালাল, পঞ্চায়েত সদস্য ?' তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে বলে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। এছাড়া অনিন্দ্য কুমার চট্টোপাধ্যায় ও তপন কুমার সিনহা-শিক্ষা দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ও ডেপুটি ডিরেক্টরকে আগামিকাল মঙ্গলবার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ কারণ স্কুলের বিষয়ে তাঁরা যে অনুসন্ধান করতে গিয়েছিলেন তা যথাযথ হয়নি বলে উল্লেখ বিচারপতি বসুর ।
বলরামপুর এমএন বিদ্যামন্দিরে ঝামেলার সৃষ্টি হয় প্রধান শিক্ষককে ঘিরে ৷ দীর্ঘদিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল ৷ ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি ছাড়া লক্ষ লক্ষ টাকা স্কুলের তহবিল থেকে তোলার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, নিজের ইচ্ছেয় তিনি স্কুলের প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিয়েছেন ৷ এমনকী শিক্ষকদের সার্ভিস বুক রিনিউ করতে দেন না ইচ্ছাকৃত । পরিপ্রেক্ষিতে 27 জানুয়ারি প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বহিরাগত গুণ্ডারা স্কুলে ঢুকে শিক্ষকদের মারধর করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নরেন্দ্রপুর থানার আইসিকে ডাকা হলেও তিনি বেলা 12টা 15 নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন । দু'জনকে নামমাত্র গ্রেফতার করা হয় ।
দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের এই পরিস্থিতির ব্যাপারে থানায় জানানো হলেও পুলিশ অসহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ । এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্কুলের একাধিক সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকা । স্কুলের এহেন ঘটনায় 2023 সালের অক্টোবর মাসে ডিআই একটা রিপোর্ট দিয়েছিলেন । যদিও সেই রিপোর্টে কোথাও শিক্ষকরা আক্রান্ত এই বিষয়ের উল্লেখ ছিল না । পাশাপাশি স্কুলের অর্থনৈতিক বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য নভেম্বর মাসে একজন অডিটর নিয়োগ করেছিল আদালত ৷ কিন্তু স্কুলে ঝামেলার জন্য সেই অডিটরও নিজের কাজ করতে পারেননি ৷
বিচারপতি বসু সোমবার এই ঘটনায় আইসি নরেন্দ্রপুরকে বেলা তিনটের সময় হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবীও যাতে পুলিশকে খবর দেয় ফোনে সেই নির্দেশ দেন । আইসি আদালতে এসে জানান, সনু মণ্ডল এবং মহেশ্বর নাড়ু নামে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আইসিকে বিচারপতি বলেন, "এফআইআরে নাম রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান শিক্ষকের, এদের গ্রেফতারের কী হবে ? আজকের মধ্যেই গ্রেফতার করতে হবে ৷ পারবেন ?" উত্তরে আইসি জানান, চেষ্টা করবেন । অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের আইনজীবীর অবশ্য বক্তব্য, তিনি কোনওভাবেই যুক্ত নন । তিনিই ঝামেলা মেটাতে পুলিশকে ডেকেছিলেন ।
অন্যদিকে, মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী সুমন দে জানান, প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকদের অনবরত মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছেন । এখনও হুমকি দিচ্ছেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য । সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পনা করে শিক্ষকদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে । শিক্ষকরা কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশন, ডিআইকে জানিয়েছিলেন স্কুলের পরিস্থিতি নিয়ে । কিন্তু তারপরেও সুরাহা মেলেনি । 21 জানুয়ারি একটা মিটিং চলাকালীন প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকদের মৃত্যুর হুমকি দেন । প্রধান শিক্ষকের মদতে লোকাল সমাজবিরোধীরা 27 জানুয়ারি স্কুলে প্রবেশ করে ৷ শিবনাথ চাটুই নামে এক শিক্ষককে প্রবল মারধর করার পাশাপাশি শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ ৷ পুলিশকে ঘটনার কথা সঙ্গে সঙ্গে জানানো হলেও দেরিতে এসে মাত্র দু'জনকে গ্রেফতার করে ৷
এদিকে কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা । এই পরিস্থিতিতে স্কুলে যাতে কোনও সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেই বিষয়ে কী পদক্ষেপ করেছে জানতে চাওয়া হলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী কোয়েলী ভট্টাচার্য জানান, আদালত যদি নির্দেশ দেয় তারা ওই প্রধান শিক্ষকের জায়গায় অন্য কাউকে প্রধান শিক্ষকের পদে বসাতে পারেন । আদালত ওই ব্যক্তিকে সাসপেণ্ড করার নির্দেশ দিলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাজ সহজ হয়ে যায় । আপাতত মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনার জন্য ওই স্কুলে একজন ইনচার্জকে নিয়োগ করতে প্রস্তুত পর্ষদ ।
আরও পড়ুন :