কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো আসতে বাকি আর 20 দিন । এই সময় চরম ব্যস্ততা থাকে কলকাতার বাজারগুলিতে ৷ কেনাকাটার ভিড়ের ঠেলায় পা রাখা দায় হয়ে পড়ে ৷ তবে এবারে সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি ধরা পড়ল হাতিবাগান থেকে গড়িয়াহাটে ৷ খাঁ খাঁ করছে বাজার । হাতেগোনা কয়েকজন ক্রেতা ঘুরে বেড়াচ্ছেন দোকানে দোকানে ৷
আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রতিবাদীরা রোজ নামছেন রাস্তায় ৷ আরেক পক্ষ আবার মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফেরার ডাকে সাড়া দিয়ে লাগাতার সওয়াল করে চলেছেন । আর এই দুইয়ের মাঝে জেরবার ছোট হকার থেকে বড় ও মাঝারি দোকানদাররা । কোভিড পরবর্তী বছরগুলোতেও ব্যবসা একরকম চলেছে ৷ তবে এবার তিন ভাগের একভাগও বিক্রিবাটা হবে কি না তা নিয়ে তীব্র সংশয়ে রয়েছেন বিক্রেতারা । তাঁরা আবেদন করেছেন, প্রতিবাদ হোক, তাঁদের দিকেও একবার চেয়ে দেখুন আন্দোলনকারীরা ।
একমাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও আরজি করের বিচার চেয়ে আন্দোলনে বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি । উত্তরের শ্যামবাজার বা দক্ষিণের গড়িয়াহাট প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে । যখন তখন থমকে যাচ্ছে যানবাহনের চাকা । আর সেই ভয়ে অনেকেই ওই চত্বরে পা ফেলতে চাইছেন না । এড়িয়ে যাচ্ছেন গড়িয়াহাট, হাতিবাগান থেকে নিউমার্কেট চত্বর ।
তীব্র যানজট, দীর্ঘ সময় আটকে থাকার ভয়ে রাস্তাঘাটে বেরোতে চাইছেন না অনেক ক্রেতা । আবার শুধুই যে দুর্ভোগের জন্য তেমন নয়, প্রতিবাদে শামিল অনেকেই এবার উৎসব সেভাবে পালন করার বিপক্ষে । এই আবহে আবার সঙ্গী হয়েছে নিম্নচাপের জেরে টানা তিন-চারদিন বৃষ্টি । ফলে বিক্রিবাটা যে একদম লাটে উঠেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
ক্রেতা রিক্তা বণিক বলেন, "আমার এত বছর বয়সে পুজোর মুখে গড়িয়াহাটে এমন ফাঁকা ছবি দেখিনি । আরজি কর আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে জনমানসে । প্রতিবাদটা করা দরকার । উৎসবের মধ্যে দিয়েই তা হবে । কেনাকাটা জরুরি মনে করলেই জরুরি, না মনে করলে নয় ।"
একটি দোকানের কর্মী ডলি সাহার কথায়, "কারও বাজার ভালো যাচ্ছে না । আরজি কর আবহে অনেক মানুষ কেনাকাটা করছে না । আবার অনেকে আসতে পারছেন না । কোভিডের পরেও বাজার পেয়েছি । কিন্তু এবার তার থেকেও খারাপ । তার উপরে টানা বৃষ্টি, মেঘলা আবহাওয়া ।"
কয়েক হাজার হকার শুধু নয়, কয়েক হাজার ছোট বড় দোকানদার ও তাঁদের কর্মীদেরও রীতিমতো উৎকন্ঠায় কাটছে দিন । কবে ফের উৎসবের আঁচ পড়বে বাজারে । বিক্রিবাটা ফিরবে স্বাভাবিক ছন্দে । দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অনেকেই মনে করছেন, কোনও ভাবে যে টাকা ধার করে মালপত্র তোলা হয়েছে, সেই টাকা উঠে আসুক বাজার থেকে । যাতে ঋণের ফাঁসে জর্জরিত হতে না হয় ।
এই প্রসঙ্গে বিক্রেতা সুমন সাহা বলেন, "বাজারের অবস্থা খুব খারাপ । আরজি করের ঘটনা মর্মান্তিক । কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে একাংশের মানুষ রাস্তায় যেভাবে আন্দোলন করছেন, তাতে সাধারণ মানুষ এ দিকে আসছেন না । দিনের পর দিন এমনটাই চলছে । প্রতিবছর যে টাকার জিনিসপত্র বিক্রি করি, এবারে তার চার ভাগের এক ভাগ হবে কি না সন্দেহ আছে । আন্দোলনকারীদের কাছে আবেদন, এই ক'টা দিন রেহাই দিন । আমাদের যা অবস্থা হয়েছে আর্থিক ক্ষত কবে মুছবে জানি না । আমরা ব্যাংকের ঋণ পাই না । বাজার থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়েছি । দেওয়ালে পিঠ থেকে গিয়েছে ।"
