মালদা, 12 সেপ্টেম্বর: ঘরের বাথরুম থেকে ব্যক্তির পচাগলা দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের কোকলামারি গ্রামে৷ দেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে বৃহস্পতিবার সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের ৷ তাঁরা ঘর খুলে দেহটি দেখতে পান ৷ এনিয়ে রহস্যও দানা বেঁধেছে ৷ ওই বাড়িতে পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকলেও তাঁরা কেন বিষয়টি জানতে পারেননি তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷ খবর পেয়ে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুখুরিয়া থানার পুলিশ ৷ মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে মৃত ব্যক্তির এক ভাইকে ৷
জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম অজয় মণ্ডল ৷ বয়স 46 বছর ৷ কোকলামারি গ্রামের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তাঁরা ৷ অজয় একটি ফাস্ট ফুড সংস্থায় কাজ করতেন ৷ একই বাড়িতে পরিবার নিয়ে বাস করেন তাঁর ভাই শঙ্কর মণ্ডলও ৷ এদিন সকালে প্রতিবেশীরা অজয়ের ঘর থেকে দুর্গন্ধ পান ৷ তারাই ঘরের দরজা খুলে বাথরুমে অজয়ের ঝুলন্ত পচাগলা দেহ দেখতে পান ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুখুরিয়া থানার পুলিশ ৷ পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে অজয়ের দীর্ঘদিনের বিবাদ ছিল ৷ অভিযোগ, সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিলেন শঙ্কর ৷ এই ঘটনায় অজয়ের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী নন্দিতা চলে যান বাবার বাড়ি ৷ তবে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি তাঁদের ৷ প্রায় প্রতিদিনই মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেন অজয় ৷
ঘটনার খবর পেয়ে এদিন মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন নন্দিতা ৷ তিনি বলেন, “সকালেই খবর পাই, বাথরুমে ওর পচাগলা ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছে ৷ খবর পেয়ে এখানে চলে আসি ৷ সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোনদের সঙ্গে ওর বিবাদ ছিল ৷ শ্বশুরমশাই মারা যাওয়ার আগে কোনওভাবে দেওর সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিল ৷ এনিয়ে গ্রামে অনেকবার সালিশি সভাও হয়েছে ৷ এসব ঝামেলার জেরেই মেয়েকে নিয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে যাই ৷ তবে মেয়ের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলত ৷”
মেয়ে সুপ্রিয়া বলেন, “বাবার নিজের ফোন ছিল না ৷ অন্যের ফোন থেকে আমার সঙ্গে কথা বলত ৷ যার ফোনে বাবা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করত, তাকে দু’তিনদিন ধরেই বারবার বলছি বাড়িতে একটু খোঁজ নিতে ৷ কারণ, এই ক’দিন বাবা ফোন করেনি ৷ বাবা যেখানে কাজ করত, সেখানেও ফোন করেছি ৷ শেষ পর্যন্ত পাশের বাড়ির কাকিমা জানায়, বাড়ির ভিতর থেকে নাকি তালা দেওয়া আছে ৷ বাবা কোথায় গেল, কেউ কি দেখতে পেল না ? আমি ফোনের মালিককে বলি সে যেন বাড়ির চারপাশটা ঘুরে দেখে ৷ আমাকে জানায়, বাড়ির ভিতর থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে ৷ যে বাড়ির ভিতর থেকে মৃতদেহের দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, সেই বাড়িতে থাকা লোকজনের নাকে সেই গন্ধ যাবে না ? আমার বাবা আত্মহত্যা করতে পারে না ৷ সম্পত্তির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে ৷ এনিয়ে আমি নিশ্চিত ৷”
মোথাবাড়ি থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, স্ত্রী ও মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির ভাইকে আটক করা হয়েছে ৷ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে ৷ তবে এই ঘটনায় এখনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ অভিযোগ দায়ের হলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে৷ আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷