কলকাতা, 23 নভেম্বর: রাজভবনে বসল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মূর্তি ৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে 23 নভেম্বর অর্থাৎ শনিবার 2 বছর পূর্ণ করলেন সিভি আনন্দ বোস ৷ সেই উপলক্ষে এদিন সকালে রাজভবনে মূর্তির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন করেন স্বয়ং রাজ্যপাল ৷ শনিবার সকাল 10টা নাগাদ চারাগাছ রোপণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় । তারপরে চিত্র প্রদর্শনী এবং বসে আঁকো প্রতিযোগিতার সূচনাতে এই মূর্তির অনুষ্ঠানিক উন্মোচন করা হয়েছে ।
ভারতীয় জাদুঘরের শিল্পী পার্থ সাহা এক সপ্তাহ ধরে এই মূর্তি তৈরি করেছেন । মূলত, ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই মূর্তি ৷ রাজ্যপালকে সরাসরি না-দেখে শুধুমাত্র ছবি দেখে মূর্তিটি তৈরি করেন শিল্পী পার্থ সাহা । সেকারণে বিষয়টি নিয়ে বেশ উৎসাহী শিল্পী ৷
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে । কোনও ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন তাঁর মূর্তি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । রাজ্যপালের মূর্তি উন্মোচন নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, "এটা খুব লজ্জার বিষয় । বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে । উনি যে দলের থেকে প্রতিনিধি হয়ে রাজ্যপাল হয়েছেন বা যে দল তাঁকে রাজ্যপাল হিসেবে পাঠিয়েছে, সেই দলের অন্যতম নেতা প্রধানমন্ত্রী নিজের নামেই স্টেডিয়াম তৈরি করেছেন । স্বাভাবিকভাবেই, উনি সেই প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করছেন । এছাড়া আর কী বলতে পারি ! দারুণ লজ্জার বিষয় ৷"
অন্যদিকে, সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "এটি একটি অপগণ্ড । রাজভবন আলো করে অপগণ্ড বসে আছেন । এটা আমাদের রাজ্যের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক । মোদি-মমতা-রাজ্যপাল সব নিজেকে ছাড়া কাউকে চেনেন না । এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক আমাদের রাজ্যের পক্ষে ৷ এছাড়া আর কী বলতে পারি অপগণ্ডকে নিয়ে !"
এদিন, বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের পর তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল ৷ দু'বছরের অভিজ্ঞতাকে 'অম্ল মধুর' বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি ৷ বলেন, "বাংলার মানুষ ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ৷ কিন্তু রাজ্য রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ রাজনীতিকদের জন্যই এই অবস্থা ৷ যদিও বাংলার মানুষ বিষয়টিকে বেশিদিন মেনে নেবে না ৷"
রাজ্যপালের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে রাজভবনের তরফে ৷ শনিবার সকাল 10টায় প্রদর্শনী ও বসে আঁকো প্রতিযোগিতার পর বেলা 12টায় বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বেশকিছু জিনিসপত্র বিতরণ করা হবে । বিকেল 5টায় রাজভবনের ভিতরেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ৷ অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মমতা শঙ্কর, পূর্ণদাস বাউলের মতো বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থাকবেন ৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রায় 200 জনকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে রাজভবনের তরফে ৷ যদিও সেই তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেই বলে জানা গিয়েছে রাজভবন সূত্রে । শুধু তাই নয়, আমন্ত্রিতের তালিকায় কোনও রাজনৈতিক নেতারই নাম নেই বলে জানা গিয়েছে । সূত্রের দাবি, রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদাধিকারী ৷ তাই তিনি রাজনীতির বাইরে থাকতে চাইছেন । তবে সিনেমা জগতের কয়েকজন এদিন রাজভবনে উপস্থিতি থাকতে পারেন বলে বৃহস্পতিবার রাতেই বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল ৷