বারাসত, 28 জুলাই: খাতায় কলমে এখনও সরকারি রাস্তা ৷ পুরসভার ম্যাপেও তার উল্লেখ রয়েছে । অথচ, সেই সরকারি রাস্তা দখল করে দু'দিক ঘিরে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে । যার জেরে সেই রাস্তা দিয়ে এখন আর মানুষ যাতায়াত করতে পারেন না । ঘটনাটি বারাসত পৌরসভার 5 নম্বর ওয়ার্ডের ।
প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন । সেখানে কীভাবে একটি সরকারি রাস্তা দিনের পর দিন নিজেদের স্বার্থে দখল করে রেখেছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ ? পুরসভা কিংবা প্রশাসনই বা কেন হাত গুটিয়ে বসে আছে ? এ নিয়ে অবশ্য পুর কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল তুলে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । তাঁরা চাইছেন প্রশাসন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক ৷ সাধারণ মানুষের স্বার্থে ফিরিয়ে দেওয়া হোক রাস্তা ৷
এই বিষয়ে টিঙ্কু পোদ্দার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "একসময় সরকারি এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতাম আমরা । বাচ্চারাও খেলাধুলা করত মাঠে । কিন্তু এখন না যাতায়াত করা যায় রাস্তা দিয়ে ৷ আর না খেলাধুলা করতে পারে বাচ্চারা । সবসময়ই মাঠের গেট বন্ধ থাকে ৷ পুরসভার ম্যাপে এটি রাস্তা হিসেবেই দেখে এসেছি আমরা ৷ তারপরও ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই রাস্তা দখল করে রেখেছে ৷ এতে পাড়ার লোকজনের খুব সমস্যা হচ্ছে । পুরসভার উচিত এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা ।"
সবকিছু জেনেও পুর কর্তৃপক্ষ কেন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না তা নিয়েও আক্ষেপ রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে । একই সুর শোনা গিয়েছে অরুণ প্রসাদ নামে আরেক বাসিন্দার গলাতেও । তাঁর কথায়, "একপ্রকার জোর জবরদস্তি করেই রাস্তা দখল করে রেখেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ৷ যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ ৷ আমার কাছে রাস্তার যাবতীয় কাগজপত্রও রয়েছে ৷ কীভাবে দিনের পর দিন সরকারি রাস্তা দখল করে রাখতে পারে কোনও ক্লাব, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না ৷ উপর মহলের কারও মদত নিশ্চয় রয়েছে ৷ তা না হলে এটা কখনও হতে পারে না ।"
যদিও রাস্তা দখলের অভিযোগ মানতে চাননি ক্লাব কর্তৃপক্ষ । নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি খাঁড়া করেছে তারা । ক্লাবের সম্পাদক রবীন শূর বলেন, "আমরাই যে দখল করে রেখেছি সেটা আগে তো দেখাতে হবে । মাপজোক করে সঠিক পদ্ধতিতে যদি রাস্তা বের করতে পারে । আমাদের তাতে কোনও অসুবিধা নেই । ক্লাবের কী স্বার্থ রয়েছে, যে রাস্তা দখল করতে যাবে ? সাধারণের জন্যই তো ওখানে যাবতীয় ব্যবস্থা । এটা ঠিক যে রাস্তার প্রয়োজনীয়তা আছে । পুরসভা যদি এগিয়ে এসে আলোচনা করে । আমাদের মাঠের অংশ বুঝিয়ে দিতে পারে সেটা সবার পক্ষেই ভালো । শুধু পুরসভার ম্যাপ আর অভিযোগ করলেই হবে না । সেটা প্রমাণও করে দেখাতে হবে ।"
জনগণের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে দ্রুত বিষয়টির সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ ৷ এই বিষয়ে পুরসভার পুর পারিষদ (রাস্তা) অরুণ ভৌমিক বলেন, "ওই রাস্তা উদ্ধারের একবার চেষ্টা হয়েছিল । আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে সেখানে বেআইনি কংক্রিটের দেওয়ালও ভেঙে দিয়েছিলাম ৷ রাতারাতি আবারও সরকারি রাস্তার জমিতে বেআইনি নির্মাণ করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ । বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে ৷ দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে ৷ মানুষের স্বার্থে রাস্তা দখলমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর পুরসভা ।"
বারাসতের কলোনি মোড় সংলগ্ন 34 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই সুভাষ ময়দান । বিশাল আকৃতি জুড়ে এই মাঠটির দায়িত্বে রয়েছে সুভাষ ইনস্টিটিউট ক্লাব ৷ আগে মাঠটি খোলামেলা থাকলেও বর্তমানে তার চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে লোহার কাঠামো দিয়ে । মাঠের একদিকের শেষপ্রান্তে রয়েছে সরকারি এই রাস্তা । সেই রাস্তা কমবেশি 12 থেকে 14 ফুটের । পুরসভার যে ম্যাপ রয়েছে তাতেও রেকর্ড রয়েছে রাস্তার ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাঠের চারপাশ ঘিরে দেওয়ার আগে সাধারণ মানুষ এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতেন । সহজেই তাঁরা যেতে পারতেন কাছের নবপল্লী এলাকায় । কিন্তু এখন সেসব অতীত ! মানুষ আর সেই রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন না বলে অভিযোগ । এর নেপথ্যে রয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষের 'তুঘলকি' আচরণ ।
অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে কাউকে কিছু না জানিয়ে সরকারি রাস্তার দু'দিক দখল করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে । শুধু ঘিরে দেওয়াই নয় ! রাস্তার জমিতে কংক্রিটের দেওয়াল তুলে রীতিমতো খেলোয়াড়দের বসার 'টেন্ট'-ও করে দিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ, যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলেই অভিযোগ উঠেছে । এ দিকে, রাস্তা বরাবর দু'দিকে লোহার গেটও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে । যার মধ্যে একটি গেট তালা দিয়ে সবসময় আটকানো থাকে বলে অভিযোগ ।
ফলে কেউ চাইলেও সেই রাস্তা দিয়ে যাবেন তার 'জো' নেই ! শেষে উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই ঘুরপথে নবপল্লী সার্কুলার রোড হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকার লোকজনকে । কিন্তু সরকারি রাস্তা থাকা সত্ত্বেও কেন সাধারণ মানুষ সেই রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন না ? কেনই বা এলাকাবাসীকে ঘুরপথে অন্য দিক থেকে যাতায়াত করতে হবে ? সব জেনেও প্রশাসন কেন নিশ্চুপ ? তাহলে কী ক্লাব কর্তৃপক্ষের মাথায় প্রভাবশালী কারও হাত রয়েছে ? সেকারণেই কী সরকারি রাস্তা দখল করার সাহস পাচ্ছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ ? এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে ।