কলকাতা, 16 ডিসেম্বর: গল্ফগ্রিন খুন-কাণ্ডে তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য এল লালবাজারের হাতে ৷ দিঘায় গিয়ে শ্যালিকা খাতেজা বিবির সঙ্গে তোলা একান্ত ছবি প্রকাশ্যে আনতেই দু'জনের সম্পর্কে ফাটল ধরে ৷ আর তা থেকেই শ্যালিকাকে নৃশংসভাবে খুন করেন জামাইবাবু আতিকুর রহমান বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান ৷
লালাবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারের কোন সদস্যকে না জানিয়ে শ্যালিকাকে নিয়ে দিঘায় সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত আতিকুর রহমান । দিঘার সমুদ্র সৈকতের বিচে গিয়ে দু'জনে মিলে একান্ত বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ ছবি তুলেছিলেন । কিন্তু দু'জনের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল দিঘার বিচে তোলা সেইসব ছবি প্রকাশ্যে আসবে না কখনই । কেউ সোশাল মিডিয়ায় ছবিগুলো পোস্ট করবে না ৷ অথচ সেই চুক্তি ভঙ্গ করেন জামাইবাবু আতিকুর রহমান ৷ তিনি দিঘার সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে শ্যালিকার সঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত সেইসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে দেন ।
গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, এখান থেকেই খাতেজা বিবি ও আতিকুর রহমানের সম্পর্কে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় । শুরু হয়ে যায় পারিবারিক গোলযোগ। এরপর শ্যালিকা খাতেজা বিবি জামাইবাবু আতিকুর রহমানকে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দেন । এমনকি আতিকুরের নাম্বারও ব্লক করে দেন ৷ এরপরেই গত 12 ডিসেম্বর আতিকুর কোনভাবে তাঁর শ্যালিকার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে বাড়ি যেতে বাধা দেন।
লালবাজারের আধিকারিকদের অনুমান, জামাইবাবু আতিকুরের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন খাতেজা বিবি ৷ দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার ছবি প্রকাশে আসার পরই বিষয়টি বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায় ৷ এরপরেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলোন খাতেজা । আর সেই বিষয়টি মানতে পারেননি আতিকুর ৷ আক্রোশ মেটানোর জন্যই প্রথমে শ্যালিকাকে খুন করেন । পরে তিনটি খণ্ড করে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর দেহাংশ ফেলে দেন । শ্যালিকার কাটা মুণ্ড ফেলেন গল্ফগ্রিনে । আর শরীরের নিম্নাংশ বিভক্ত করে রিজেন্ট কলোনিতে ফেলে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে ৷
আতিকুর রহমানকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাঁর ফেসবুক পোস্ট ঘেটে দেখেন তদন্তকারীরা ৷ সেখান থেকেই শ্যালিকাকে নিয়ে দিঘায় ভ্রমণ সম্পর্কিত সকল তথ্য হাতে আসে লালাবাজারের গোয়েন্দাদের । তবে এই খুনের ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ।
লালাবাজার সূত্রে খবর, সোমবার ফের আতিকুর রহমানকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবেন লালবাজারে গোয়েন্দারা । এই ঘটনার তদন্ত নিয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমরা সমস্ত রকমের তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি । অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে ফেলেছি । এখন শুধু জানার যে তার সঙ্গে অন্য কোন ব্যক্তি এই ঘটনায় যুক্ত ছিল কি না ।"
গত সপ্তাহে গল্ফগ্রিনে একটি আবর্জনা স্তূপ থেকে উদ্ধার হয় মহিলার কাটা মুণ্ড । সেই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় । পরে এই ঘটনার তদন্তকার গ্রহণ করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । তদন্ত নেমে পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে তদন্তকারীরা ওই মহিলার জামাইবাবুকে গ্রেফতার করে । তাঁকে গ্রেফতারের পরেই একের পর বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসতে থাকে ।