অশোকনগর, 11 ফেব্রুয়ারি: বিয়ের চাপ দিয়ে লাগাতার নাবালিকাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রতিবশী যুবকের বিরুদ্ধে ৷ মানসিক চাপে বাংলা পরীক্ষা দিয়ে এসেই চরম সিদ্ধান্ত নিল 16 বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ৷ এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবককে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বিকালে উত্তর 24 পরগনার বারাসত পুলিশ জেলার অশোকনগর থানা এলাকায় ৷
এই বিষয়ে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া ইটিভি ভারতকে বলেন, "এই ঘটনায় আমরা একজনকে গ্রেফতার করেছি । তাকে আদালতে পেশ করব । এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত আছে কি না, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।"
পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে উত্যক্ত করছিল প্রতিবেশী ওই যুবক । প্রথম দিনের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসার পর ফোন করে নাবালিকাকে সে হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ । সেই মানসিক চাপে নিজের ঘরে ঢুকে চরম সিদ্ধান্ত নেয় ওই কিশোরী । তড়িঘড়ি তাকে উদ্ধার করে বারাসত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মায়ের মৃত্যুর পর সে মামার বাড়িতে থাকা শুরু করে । সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয় । পরিবারের অভিযোগ, এক প্রতিবাশী যুবক দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করে আসছে । তাকে বিয়ে করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছিল । যুবকের উৎপাতে কিশোরীর বাড়ি থেকে বেরনো দায় হয়ে পড়েছিল । বিষয়টি জানতে পেরে যুবকের বাড়িতে জানিয়েছিল কিশোরীর পরিবার । কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি । শুধরায়নি যুবক । উলটে হুমকি বেড়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ ।
মৃতের মামা বলেন, "ভাগ্নি সকালে হাসিমুখে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল । পরীক্ষা ভালো হওয়ায় হাসি মুখে বাড়িও ফিরেছিল । কিন্তু বাড়ি ফেরার কিছু সময়ের মধ্যে তার ফোনে ফোন করে ওই যুুবক । দু'জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় । আমরা শুনতে পাই, ভাগ্নিকে ফোনে ফোনে হুমকি দিচ্ছিল যুবক ৷ ভাগ্নি তাকে বলছে, তার পরীক্ষা শুরু হয়েছে এই সময় তাকে বিরক্ত না করতে । এরপরে হঠাৎই দৌড়ে ভাগ্নি তার নিজের ঘরে চলে যায় । কিছু সময় পর পরিবারের সদস্যরা অনেক ডেকেও তার সাড়া পায়নি ৷ পরে উপরের ঘরে গিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় ।"
সোমবার রাতে যুবকের নামে অশোকনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের মামা । তাঁর কথায়, "পাড়ার ছেলেটি বারেবারে ভাগ্নিকে বিরক্ত করছিল । বিয়ে করার জন্য চাপও দিত । আমরা বেশ কয়েকবার নিষেধ করেছিলাম যুবককে । কিন্তু তাতে কান দেয়নি সে । ওর অত্যাচারেই চরম সিদ্ধান্ত নিল ভাগ্নি । অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি ।"
মৃতের দিদি বলেন, "ফোনে সবসময় ছেলেটা বিরক্ত করত বোনকে ৷ ওকে রাস্তাঘাটেও উত্যক্ত করত ৷ পরীক্ষা দিয়ে আসার পর বোনের জন্য দিদা ভাত বেড়ে বসেছিল ৷ সে সময় ফোন করে ছেলেটা বোনকে হুমকি দেয় ৷ তারপর বোন ঘরে গিয়ে চরম সিদ্ধান্ত নেয় ৷ বোন এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায়নি ৷ ও পড়াশোনায় ভালো ছিল ৷ সবসময় বলত আমি চাকরি করব ৷ এখন বিয়ের কথা বলবে না ৷ তবে ভয়ের কারণ ছিল ওই ছেলেটা ৷ খালি ওকে বিরক্ত করত ৷ বিয়ের জন্য চাপ দিত ৷ তার জন্যই বোন এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেল ৷ ছেলেটার যেন কঠোর শাস্তি হয় ৷"